Joy Jugantor | online newspaper

কপ২৬ আমাদের কি ডাইনোসরদের মতো বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে?

আতিক মল্লিক

প্রকাশিত: ১২:৩৮, ২৮ নভেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৩:০৫, ২৮ নভেম্বর ২০২১

কপ২৬ আমাদের কি ডাইনোসরদের মতো বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে?

প্রকৃতি কি টিকে থাকবে নাকি নিঃশেষ হয়ে যাবে

পৃথিবী তথা প্রকৃতি থেকে আমরা প্রতিনিয়ত শুধু নিয়েই যাচ্ছি অথচ তার বিনিময়ে পৃথিবীকে আমরা কে কতটুকু দিচ্ছি? সে অর্থে কিছুই ফিরিয়ে দিতে পারছি না, আজ আমাদের এমন স্বার্থপর আচরণের কারণে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।

আমাদের পুরো বিশ্ব এখনও করোনা মহামারির ধাক্কায় জর্জরিত বিশ্ব। এর মধ্যেই আবার প্রকট আকার ধারণ করেছে জলবায়ু সংকট। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব–অর্থনীতি প্রতিনিয়ত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। একইভাবে এটি জনস্বাস্থ্যের উপরও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।

এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ডাইনোসরদের মতো বিলুপ্ত হয়ে যেতে হবে। আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে, বদলে যাবার এখনই সময়। যেমন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন আমাদের প্রতিবেশী দেশের তুলসী গৌড়া, যিনি নিজ উদ্যোগে একাই লক্ষ লক্ষ গাছ লাগিয়ে পৃথিবীকে সবুজ করে তুলছেন। এমন সচেতন ও লড়াকু তুলসী গৌড়ার হাতেই পৃথিবীটা থাকুক। পৃথিবীটা হোক তার মতোই প্রকৃতি প্রেমীর।

যাইহোক আমাদেরও কিছু করার আছে, ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্র বা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রতিটা যন্ত্রের হাতেই আছে পৃথিবীটা বাঁচানোর সুযোগ। এমনই একটি উদ্যোগ হলো "কপ" এর আয়োজন।  COP (Conference of Parties 26) এর অর্থ হলো- দলগুলোর সম্মেলন অথবা পার্টিস মিটিং, সিওপি হল 197 টি দেশের জন্য একটি বার্ষিক উচ্চ পর্যায়ের ফোরাম যা জলবায়ু পরিবর্তন এবং সারা বিশ্বের দেশগুলি কীভাবে এটি মোকাবেলার পরিকল্পনা করে তা নিয়ে আলোচনা করে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের অংশ - বিশ্বের প্রতিটি দেশ এবং অঞ্চল দ্বারা স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যার লক্ষ্য জলবায়ুতে মানুষের কার্যকলাপের প্রভাব সীমিত করা। কপের প্রথম সম্মেলন অর্থাৎ কপ১ হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। এবার হচ্ছে ২৬তম সম্মেলন।

কপ২৬

এবারে আসি কপ২৬ এর বিষয়ে, জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক শীর্ষ এই সম্মেলনটি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় অতিসম্প্রতি শেষ হয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহের আলোচনার পর অসন্তোষ থাকলেও, শেষ মুহূর্তে মতৈক্য হয়েছে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর। ১৩ নভেম্বরের রাতে এক চুক্তিতে প্রায় ২০০টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। এর ফলস্বরুপ জিইয়ে রেখেছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দ্রুত কমিয়ে আনার প্রত্যাশা।
কপ২৬ শুরু প্রক্কালে জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-বিষয়ক এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি প্যাট্রিসিয়া এসপিনোসা সতর্ক করে বলেছিলেন, এই সম্মেলন ব্যর্থ হলে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ভেঙে পড়তে পারে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা। দেশগুলো গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে সফল না হলে ক্রমবর্ধমান অভিবাসন ও খাদ্যসংকট বিশ্বজুড়ে সংঘাত ও বিশৃঙ্খলার কারণ হতে পারে।

প্রথমেই দুটো মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে কথা বলা যাকঃ

১। ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো অর্জন,

২। আরেকটি হলো, বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখা।

এখন আর ‘যদি-কিন্তু-তবে’ বলে অবহেলার জায়গা নেই। বড় ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশসহ আরও বেশ কিছু দেশ। আসলে, ঝুঁকিতে আছে পুরো পৃথিবীই।

নেট জিরোটা কি?

