ছবি সংগৃহীত
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ যেভাবে ব্যাটিং করেছে, সেটিকে এক কথায় হতশ্রী বলা যায়। ফিল্ডিংয়েও সেই বিশেষণের নমুনা পাওয়া গেছে। প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া ক্যাচ মিসের মহড়া চলছে ম্যারাথন ভঙ্গিতে। গতকালও তার নজির রেখেছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। আবার স্লিপের পাশ দিয়ে বাউন্ডারিতে ছুটে চলা বলের পেছনে পাঁচ ক্রিকেটারের দৌড়ও এই হতাশার মধ্যে হাস্যরস জুগিয়েছে।
সবকিছুর ব্যাখ্যা নিয়েই হাজির হয়েছিলেন জাকির হাসান। যেখানে তিনি ব্যাটিং ব্যর্থতার পেছনে এক ভুতুড়ে যুক্তি দিয়েছেন। তার মতে বাতাসের কারণে শ্রীলঙ্কান বোলাররা বাড়তি সুবিধা পেয়েছে এবং বাংলাদেশের উইকেট শিকার করেছে।
গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষ সংবাদ সম্মেলনে জাকির এসে ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে বলেন, ‘আসলে কারণটা আর কী বলব, আমরা সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত হয়েছে। আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী পারফরম করতে পারি নাই। আমাদের যে দায়িত্ব ছিল, ঐ দায়িত্বটা আমরা পালন করতে পারি নাই। ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে যে রকম খেলার কথা ছিল, হয়তো আমরা ঐ রকম খেলতে পারিনি।’ মানসিক চাপ থেকে এমন হলো কিনা জানতে চাইলে জাকির বলেন, ‘না, আসলে ব্যাপারটা ওরকম না। আমি চেষ্টা করি প্রত্যেক দিনই নতুনভাবে শুরু করার। আসলে অন্য কারও এই চাপ কাজ করে কিনা, সেটা জানি না। কিন্তু আমার মনে হয় যে, ঐ গুলো না চিন্তা করে বর্তমানে যদি ভালো পারফরম করতে পারি সেটাই আমাদের জন্য ভালো হবে।’
শ্রীলঙ্কা যেখানে সফল হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের এই ব্যর্থতার পেছনে এক অদ্ভুত যুক্তি দেখিয়েছেন জাকির। তার মতে, ‘আমাদের ঐ নির্দিষ্ট ডেলিভারি তো ফেস করতে হবে। আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে যে, একটু বেশি বাতাস থাকার কারণে ওরা একটু সুবিধা পেয়েছে। তাছাড়া সবই ঠিক ছিল। উইকেট অনুযায়ী সবই ভালো ছিল। তবে আমরা বলতে পারি না, এটার জন্য আউট হয়ে গেছি। আমাদের ওখানে আরো ভালোভাবে খেলা উচিত ছিল।’ জাকির শট সিলেকশনের ক্ষেত্রেও সতর্ক হওয়ার কথা বলেছেন। এছাড়া বাতাস নিয়ে তিনি আরো বলেছেন, ‘আমাদের বোলাররাও দেখেছেন ৮৬-৮৭ রানের মধ্যে ৬ উইকেট নিয়ে নিয়েছে (৮৯ রানের মধ্যে ৬ উইকেট)। বাতাসে যেটা হচ্ছে যে, অতিরিক্ত কিছু সময় বাতাস থাকার কারণে মুভমেন্টটা বেশি হচ্ছে। একটা নির্দিষ্ট জায়গাতেও বল করলে ঐ মুভমেন্টটা বেশি পাওয়া যাচ্ছে, যার কারণে তারা সহায়তা পেয়েছে, আমরাও পেয়েছি। আর ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে আসলে বাতাস কোনো অজুহাত নয়, আমরা সুযোগগুলো নিতে পারিনি।’
ক্যাচ ছাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশি এই ব্যাটসম্যান বলেন, ‘ক্যাচ ড্রপ হলে সবার খারাপ লাগে। এই ম্যাচে আমাদের অনেক ক্যাচ ড্রপ হয়েছেও। তো আসলে এটা তো কোনো অজুহাত হতে পারে না যে, আমার খারাপ লাগলে আর পরে ক্যাচ ধরব না। চেষ্টা করছি, ইনশাআল্লাহ ঐ জায়গায় উন্নতি করার।’ এ দিকে শ্রীলঙ্কার পেস বোলিং কোচ দর্শনা গামাগে নিজেদের দ্বিতীয় ব্যাটিং ইনিংস নিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের আরো ৫০-৬০ রান করতে হবে। তাহলে আমরা একটা ভালো অবস্থানে যাব। এই টেস্টে এখনো ছয় সেশন বাকি আছে। যতটা সম্ভব রান তোলার চেষ্টা করব আমরা। আর একটি সেশন ব্যাটিং করে ৫০০ রানের লক্ষ্য দিলে আমরা পাঁচটি সেশন পাব তাদের অলআউট করার জন্য।’
এ দিকে বাংলাদেশকে ফলোঅন করানোর সুযোগ পেয়েও কেন করায়নি শ্রীলঙ্কা, তার জবাবে গামাগে বলেছেন, ‘আমরা আমাদের বোলারদের বিশ্রাম দিতে চেয়েছি। এই কারণে করানো হয়নি। টেস্টের এখনো দুদিন বাকি রয়েছে। পরের ইনিংসে তাদের বোলারদের ভালোভাবে কাজে লাগানোর জন্যই এমনটা করা হয়েছে।’ তাছাড়া চট্টগ্রামে প্রচণ্ড গরমে ক্রিকেটারদের নাজেহাল অবস্থা ছিল। হয়তো সে কারণেই লঙ্কানরা আর ফিল্ডিংয়ে না থেকে বিশ্রামের অংশ হিসেবে আবার ব্যাটিংয়ে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বাংলাদেশ এই পরিকল্পনার জবাব কতটুকু এবং কীভাবে দিতে পারে, সেটিই দেখতে মুখিয়ে রয়েছে ভক্তরা।