রুই মাছ খাওয়ানোর আড়ালে ঋতুপর্ণাদের চাপা কান্না
গেল কয়েক বছরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সব থেকে বেশি সাফল্য এসেছে নারী ফুটবলারদের মাধ্যমেই। কিন্তু দেশের জন্য এত সম্মান বয়ে আনার পরও তারা তাদের প্রাপ্য পান না। মাসের পর মাস ম্যাচ ফি-সহ নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন খেলোয়াড়রা। তবে এ সব নিয়ে খেলোয়াড়রা মুখ খুলতে পারেন না। সমস্যা নিয়ে খেলোয়াড়রা বাফুফের রুমে রুমে যান, কথা বলেন, কিন্তু ম্যাচ ফি পান না।
জানা গিয়েছে, ১১টি ম্যাচের ফি এখনো পায়নি নারী ফুটবলাররা। এর মধ্যে গেল মাসে মিয়ানমারে খেলে বাংলাদেশকে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে তুলে দিয়েছেন খেলোয়াড়রা। এত বড় সাফল্য পাওয়ার পর খেলোয়াড়রা দেশে ফিরলে মধ্যরাতে রাজধানীর হাতিরঝিলে জমকালো আয়োজন করে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয় বাফুফের পক্ষ থেকে। সেখানেই শেষ, খেলোয়াড়দের যে ম্যাচ ফি বকেয়া রয়েছে, সেদিকে আর কোনো খবর নেই, পরিশোধ করারও তড়িঘড়ি নেই বাফুফের।
জুলাইয়ে এক সাফল্যের রেশ না কাটতেই আরেকটি সাফল্য এসেছে অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলে। এই দলটাও লাওসে বাছাইপর্বে লড়াই করে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে। সেখান থেকে পরে দল গেল সোমবার রাতে দেশে ফিরে। তখন বিমানবন্দরে দেখা যায় কর্মকর্তাদের দলের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য ভিড়। খেলোয়াড়দেরকে পেছনে ঠেলে দিয়ে কর্মকর্তারা ফুল দেওয়া, মিষ্টি মুখ করানোর উসিলায় ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। এটা শুধু এবার হয়েছে, এমন নয়-যতবারই দল কোনো সাফল্য নিয়ে দেশে ফেরে, ততবারই দেখা যায় এমন চিত্র। অথচ খেলোয়াড়রা তাদের প্রাপ্য পাচ্ছেন কিনা, সেই প্রশ্নে কর্মকর্তারা বল ঠেলে দেন এই পা থেকে ঐ পায়ে। কেউ দায়িত্ব নিতে চান না। কারো কোনো পাত্তা নেই এ নিয়ে।
নারী ফুটবলারদেরকে পাঙাশ মাছ খেতে দেন না নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। তিনি কয়েক দিন আগে সংবাদমাধ্যমের সামনে গর্ব করেই এমনটি বলেছেন যে, পাঙাশ মাছ দেন না। তারা রুই মাছ খেতে দেন। চাষের রুই মাছ খাইয়ে দিয়ে দম্ভ করতে পারেন তারা। খেলোয়াড়দেরকে সবচেয়ে উন্নত মানের খাবার নিশ্চিত করাই তো কর্মকর্তার দায়িত্ব। কিন্তু সত্যিকার অর্থে খেলোয়াড়দের চাওয়াটা কী, তাদের মনের মধ্যে কী রয়েছে তা জানার আগ্রহ নেই কর্মকর্তাদের। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে অনেক অভিযোগ সব সময় ছিল। বাইরে থেকে খাবার এনে খাওয়ানো হয় ক্যাম্পের ফুটবলারদেরকে। সেগুলো কতটা মানসম্পন্ন, তা দেখার কেউ ছিল না। আবার এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই গরম চোখ দেখতে হতো।
বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল নারী ফুটবল ক্যাম্পের অনেক ধরনের অনিয়ম দূর করেছেন। মানসম্পন্ন খাবারের ব্যাপারে নজর রাখতে গিয়ে যেসব বিষয় তার নজরে এসেছিল, সেটা পছন্দ হয়নি। নিজে খাবারের বিষয়ে কথা বলেছেন। অনিয়ম দূর করার চেষ্টা করেছেন।একুশে পদকের সঙ্গে অর্থ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু চেক ভাঙাতে পারেনি বাফুফে। ফেরত পাঠাতে হয়েছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে। এরপর আর সেখান থেকে নতুন চেক ইস্যু হয়নি, বাফুফেও যোগাযোগ করেনি। এসব বিষয়ে সবকিছুই দেখভাল করার জন্য কমিটির চেয়ারম্যান রয়েছেন মাহফুজা আক্তার কিরণ।