সংগৃহীত ছবি
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে ডাকাতি ও ধর্ষণের পর বাসটি উল্টে পড়ার কারণ ছিলো টাকার ভাগাভাগি। এসময় ডাকাত দলের সবাই জানালা দিয়ে দ্রুত বের হয়ে যায়।
লুটের টাকা এবং মুঠোফোনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র বাসের ভেতরেই ভাগাভাগি করছিলো ডাকাত দল। এসময় এক যাত্রীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ২০ হাজার টাকা নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এসময় ডাকাতরা একজন আরেকজনের দেহ তল্লাশি শুরু করেন। চালকের আসনে থাকা ডাকাত দলের সদস্য কথাকাটাকাটি দেখার জন্য পেছনে তাকান। এসময় তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে বাসটি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়ায় রাস্তার পাশে বালুর স্তুপের মধ্যে কাত হয়ে পড়ে যায়।
পুলিশের রিমান্ডে থাকা গ্রেপ্তারকৃত রাজা মিয়া এবং শুক্রবার গ্রেপ্তার হওয়া আব্দুল আওয়াল ও নুরনবী জিজ্ঞাসাবাদকালে পুলিশকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এছাড়া মামলার বাদি ওই বাসের যাত্রী হেকমত আলীর স্ত্রী জেসমিন আরা বলেন, এক সন্তানকে বুকে জড়িয়ে মাথা নিচু করে সৃষ্টিকর্তার নাম নিচ্ছিলাম। সামনে আরেক সিটে আমার মা বসেছিলেন আরেক সন্তানকে নিয়ে। তার হাত, চোখ, মুখ বাঁধা ছিল। ডাকাত দল সব কাজ শেষ করার পর একে অপরকে ডাকাডাকি করেন। ডাকাত দলের সরদারকে তারা ‘কাকা’ বলে সম্বোধন করছিলেন। মাঝে মধ্যে নুরু, সাব্বির, রকি নামেও ডাক দিচ্ছিল। রাত ৩ টার দিকে ডাকাতরা টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকার নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি শুরু করে। বাসের ভেতরে ভাগাভাগি নিয়েও তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সড়কের এক পাশে বাসটি কাত হয়ে যায়। পরে ডাকাতরা দ্রুত নেমে পালিয়ে যায়। বুধবার রাত ৯টার দিকে বিআরটিসির গাড়িতে পুলিশ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে তাদের কুষ্টিয়া পাঠিয়ে দেয়।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, বাসটি ঢাকার দিকে মির্জাপুরের গোড়াই পর্যন্ত গিয়ে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে ইউটার্ন নিয়ে আবার টাঙ্গাইলের দিকে যাত্রা শুরু করে। এক পর্যায়ে লুন্ঠিত টাকা ও মুঠোফোনের সংখ্যা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এক সদস্য বিশ হাজার টাকা একজন যাত্রীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন এবং ওই টাকা লুকিয়ে ফেলেন বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন ডাকাত। পরে একজন আরেকজনের দেহ তল্লাশি শুরু করেন। এসময় চালকের আসনে গ্রেপ্তারকৃৃত রাজা মিয়া ছিলেন না, ডাকাত দলের আরেক সদস্য বাস চালাচ্ছিলেন। তিনি পেছন দিকে তাকিয়ে ভালো করে তল্লাশি করার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। এসময় রাস্তার পাশে কাত হয়ে যায় বাসটি।
পরে ডাকাত দলের সবাই জানালা দিয়ে দ্রুত বের হয়ে যায়। তারা রক্তিপাড়া থেকে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ সড়ক ধরে মধুপুরের দিকে দৌড়াতে থাকেন। প্রায় এক কিলোমিটার যাওয়ার পর একটি বাস আসলে সেটিকে সংকেত দিয়ে থামায়। সেখান থেকে প্র্রথমে তিনজন ওই বাসে উঠেন। কিছু দূর যাওয়ার পর এগিয়ে থাকা অন্য সদস্যরা বাসটিতে উঠেন। তারা নিজেদের পরিবহন শ্রমিক বলে পরিচয় দেন। দুর্ঘটনা কবলিত বাসটির শ্রমিক বলেও তারা জানান। ওই বাসে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে নেমে পড়েন ডাকাতরা। পরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ডাকাত দলের এক সদস্যের আত্মীয় বাড়ি গিয়ে উঠেন তারা। বেলা উঠার পর এক এক করে তারা ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যান।
ডাকাতিকালে তারা পাঁচটি স্মার্ট মুঠোফোন সেট, ১২/১৩টি বাটন ফোন এবং তিন হাজার ৪০০ টাকা লুট করেন। যে বিশ হাজার টাকা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, সে টাকা শেষ পর্যন্ত আর উদ্ধার করতে পারেননি তারা।