Joy Jugantor | online newspaper

চট্টগ্রামে বিচরণ ক্ষেত্র হারিয়ে হাতিরা বিপন্ন

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ১৬ আগস্ট ২০২৫

চট্টগ্রামে বিচরণ ক্ষেত্র হারিয়ে হাতিরা বিপন্ন

চট্টগ্রামে বিচরণ ক্ষেত্র হারিয়ে হাতিরা বিপন্ন

বৃহত্তর চট্টগ্রামে হাতিরা এখন বিপন্ন। মানুষের পেতে রাখা বৈদ্যুতিক ফাঁদ, বিষ, সীমান্তে ল্যান্ডমাইন, পোচার বা শিকারিদের চোরাগোপ্তা হামলায় গভীর অরণ্যের ভেতর বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে বিশালাকৃতির এই নিরীহ প্রাণীটি। গবেষকরা বলছেন, বনাঞ্চল ধ্বংস ও জবরদখলসহ নানা কারণে সংকুচিত হয়ে পড়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা বৃহত্তর চট্টগ্রামে হাতিদের ১২টি অরণ্যপথ বা এলিফ্যান্ট পাস।

এছাড়া নানা কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া হাতিদের চিকিত্সায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের নেই নিজস্ব কোনো চিকিত্সক টিম। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গভীর অরণ্যে শিকারি মানুষ বা পোচারদের আক্রমণ, কৃষকদের বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদ, পাহাড়ি খাদে দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে গত ১০ বছরে প্রায় ১৭টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত ৯ এপ্রিল শিকারিরা বাঁশখালির জলদি অভয়ারণ্যে একটি হাতি হত্যা করে সেটির দাঁত এবং নখ কেটে নিয়ে পালিয়ে যায়।

অবশ্য বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, শিকারি দুর্বৃত্তদের এক জনকে তারা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। গত ১১ আগস্ট পার্বত্যজেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে খাদ্যের সন্ধানে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় একটি হাতি ল্যান্ডমাইনের  আঘাতে এক পা হারায়। জানা যায় হাতিটির চিকিত্সার জন্য বাংলাদেশি চিকিত্সকরা ঘটনাস্থলে গেছেন। তবে এর উলটো চিত্রও আছে। লোকালয়ে ক্ষুধার্ত, ক্ষুব্ধ হাতিদের আক্রমণে অনেকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের নানা স্থানে গত ৯/১০ বছরে হাতির পালের আক্রমণে নারী-শিশুসহ ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

পর্যবেক্ষকদের ধারণা, বৃহত্তর চট্টগ্রামের অরণ্যাঞ্চলে ৪০ থেকে ৫০টি হাতি বিচরণ করে থাকে। হাতিদের এক একটি পালে ৮ থেকে ১০টি শিশুসহ নানা বয়সি হাতি থাকে। যেসব এলাকায় প্রায়শ হাতিদের বিচরণ করতে দেখা যায়—সেগুলো হলো পার্বত্য জেলাগুলোর বিভিন্ন রেঞ্জ, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন রেঞ্জ এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা।

জানা গেছে, প্রায় সাড়ে তিন মাস কক্সবাজারের চুনতি রেঞ্জে অবস্থানের পর একপাল হাতি গত ২০ জুলাই চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার দেয়া পাহাড় রেঞ্জে এসে অবস্থান নেয়। স্থানীয় জনগণ জানায় সারা দিন হাতির পাল দেয়াং পাহাড়ের লেকের পানিতে অবস্থান করে, কিন্তু রাত হলেই লোকালয়ে নেমে এসে তাণ্ডব চালায়। হাতিদের বিরুদ্ধে থানায় সাতটি জিডি দায়েরের কথাও শোনা যায়। হাতিরা খাবারের খোঁজেই লোকালয়ে আসছে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা  নূরজাহান বেগম ইত্তেফাককে বলেন, ‘হাতিরা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসছে—এই কথাটা আসলে ভুল।

হাতিরা যেসব স্থানে আসে সেগুলো শত শত বছর আগে থেকেই হাতিদের বিচরণস্থল। হাতিরা তাদের নিজেদের বিচরণস্থলে এসে যখন দেখে তা জবরদখল হয়ে গেছে তখন তারা উদভ্রান্ত হয়ে ছুটোছুটি শুরু করে। কখনো মানুষ হাতিদের চ্যালেঞ্জ করে, তখন হাতিরা ক্ষিপ্ত হয়ে আক্রমণ করে। কিন্তু স্বভাবগতভাবে হাতিরা শান্ত ও নিরীহ প্রাণী। ঘাস ও গুল্মভোজী হাতিদের জন্য অরণ্যে খাবারের অভাব নেই। তারা প্রতিদিন দেড় শ কিলোগ্রাম খাবার গ্রহণ করে। সেই খাবার হজম করার জন্য হাতিরপাল অনবরত কিলোমিটারের পর কিলোমিটার অরণ্যপথে হাঁটে বা বিচরণ করে। তাদের এই হাঁটা ও বিচরণ সম্পূর্ণ মেমোরির বা স্মৃতিশক্তির ওপর চলে। তারা যখন কোথাও এসে দেখে জায়গাটি আগের মতো নেই তখন তারা বিচলিত-উদভ্রান্ত হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, হাতিরা খাবার হজমের জন্য দিনের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টাই হাঁটাচলা ও তাদের অরণ্যপথ বা এলিফ্যান্ট পাস ধরে বিচরণ করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জ্ঞান, লজিস্টিকস, প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে হাতিদের জীবন রক্ষায় দ্রুত কাজ করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, কক্সবাজার রেল লাইন ও ছয় লেন সড়কের সম্ভাব্য প্রকল্প- সবই হাতির আবহমান বিচরণপথ ধ্বংসের সামিল হবে। এশিয়ান গ্রুপের এইসব হাতির জীবন রক্ষার কথাটি যে কোনো উন্নয়ন কাজে হাত দেওয়ার আগে ভাবা উচিত। তিনি বলেন, এযাবত্ বাংলাদেশে হাতির ওপর কোনো গবেষণা হয়েছে বলে তার জানা নেই।