
সংগৃহীত ছবি
ডেলটা ও ডেলটা প্লাসের পর, দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত করোনার সবচেয়ে ভয়ংকর ধরন ‘ওমিক্রন’ নিয়ে শঙ্কিত গোটা বিশ্ব। চীনের উহানের ধরন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এটি।
তাই এই ধরনটির বিরুদ্ধে কিছুটা কার্যকারিতা হারাবে চলমান টিকাগুলো। বিজ্ঞানীদের এমন সতর্কতায়, সংক্রমণরোধে ফ্লাইট বন্ধসহ সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কয়েকটি দেশ।
সবচেয়ে ভয়ংকর, সবচেয়ে বেশিবার রূপ পরিবর্তনকারী ধরনটি গেলো সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। উৎপত্তিস্থল চীনের উহানের ধরন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
সন্দেহ করা হচ্ছে, নির্দিষ্ট কোনও এক রোগীর শরীরে মিউটেশন ঘটে বর্তমান রূপ তৈরি হয়েছে। সম্ভবত, ওই রোগী এইচআইভি আক্রান্ত এবং তিনি বিনা চিকিৎসাতেই ছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, প্রায় ৫০ বার জিনের বিন্যাস বদলে তৈরি হয়েছে নতুন এই প্রজাতি। এর মধ্যে ৩২ বার বদলেছে স্পাইক প্রোটিনের চরিত্র।
তারা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এই স্পাইক প্রোটিনের চরিত্র আরও বদলাতে পারে। তাতে আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে ভাইরাস। সে জন্যই নতুন ধরন নিয়ে এতো উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, উহানের ধরনের উপর ভিত্তি করে তৈরি, চলমান টিকাগুলো। তাই এ টিকা নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে নিশ্চিতভাবে কার্যকারিতা হারাতে পারে।
তবে কি পরিমাণ কার্যকারিতা হারাবে বা কতোটা দ্রুত এটি সংক্রমিত করতে পারে- এ প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। আরো কিছু দিন অপেক্ষায় থাকতে হবে।
চলতি মাসের শুরু থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন করে করোনা রোগী বাড়তে শুরু করে। সেখানে নতুন করে আক্রান্তদের ৯০ শতাংশের শরীরেই রয়েছে মিলেছে ওমিক্রন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ওমিক্রন নামে করোনার এই নতুন প্রজাতির ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা কতটা, এর ওপর টিকা কতটা কার্যকরী, তা বুঝতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট চলমান করোনাবিরোধী লড়াইকে ব্যাহত করতে পারে। তবে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়া উচিৎ নয়।
কারণ এই ধরণটি প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা গেছে। যার কারণে প্রতিরোধ করা সহজ হবে। এছাড়া, টিকা নেয়ার ফলে যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, রাতারাতি তা সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করতে পারবে না নতুন ধরন।
তাদের মতে টিকা এখনো কার্যকর। নতুন ধরনে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, কিন্তু কেয়ামত তৈরি করতে পারবে না। কিংবা মহামারীর নতুন তরঙ্গ তৈরি করতে পারবে না।
আবার করোনার নতুন রূপ ‘ওমিক্রন’ সংক্রমণের হিসেবে আদৌ তার পূর্বসূরি ডেল্টার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে মহামারী বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই।
তারা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন ধরনকে উদ্বেগের কারণ বলেছে। আতঙ্কের কারণ বলেনি। উদ্বেগের কারণ বলেই বিভিন্ন দেশ তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিতে নেমে পড়েছে।
আরেক দল বিশেষজ্ঞ বলছেন, শুধুমাত্র মানবদেহের সহজাত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নয়। ওমিক্রনকে লড়াই করতে হবে করোনা টিকার প্রতিরোধের বিরুদ্ধেও।
ডেলটা রূপের সংক্রমণের সময় বিশ্ব জুড়ে টিকাকরণের সংখ্যা ছিল অনেক কম। এখন বিশ্বে টিকাকরণ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সংক্রমণের হিসাবে ওমিক্রন যদি ডেলটাকে ছাপিয়ে যায় তবে বিশ্বজুড়েও তা-ই হবে, এমনটা নয়। যেমন করোনার আলফা রূপ ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও দক্ষিণ আফ্রিকায় খুব একটা সংক্রমণ ছড়াতে পারেনি।
ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী পার্লামেন্টে ভাষণে জানান, করোনার নতুন ধরনে বিশ্ব ব্যাপকভাবে আতঙ্কিত। চরম অনিশ্চয়তায় পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সচেতনভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের ঘোষণার পরপরই আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগে কড়াকড়ি আরোপ করে যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, ইসরাইল, জার্মানি, চেক রিপাবলিক। ইউরোপিয় ইউনিয়নও ফ্লাইট নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছে।
ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে আমেরিকাও। করোনার নতুন রূপ নিয়ে এতটাই ভয়ে পেয়েছে নিউইয়র্ক যে, ৩ ডিসেম্বর থেকে সেখানে জারি হতে চলেছে জরুরি অবস্থা।
এসবের প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ বিভাগের প্রধান জানান, ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত পারস্পরিক সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করবে। সংক্রমণরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।