হানিফ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির দুই মামলা, সন্তানদের নোটিশ
৩২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও প্রায় ১১০ কোটি টাকার সন্দেহভাজন লেনদেনের অভিযোগে কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুল আলম হানিফ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে তার ছেলে ফাহিম আফসার আলম ও ফারহান সাদিক আলম এবং মেয়ে তানিশার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় সম্পদের নোটিশ জারি করা হয়েছে।
আজ সোমবার (১৪ জুলাই) মামলা দুটি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।এজাহার সূত্রে জানা যায়, সাবেক এমপি মাহবুবুল আলম হানিফ পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশে জ্ঞাত আয়ের উৎসবিহীন ২৭ কোটি ৩৯ লাখ ২৯ হাজার টাকার সম্পদের মালিক হন এবং তা ভোগদখলে রাখেন। এছাড়া, তার নামে ১৮টি বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে মোট ৮৬ কোটি ৬৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯৭২ টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে, যা সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে দুদক।অন্যদিকে তার স্ত্রী ফৌজিয়া আলমের বিরুদ্ধেও জ্ঞাতআয় বহির্ভূত ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯০ টাকার সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া তার ১৬টি ব্যাংক হিসাবে ৩৩ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার ৬০৯ টাকার সন্দেহভাজন লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। যে কারণে তার বিরুদ্ধে অপর মামলাটি করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। তাদের সন্তানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা অনুযায়ী সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করা হয়েছে।এদিকে ১৬ মার্চ দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও স্ত্রী ফৌজিয়া আলম, ছেলে ফাহিম আফসার আলম ও ফারহান সাদিক আলম এবং মেয়ে তানিশা আলমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।রোববার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘স্ত্রী, তিন সন্তানসহ মাহবুব উল আলম হানিফের বিদেশ যাত্রা রহিতকরণের আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেছেন।’
দুদকের পক্ষে উপপরিচালক সাইদুজ্জামান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছিলেন।আবেদনে বলা হয়, মাহবুব উল আলম হানিফের বিরুদ্ধে পদ্মা ও গড়াই নদীর বালুমহল থেকে চাঁদাবাজি, টেন্ডার, বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, হাটবাজার ইজারা বাণিজ্য, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হতে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এসব অর্থ বিদেশে পাচার ও স্ত্রীর নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
গোপন ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মাহবুব উল আলম হানিফ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে (কুষ্টিয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, মোংলা, কক্সবাজার, টেকনাফ এলাকা ছাড়াও অন্যান্য এলাকায়) এবং দেশের বাইরে- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অন্যান্য দেশে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর করার চেষ্টা করছেন মর্মে অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্য ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।