
ফাইল ফটো
পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র ছয় দিন বাকি। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। বিশেষ করে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ঘরমুখো মানুষের ভিড় হবে বেশি। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ বিষয়টি মনে আনন্দ জাগালেও ভয় জাগাচ্ছে রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথ। সব পথেই রয়েছে ভোগান্তির শঙ্কা। বিশেষ করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসড়ক ঢাকা-টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে এবারও ঈদযাত্রায় যানজটের শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে মহাসড়কে যানজট নিরসনে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি বলা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের যানজট মুক্ত ঈদযাত্রায় তারা সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছে।
প্রতি বছর ঈদযাত্রায় উত্তরাঞ্চলগামী মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ে। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের অন্তত ২৩টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। ঈদে যানজট ও ভোগান্তিকে সঙ্গী করে এ পথ দিয়ে ঘরে ফেরেন মানুষ।
ঢাকা থেকে যানবাহনগুলো টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের সড়কের সুবিধায় দ্রুত আসতে পারে। কিন্তু এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে উঠতে লেন মাত্র দুটি। ২৬ বছরের পুরনো বঙ্গবন্ধু সেতুও দুই লেনের। ফলে ঢাকা থেকে চার লেন ধরে চলা যানবাহন এলেঙ্গায় এসে দুই লেনের মুখে আটকে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় যানজট। দুই পাশে দীর্ঘ মহাসড়ক দ্রুতগতিতে পাড়ি দিলেও এই ১৩ কিলোমিটার সড়ক পার হতে লাগে দীর্ঘ সময়। ফলে ঈদ এলে যাত্রী ও চালকদের মনে ১৩ কিলোমিটার পথ আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত ঈদযাত্রায় ৪ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ৫৩টি গাড়ি বিকল ও কিছু দুর্ঘটনা ঘটে। যে কারণে শেষ দিকে ঈদযাত্রায় বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সড়কে তৈরি হয় যানজট।
বিগত তিনটি ঈদকে ঘিরে দেখা যায়, গত বছরে রোজার ঈদে দুর্ঘটনার সংখ্যা ২০টি। একই বছরের কোরবানির ঈদে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫৯টি এবং চলতি গত ঈদুল ফিতরের দুর্ঘটনা সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৩টি। এবারও ঈদযাত্রায় একই শঙ্কায় যাত্রী ও চালকদের।
যাত্রী এবং চালকরা বলছেন, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ এখনো ভোগাচ্ছে। তাই সড়কে নজরদারি বাড়ানোর দাবি তাদের।
জানা যায়, মহাসড়কে যানজট মুক্ত রাখার জন্য গত ২৬ মে একটি সমন্বয় করেছেন পুলিশ সুপার। প্রতিটি দপ্তরের কাজ আলোচনার মাধ্যমে বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। সেটি ইতোমধ্যেই মাঠপর্যায়ে কাজ চলছে। বড় আশঙ্কা থাকে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়ক। এছাড়াও গত কয়েক বছর ধরে উত্তরবঙ্গের যানবাহন একমুখী করে রাখা হয়। সেটি সেতু থেকে ভূঞাপুরের লিংক রোড দিয়ে এলেঙ্গাতে উঠার জন্য ব্যবস্থা। অপরদিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহন সরাসরি সেতুতে উঠার ব্যবস্থা করা হয়।
আব্দুল মোমেন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মিজান সারোয়ার বলেন, সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে গত ঈদে ৪ কিলোমিটার ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়া হয়। এবারের ঈদেও নতুন করে আরও ৪ কিলোমিটার ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছে। ঈদের আগেই সেটিকে ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়া হবে। ঈদে ঘরমুখো মানুষ এবারে খুব একটা সমস্যা হবে বলে মনে করছে না।
বঙ্গবন্ধু সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল বলেন, সেতু দিয়ে যত ফিটনেসবিহীন যানবাহন কম আসবে, ততই দুর্ঘটনা কম ঘটবে। এতে করে যানজটের সম্ভাবনাও কম থাকবে। সেতুর পাশে যত যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকবে ততই যানজটের লক্ষণ থাকে। সেতুর টোল দেওয়ার সময় টাকা ভাংতির জন্য চালকদের যেন অপেক্ষা না করতে হয়। এ বিষয়ে নজর দেওয়ার জন্য চালকদের বিশেষভাবে বলা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার বলেন, এ বছরে যানজট মুক্ত রাখার জন্য কয়েকটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরিবহন চলাচলে নির্বিঘ্ন করতে জেলা পুলিশের সাত শতাধিক সদস্য পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবে।