৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধ নজির আহম্মদ হাওলাদার। দুঃখ-কষ্টের যেন শেষ নেই তার। শরীরে নানান রোগ। তবুও রোজ তাকে করতে হয় জীবিকার সংগ্রাম। এক ছেলে, এক মেয়ে এবং ঘরে অসুস্থ স্ত্রী রয়েছেন। ছেলে বিয়ে করে পরিবার নিয়ে থাকেন অন্যত্র। মেয়ে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন। এখন ঘরে কেবল অসুস্থ বৃদ্ধা স্ত্রী। তাকে নিয়ে ভোলার লালমোহন উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি একটি আশ্রয়ণের ঘরে বাস করেন নজির। এরআগে একই ইউনিয়নের কর্তার কাচারি এলাকার গাইনবাড়ি এলাকায় অন্যের জমিতে পরিবার নিয়ে বাস করতেন তিনি। প্রায় ১২ বছর আগে নদীতে নিজের বসতঘর বিলীন হওয়ার পর সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। নজির আহম্মদ জানান, ছেলে বিয়ে করে পরিবার নিয়ে নোয়াখালীতে থাকে। ছেলের ভালো লাগলে কয়েক মাস পর পর পাঁচশত-এক হাজার টাকা পাঠায়। তা দিয়ে তো আর সংসার চালাতে পারি না। আগে ক্ষেতে-খামারে কাজ করে সংসার চালাতাম। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভারী কোনো কাজ করতে পারছি না। তাই মিঠাই আর বাদাম দিয়ে কটকটি বানিয়ে বিভিন্ন এলাকায় হেঁটে হেঁটে গিয়ে বিক্রি করছি। এতে করে দৈনিক ২৫০-৩০০ টাকার কটকটি বিক্রি করতে পারি। যেখান থেকে লাভ হয় ১০০-১৫০ টাকা। বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে কোনো রকমে খেয়ে-পরে বেঁচে আছি। খাওয়া বলতে, তিনবেলা ভাত আর ডাল-শাকসবজি। কটকটি বিক্রি করে যা আয় হয় তা চাল কেনাসহ সংসারের অন্যান্য জিনিসপত্রের পেছনে ব্যয় হয়ে যায়। এ ছাড়া এই শীতে কষ্ট বেড়েছে।
কারণ পুরোনো ছোট ছোট দু’টি কম্বল দিয়ে আমি আর স্ত্রী কোনো রকমে শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করি। তবে ছোট ওই কম্বলে শীত থেকে তেমন রক্ষা মেলে না। তিনি জানান, গত এক বছর ধরে আমার বৃদ্ধা স্ত্রী অনেক অসুস্থ। তার কোমড়ে প্রচণ্ড ব্যথা। যার জন্য সে নড়াচড়া করতে পারে না। তাই সারাদিন কটকটি বিক্রি শেষে ঘরে ফিরে নিজেকেই রান্নাবান্না করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় স্ত্রীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়েছিলাম। চিকিৎসক ওষুধ লিখে দিয়ে তা কিনে নিয়মিত খেতে বলেছেন। এরপর এক হাজার টাকার ওষুধ খাওয়াতে পারলেও অর্থাভাবে আর ওষুধ খাওয়াতে পারিনি। নিজেরও শরীর জুড়ে নানান রোগ। টাকার অভাবে নিজেরও চিকিৎসা করাতে পারছি না। তবে আমার নামে একটি বয়স্ক ভাতা রয়েছে। প্রতি তিন মাস পর পর সেখান থেকে ১৮০০ টাকা করে পাই। এ টাকায় কিছু হয় না। সব মিলিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছি। তাই আমার বৃদ্ধা স্ত্রীকেও একটি বয়স্ক ভাতা প্রদানসহ তার এবং আমার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা। এই শীত থেকে রক্ষা পেতে ভালো কম্বল ও খাওয়ার জন্য চাল সহযোগিতা পেতে সমাজের বিত্তবান ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে অনুরোধ করছি। এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহ আজিজ বলেন, ওই বৃদ্ধের সম্পর্কে দ্রুত সময়ের মধ্যে খোঁজখবর নিয়ে তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
