নিলাম ছাড়াই রেললাইনের গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় রেললাইন পরিষ্কার করার নামে নিলাম ছাড়াই বেশকিছু ফলদ, বনজ গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। গাছ কাটার বিষয়ে কোনো নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি বলেও স্বীকার করেছেন তারা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আঁকাবাঁকা রাস্তায় গাছ থেকে ঝোপঝাড় হয়ে ট্রেন চলাচল বাধাগ্রস্ত ও দুর্ঘটনা রোধে অন্তত দশদিন আগে গাছগুলো কাটা হয়। ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর রেলপথের পাবনার ভাঙ্গুড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে দিলপাশার স্টেশন পর্যন্ত দূরত্ব ৭ কিলোমিটারের লাইন দেখাশোনার দায়িত্ব কর্মচারী ও লাইন মিস্ত্রি আশরাফ আলীর।
এই রেলপথের দু’ধারে রয়েছে প্রায় ৩০ বছর বয়সী বিভিন্ন ধরনের কাঁঠাল, আমসহ নানা প্রজাতির কাঠের গাছ। অথচ কোনো নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই কেটে ফেলা হয়েছে গাছগুলো। সম্প্রতি বড়ালব্রিজ স্টেশনের পূর্ব থেকে শরৎনগর স্টেশনের মধ্যে প্রায় ৩০টি গাছ কেটে গাছের গুঁড়িগুলো স্থানীয় ‘স’ মিলে রাখা হয়েছে।
অনিয়মতান্ত্রিক গাছ কাটার অভিযোগের তীর পাকশী পশ্চিমাঞ্চল বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশল শাখার ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আহসানুর রহমান ও কর্মচারী রেলওয়ের বড়ালব্রিজ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইন মিস্ত্রি আশরাফ আলীসহ কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। এই গাছ কাটার সঙ্গে স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী আফসার আলীর যোগসাজশ রয়েছে বলেও দাবি স্থানীয়দের।
রেলওয়ের কর্মচারী আশরাফ আলী জানান, এই এলাকায় ট্রেন চলাচলে দীর্ঘদিন ধরেই সিগন্যালে সমস্যা হচ্ছিল। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সরেজমিনে এসে পরিদর্শন করে গেছেন। তাদের মৌখিক অনুমতি পেয়েই আমি এই গাছগুলো কেটেছি।
নিলাম ও কাটার যথাযথ প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি স্যারদের নির্দেশনা মেনেই গাছ কেটেছি। ন্যায়-অন্যায় বা বৈধ অবৈধ এগুলো তারাই ভালো জানেন। ১১টি কাঁঠাল, ৩টি আম গাছ ও কিছু কড়ই গাছসহ বেশকিছু গাছ কাটার কথা স্বীকার করেছেন কর্মচারী আশরাফ আলী।
কাঠ ব্যবসায়ী আফসার আলী বলেন, রেলওয়ের পিডাব্লিউ স্যার দু’জন এসে আমাকে আশরাফের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে যান। তারপর লাইন পরিষ্কার করার শর্তে আর শ্রমিক খরচ বাবদ গাছগুলো কেটে নিতে বলেন। তা না হলে তো আমার খরচ উঠে না। গাছ বিক্রি করা হয় নাই। ছয়জন শ্রমিক দিয়ে চারদিন কাজ করতে ইতোমধ্যে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে।
ভাঙ্গড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আব্দুল মালেক বলেন, টেন্ডার ছাড়া তিনি এত গাছ একবারে কাটতে পারেন না। প্রয়োজন হলে গাছের ডাল কাটতে পারেন, কিন্তু এত গাছ একবারে কীভাবে তিনি কাটলেন তা বোধগম্য নয়। এমন কোনো নির্দেশনার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে পাকশী পশ্চিমাঞ্চল বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশল শাখার ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আহসানুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওই রুটে সিগন্যালে সমস্যা হচ্ছিল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় গাছগুলো কাটা হয়েছে।
মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনায় নিলাম ছাড়া গাছ কাটার কোনো নিয়ম আছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে নিয়ম বা নিলামের কিছু নেই। আমাদের লাইনের সিগন্যালের সমস্যার কারণে গাছ কাটার দরকার ছিল, কাটা হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, টেন্ডার ছাড়া সরকারি গাছ কাটার কোনো নিয়ম নেই। বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় পাকশী পশ্চিমাঞ্চল বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক শাহ সূফী নুর মোহাম্মদের। তিনি বলেন, রেললাইনের সিগন্যালের সমস্যার জন্য গাছের পাতা বা ডাল কেটে লাইন পরিষ্কার করা যেতে পারে। কিন্তু বড় গাছ কাটা যাবে না। ছবিতে যেমন দেখলাম, তাতে মনে হলো বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এটা সমীচীন হয়নি বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছি। যারা গাছ কাটার সঙ্গে যুক্ত তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।