
চুড়ি ফিতার ফেরিওয়ালার সংখ্যা দিনদিন কমলেও অনেকে অভিনব কৌশলে টিকে রেখেছেন ঐতিহ্যবাহী এ পেশা। পায়ে হেঁটে কিংবা বাইসাইকেলে নয়, যুগের বাস্তবতায় পিকাপে করে চুড়ি ফিতার পসরা সাজিয়ে ক্রেতাদের দাঁড়ে দাঁড়ে যাচ্ছেন ভাসমান চুড়ি ফিতার দোকান।
ফেরিওয়ালা মমিনুর ইসলাম রনি(৩২)। তিনি পিকাপে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফেরি করে ৭০-৭৫ আইটেমের চুড়ি, ফিতা, লেইস, কানের দুল, মাথার ব্যান ও মালা বিক্রি করেন।
তিনি গোবিন্দগঞ্জ এলাকার চুড়ি ফিতা ব্যবসায়ী শাহিনের মাসিক বেতনভুক্ত কর্মচারী। বাড়ি তার নাটোরে। মাসিক ১২হাজার টাকা বেতনে তাকে ফেরির পিকাপ নিয়ে ছুটতে হয় দেশের বিভিন্ন পথ প্রান্তরে।
সোমবার বিকেলে শিবগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার সামনে পিকাপে ফেরি করে কানের দুল, খোপা, ব্যান, রাবার ব্যান, কাকরা ও চুড়ি বিক্রি করতে দেখা যায় রনিকে।
ক্রেতা শরিফুল বলেন, এসব দোকানে কম দামে ভালো জিনিস পাওয়া যায়। তাই নাতির জন্য চুড়ি নিতে এসেছি।
ফেরিওয়ালা রনি দৈনিক জয়যুগান্তরকে বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন মেলাতে গিয়ে চুড়ি ফিতা বিক্রি করি। মেলা বন্ধ থাকায় আমরা এখন দেশের বিভিন্নস্থানে পিকাপে করে প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার টাকার চুড়ি ফিতা বিক্রি করি।
তিনি আরও বলেন, কানের দুল ৫ টাকা, চুড়ি ৪০-৬০ টাকা, খোপা ১০টাকা, কাঁকড়া ১০-২০ টাকা, মালা ৩০ টাকা, ফিতা ১০টাকা দরে বিক্রি করে থাকি। আগে বেচাকেনা বেশি ছিল। এখন বিক্রিতে একটু ভাটা পরেছে।
শিবগঞ্জে পায়ে হেঁটে ব্যবসা করা ফেরিওয়ালা আজিবর বলেন, আগের মতো ব্যবসা হয় না। এখন কমে গেছে আয়। দিনে ২০০ টাকা লাভ করা খুব কঠিন। তাই অনেক এ পেশা পরিবর্তন করেছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলার পরিসংখ্যান অফিসে ফেরিওয়ালাদের সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, দুই দশক আগে উপজেলার ৩০০ মানুষ এই পেশায় যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে তা কমে ৫০জনে নেমে এসেছে।
শিবগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল আহম্মেদ সাবু বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় ১০ঘর মানুষ ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আগে ফেরিওলাদের সংখ্যা আরও বেশি ছিল।
শিবগঞ্জ চৌধুরী আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আব্দুল হান্নান বলেন, আগেকার দিনে গ্রামে গ্রামে দেখা যেত ফেরিওয়ালাদের। কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে এ পেশা।
শিবগঞ্জ সমাজ সেবা কর্মকর্তা সামিউল ইসলাম বলেন, ফেরি করে জিনিসপত্র বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা এই পেশার সঙ্গে গ্রাম বাংলার অনেক মানুষ জড়িত ছিলেন। কালের বিবর্তনে এই পেশার মানুষগুলো ভিন্ন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। তাদের তথ্য ও তালিকা করে সরকারি সহায়তা ও ক্ষুদ্র ঋণ দানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে হয়তো অনেকেই ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ ও ঐতিহ্যবাহী পেশা রক্ষার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবেন।