‘রোবট ডগ’—যাকে ঘিরেই সব আকর্ষণ। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা-২০২৩-এ বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান জেডটিই এনেছে এই রোবট। এটি দুর্যোগের মধ্যে উদ্ধার কাজে বা বাড়ির পাহারাদারের কাজেও ব্যবহার করা যাবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্টের (এআই) মাধ্যমে সে বুঝতে পারবে—কে অপরাধী, আর কে বাড়িতে আগন্তুক। কারণ এআই টেকনোলজির মাধ্যমে তার বিশাল ডাটাবেজ থাকবে। ফাইভজি সিম ব্যবহার করে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে।
শুক্রবার মেলার দ্বিতীয় দিনে জেডটিইর স্টলে গিয়ে দেখা গেল ‘রোবট ডগ’কে ঘিরে সাধারণ মানুষের কৌতূহল। প্রতিষ্ঠানটির বিপণন ব্যবস্থাপক কাজী হোসনী হোসাইন রনি ইত্তেফাককে বলেন, এটা রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে আছে। এটাকে অনেক কাজেই ব্যবহার করা যাবে। বাড়িতে পাহাড়ার কাজেও এটাকে ব্যবহার করা যাবে। এটার সঙ্গে এআই টেকনোলজি যুক্ত করে আরও হাইলেভেলে ব্যবহার করা যাবে। এমনকি ফাইভজি সিম যুক্ত করে বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে এটাকে কন্ট্রোল করতে পারবেন। কাজী হোসনী হোসাইন রনি বলেন, এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ এলাকা যেখানে গাড়ি যেতে পারছে না, সেখানে এই রোবট ৫০ কেজি মালামাল পৌঁছে দিতে পারবে। এই রোবটটার ওজন ২৫ কেজি। সে নিতে পারবে ৫০ কেজি। যেমন, পাহাড়ে গাড়ি যেতে পারছে না, এই রোবট তার পিঠে বিশেষ ব্যবস্থা আছে তা দিয়ে মালামাল পাঠানো যাবে। এটা চাইলে আরও ওজন বাড়ানো যাবে। এটা বানাতে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো খরচ পড়বে। এটাকে আরও ফাংশন যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্টের মাধ্যমে সে বুঝতে পারবে কে অপরাধী আর কে বাড়িতে আগন্তুক। কারণ এআই টেকনোলজির মাধ্যমে তার বিশাল ডাটাবেজ থাকবে। তার ডাটাবেজে কেউ না থাকলে সে শনাক্ত করে সিগন্যাল দেবে। সেভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।
জেডটিইর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দূরনিয়ন্ত্রিত এই রিমোট কন্ট্রোল রোবটে ডেটা ট্রান্সফার ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ফাইভজি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। এ ছাড়া রোবটটি সামনে-পেছনে চলতে পারে। দুই পায়ে ভর দিয়েও দাঁড়াতে পারে এবং এই রোবট রিমোট কন্ট্রোলে দেওয়া আদেশে খুব দ্রুত সাড়া দেয়। রোবটটির মুভমেন্ট এরই মধ্যে আনন্দ দিচ্ছে সবাইকে। মেলায় আগত উৎসুক দর্শনার্থীদের রোবটটির ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে দেখা গেছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এই রোবটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অত্যাধুনিক ও হাই রেজল্যুশনের ক্যামেরা, যা রিয়েল টাইমে উচ্চমানের ছবি ও ভিডিওচিত্র পাঠাতে পারে। এ ছাড়া থারমাল ক্যামেরার মাধ্যমে আরও জোরালো তল্লাশিও এটি চালাতে সক্ষম, যা স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে যে কোনো উদ্ধার অভিযান ও তল্লাশির ক্ষেত্রে এই রোবট ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি জরুরি কোনো কিছুও দ্রুত এই রোবট পরিবহন করতে পারবে এবং এর সামনের বাধা সে পার হতে পারবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র, জ্বালানিকেন্দ্রের মতো সংবেদনশীল স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতে টহল কার্যক্রম চালাতে সক্ষম। এ ছাড়া যেসব স্থানে মানুষের জন্য যাওয়া বিপজ্জনক, সেসব স্থানে সহজেই যেতে পারবে ডগ রোবট। এটি দুর্গম পাহাড়ে উঠতে পারে। ভূমিকম্পের মতো ঘটনায় খুব সহজেই ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়েও চলাচল করতে সক্ষম।
বিশ্ব জুড়ে রোবট ডগের চাহিদা বাড়ছে। এরই মধ্যে রোবটটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোস্টন ডাইনামিক্স ‘রোবট ডগ’ বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছে। এ ছাড়া এ ধরনের রোবট প্রযুক্তি নিয়ে অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও কাজ করছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুৎকেন্দ্র পাহারায় রোবট ডগের ব্যবহার শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।