প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি কারখানা, অর্থাৎ পুরো দেশ যে পরিমাণ শক্তি খরচ করবে, এর সবটা আসতে হবে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে। সেক্ষেত্রে বন্ধ হয়ে যাবে গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদন ও নিঃসরণ। এই লক্ষ্যটি বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির মধ্যে আটকে রাখার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সমস্যা হলো, চীন ও ভারত যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে একটি বিষয় নিশ্চিত। অন্যান্য দেশ আরও বেশি পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ না কমালে ২০৫০ সালেও নেট জিরো লক্ষ্য অর্জিত হবে না। বিশ্বের শীর্ষ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ চীনের লক্ষ্য ২০৬০ সালে নেট জিরোতে পৌঁছা। বাংলাদেশের মতো শীর্ষ বিপদাপন্ন দেশগুলোর জন্য এটি খুবই খারাপ খবর। ভারত ঘোষণা দিয়েছে, তাদের নেট জিরোতে পৌঁছানোর লক্ষ্য ২০৭০ সালে। এটিও খারাপ খবর বাংলাদেশের জন্য।

 বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি  রাখতে কি করছি?

আরেকটি বড় উদ্যোগ হলো, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপাদনে শীর্ষে থাকা বেশ কিছু দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানীতে তারা আর অর্থায়ন করবে না। তবে জ্বালানী খাতে শীর্ষ বিনিয়গকারী দেশ চীন ও জাপান এ বিষয়ে একমত হয়নি। এটিও একটি খারাপ খবর। তবে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখার লক্ষ্যে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের আর্থিক সম্পদের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণকারী চারশো কোম্পানি। পাশাপাশি, ক্রীড়াঙ্গনে ২০৪০ সালের মধ্যে নেট জিরো অর্জন এবং সেজন্য ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, এসবই শুধু কথার কথা। গ্রেটা থুনবার্গ বেশ ক্ষুদ্ধ এ নিয়ে। তাঁর মতে, এ সবই বিশ্বনেতাদের ভান। তাঁরা মোটেও আন্তরিক নন।

গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ নিয়ে ভাবনা কেন? 
আমরা যদি স্কুল-কলেজের শিক্ষাজীবনের কথা স্মরণ করি তবে খেয়াল করে দেখবো-তখন গ্রীনহাউজ প্রভাব সম্পর্ক কিছুটা ধারনা পেয়েছি। গ্রীন হাউজ গ্যাস বলতে আমরা সাধারণত কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন এবং জলীয়বাষ্পকে বুঝি। এই গ্যাসগুলো সাধারনত সূর্যের তাপ বায়ুমন্ডলে আটকে দেয়। ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পৃথিবী। এই গ্যাসগুলোর পরিমাণ বায়ুমন্ডলে ক্রমাগত বাড়তে থাকায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রাও। তাপমাত্রা বাড়ার এই প্রবণতার নাম বৈশ্বিক উষ্ণতা। কার্বন নিঃসরণও একধরনের গ্রীণ হাউজ গ্যাসেরই নিঃসরণ বলা চলে। এই নিঃসরণ তখনই হয়, যখন মানুষের নানা কর্মকান্ডের ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বায়ুমন্ডলে মিশছে । এই গ্যাস নিয়ে ভাবনা বেশি, কারণ বায়ুমণ্ডলে এদের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি। প্রতিনিয়তই এই পরিমাণ বাড়ছে ৷ মানুষের দৈনন্দিন কাজের ফলে এই কার্বন নিঃসরণের মাত্রাও তাই বাড়ছে আশঙ্কাজনকহারে। যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) কার্বন নিঃসরণ তথা গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের ছয়টি প্রধান উৎস ভাগ করে দেখিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, যানবাহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্পকারখানা, আর্থিক ও ব্যক্তিগত আবাসন, কৃষি এবং জমির যাচ্ছেতাই ব্যবহার থেকে সবচেয়ে বেশি নিঃসরণের ঘটনা ঘটছে।

গ্লাসগোর জলবায়ু চুক্তির (কপ২৬ ) সারমর্ম

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ২৬ অনুষ্ঠিত হলো স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয়। দুই সপ্তাহের এই আলোচনার পর স্থানীয় সময় গত ১৩ নভেম্বর রাতে এক চুক্তিতে প্রায় ২০০টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে মিশছে মতৈক্যে পৌঁছেছে। যদিও অংশগ্রহণকারী দেশগুলো আলোচনার প্রাথমিক পর্বে বেশ অসন্তোষ ছিল। এই মতৈক্য টিকিয়ে রেখেছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দ্রুত কমিয়ে আনার প্রত্যাশার অংশটুকু।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে কথা: গ্লাসগো চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেশগুলোকে আগামী বছরের মধ্যে শক্তিশালী পরিকল্পনা প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণের সুনির্দিষ্ট মাত্রা ঠিক করে দিতে ব্যর্থ হয়েছে গ্লাসগো সম্মেলন।

