Joy Jugantor | online newspaper

কুড়িগ্রামে শিক্ষককে পেটালেন বিএনপি নেতা

ডেস্ক রির্পোট

প্রকাশিত: ১৩:২১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১৩:৩৫, ২৩ জানুয়ারি ২০২৩

কুড়িগ্রামে শিক্ষককে পেটালেন বিএনপি নেতা

সংগৃহীত ছবি।

শিক্ষককে মারধর করার সময়ের দৃশ্য। গতকাল রোববার দুপুরে কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে।

কুড়িগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতার শিক্ষক পেটানোর ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষককে পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত বিএনপির ওই নেতার নাম মো. মাসুদ রানা (৪৮)। তিনি কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক। এক শিক্ষার্থীর নামে একাধিক ভর্তির আবেদন বাতিল করার ঘটনায় বিএনপি নেতা মাসুদ রানা কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আবদুল হাই সিদ্দিকীকে (৫৩) পিটিয়েছেন বলে থানায় করা অভিযোগে বলা হয়েছে।

পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিএনপি নেতা মাসুদ রানা তাঁর ছেলের ভর্তি বাতিলের কারণ জানতে সাংবাদিক ও ভর্তি বাতিল হওয়া কয়েকজন অভিভাবক নিয়ে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হকের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে প্রধান শিক্ষক, আবদুল হাই সিদ্দিকীসহ অন্য শিক্ষকেরা সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী, ভর্তি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান। এতে মাসুদ রানাসহ অন্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে আবদুল হাই সিদ্দিকীকে ধাক্কা দিয়ে কক্ষের এক কোনায় নিয়ে তাঁকে কিলঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন মাসুদ রানা। তাৎক্ষণিকভাবে অন্য শিক্ষকেরা এগিয়ে তাঁকে রক্ষা করেন। এ ঘটনার দৃশ্য সিসিটিভির ফুটেজেও দেখা গেছে।

শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার শিক্ষক আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, প্রধান শিক্ষকের কক্ষে সাংবাদিক ও কয়েকজন অভিভাবক এসে উচ্চবাচ্য করছেন—এ কথা পিয়নের মুখে শুনে তিনি প্রধান শিক্ষকের কক্ষে যান। সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী, ছেলের ভর্তি বাতিলের বিষয়টি জেনে বিএনপি নেতা মাসুদ রানা ও তাঁর সঙ্গীরা শিক্ষকদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে মাসুদ রানা তাঁকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে কক্ষের একটি কোনায় নিয়ে কিলঘুষি মেরে বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। এতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এ ঘটনায় শিক্ষক আবদুল হাই সিদ্দিকী গতকাল কুড়িগ্রাম সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মাসুদ রানা বলেন, ‘আমার সন্তানকে ১৮ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি করাই। ২৮ ডিসেম্বর বিদ্যালয় নোটিশ বোর্ডের মাধ্যমে জানতে পারি, আমার সন্তানসহ ৪২ জনের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। সে বিষয়ে জানতে কয়েকজন অভিভাবকসহ দরখাস্ত নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে যাই। সেখানে তাঁদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে। আমি কোনো শিক্ষকের গায়ে হাত তুলিনি।’

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক বলেন, ‘একই শিক্ষার্থীর নামে একাধিক আবেদন পড়ায় মন্ত্রণালয় থেকে ৪২ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে দেওয়া হয়। সে বিষয়ে কথা বলতে কয়েকজন অভিভাবক আমার কক্ষে আসেন এবং আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এর প্রতিবাদ করায় বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবদুল হাই সিদ্দিকীর ওপর তাঁরা চড়াও হন এবং ধাক্কাতে ধাক্কাতে এক কোনায় নিয়ে গিয়ে তাঁকে কিলঘুষি মারেন।’

জিয়াসমিন আরা আরও বলেন, বিষয়টি বিদ্যালয়ের সভাপতি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসককে জানালে তিনি থানায় অভিযোগ দিতে বলেন। মাসুদ রানাসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন আহত শিক্ষক আবদুল হাই সিদ্দিকী। তাঁরা শিক্ষক নির্যাতনের সঠিক বিচার চান।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির সভাপতি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্ছনার বিষয়টি জেনেছেন। গতকাল কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আজ এডিসি জেনারেল ও কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহত শিক্ষককে আইনি সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খান মো. শাহরিয়ার বলেন, অভিযোগ পেয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শন করে সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে আসা হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত পুলিশ তদন্তকাজ শুরু করেছে।

এর আগে ২১ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা মো. রোকনুজ্জামান রোকনের (৪০) বিরুদ্ধে এক প্রধান শিক্ষককে তুলে নিয়ে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া যায়। রৌমারী সিজি জামান উচ্চবিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে। পরে মারধরের শিকার শিক্ষক মো. নুরুন্নবী (৪১) থানায় মামলা করেছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।