কার্বন নিঃসরণের দায়: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গরিব ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। তবে বেশি বেশি কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে এর পেছনে দ্বায়ী ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলো। চূড়ান্ত চুক্তিতে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ ও কোম্পানিগুলোকে দায় মেটাতে অর্থায়ন করতে বলা হয়েছে। এসব অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোয় বনের ধ্বংস ঠেকানো, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে গৃহীত নানা উদ্যোগের বাস্তবায়নে ব্যয় করা হবে।

ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিরোধ: ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে জলবায়ু তহবিলে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি। ফলে অনেক উন্নয়নশীল ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অভিযোজন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পিছিয়ে রয়েছে। গ্লাসগোর চূড়ান্ত চুক্তিতে ২০২৫ সালের মধ্যে ধনী দেশগুলোকে জলবায়ু তহবিলে বরাদ্দের পরিমাণ অন্তত দ্বিগুণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কয়লার ব্যবহার নিয়ে অসন্তোষ: এবারের জলবায়ু সম্মেলনে প্রথমবারের মতো দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে কয়লার ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধের বিষয়ে জোর দিতে সফল হননি আলোচকেরা। বরং শেষ মুহূর্তে এই বিষয়ে ছাড় দিয়ে কয়লার ব্যবহার কমানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে চূড়ান্ত চুক্তিতে কয়লার ব্যবহার কমানো বা ‘ফেজ ডাউন’ করার ভাষাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আগের খসড়ায় তা বন্ধ করা বা ‘ফেজ আউট’ করার কথা ছিল। ভারতের পক্ষ থেকে এ পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। এমন পরিবর্তনে অসন্তোষ জানিয়েছে সুইজারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ ।

আরও কিছ চুক্তি: গ্লাসগোয় মূল সমঝোতার বাইরে আরও কয়েকটি চুক্তি সবার নজর কেড়েছে। এবারের সম্মেলনে জাতিসংঘ ও ইউনিয়নের নেতৃত্বে প্রায় ১০০টি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন গ্যাসের নির্গমন গত বছরের মাত্রার তুলনায় ৩০ শতাংশ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দুটি দেশ—যুক্তরাষ্ট্র ও চীন জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে একমত হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা গ্যাসোলিনচালিত গাড়ি উৎপাদন বন্ধ, আকাশপথে ভ্রমণে কার্বন নিঃসরণ কমানো, বন রক্ষার মতো টেকসই উদ্যোগে অর্থ লগ্নি না করতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।

প্রকৃতিকে কি বাঁচাতে পারবো?
এসব মন্দের মাঝে ভালো খবর হলো, বন উজাড়করণ বন্ধ করার লক্ষ্যে সমঝোতায় পৌঁছেছেন ১১৪টি দেশের নেতারা। আমাজনের ক্ষতির জন্য বহুল সমালোচিত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারোও এতে স্বাক্ষর করেছেন। কপ২৬-এ বিশ্বনেতাদের মাঝে এটিই ছিল প্রথম সমঝোতা ।
বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, কৃষি খাত থেকে প্রচুর মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। কার্বন নিঃসরণের চেয়ে মিথেন গ্যাসের বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ২৪ গুণ বেশি। বিশ্বজুড়ে ধ্বংস হওয়া বন, জৈব বর্জ্য, আবর্জনা থেকে শুরু করে পানিতে ডুবিয়ে রাখা ধান বা অন্য কোনো ফসল থেকে মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। ধানগাছের শিকড় পানিতে ডুবিয়ে রেখে চাষ করা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই করা হয়। এতে বিপুল পরিমাণ মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। কিন্তু বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এভাবে না ভিজিয়ে ধান চাষ করা সম্ভব। প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ধানগাছের শিকড়ের চারার মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণে আর্দ্রতা ধরে রাখলেও চলবে। বিশ্ববাসী কীভাবে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবং সব দেশ এসব প্রযুক্তি যাতে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে পারে, তা নিয়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে।

এছাড়া অ-টেকসই আচরণ, যেমন- ঘন ঘন বিমান চড়া এবং প্রাণীজ মাংসের অত্যধিক ব্যবহারের মতো বিষয়গুলোয় উচ্চ ভ্যাট বসালে মানুষ কম কার্বন নিঃসরণে ঝুঁকবে। এতে প্রকৃতির প্রতি নিজেদের আচরণ পরিবর্তনের গতিও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে যদি দূষণকারী আচরণের শাস্তি এবং বিনিয়োগের মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র থাকে সেটি অনেকাংশে উপকার বয়ে আনবে। অর্থাৎ নিঃসরণকারী হিসেবে আপনার উপর যে জরিমানা বর্তাবে সেটি ব্যয় করতে হবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়।  জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিতে যত দেরি হবে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। জলবায়ু পরিবর্তনের থাবা থেকে যে কেউই নিরাপদ নন, বিষয়টি এখন সবাইকে বিবেচনা করতে হবে। 

লেখক: পরিবেশবিদ