Joy Jugantor | online newspaper

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে খনন করলে মিলতে পারে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১৭:৫৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে খনন করলে মিলতে পারে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে খনন করলে মিলতে পারে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে সম্প্রতি উদ্ধার করা হয় প্রাচীনকালের একটি স্থাপনা, যেখানে নানা মৃত্পাত্রের সঙ্গে পাওয়া যায় একটি শিলালিপি। গত ৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে উপজেলার কুচেরপাড়া গ্রাম থেকে এ শিলালিপি উদ্ধার করে পুলিশ। ঐ দিন এখানে একটি উঁচু মাটির ঢিবি কাটার সময় ভেকুর সঙ্গে শিলালিপিটি ওঠে আসে, যার চিত্র পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে জাপানে।

শুধু এ শিলালিপিই নয়, ২০১৩ সালে উপজেলা বেলওয়া মৌজায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. সৈয়দ কামরুল আহসানের নেতৃত্বে সে সময়ের সহযোগী অধ্যাপক স্বাধীন সেন একটি খননকাজ সম্পন্ন করেন। এ খননে উন্মোচিত হয় প্রথম মহীপালের আমলে আরম্ভ এবং তৃতীয় বিগ্রপালের আমলে একটি মন্দির। অবিভক্ত ভারতবর্ষে এমন মন্দির আর কোথাও পাওয়া যায়নি। এ রকম স্থাপনা ঘোড়াঘাটে অসংখ্য থাকলেও কোনো অনুসন্ধান না হওয়ায় সব অজান্তেই রয়েছে যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিমত, সরকারিভাবে এখানে অনুসন্ধান চালানো হলে অজানা অনেক ইতিহাস জানা যাবে।

জানা যায়, মধ্যযুগ থেকে আলোচিত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট নানাভাবে ঐতিহাসিক তথ্যভান্ডারে সমৃদ্ধতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বহন করে আসছে। কখনো পাল আমল, কখনো সুলতানি আমল আবার কখনো মোগল আমলের শাসনব্যবস্থা ঘোড়াঘাটকে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে দিয়েছে। মোগল আমল থেকে ঘোড়াঘাট স্বর্ণযুগে পদার্পণ করে। খরস্রোতা করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে ঘোড়াঘাট নগরীর অবস্থান। মোগল আমলে সরকার ঘোড়াঘাটে প্রধান শাসন কেন্দ্র হিসেবে এর সমধিক পরিচিতি ছিল।

প্রাচীন জনপদ রাজা বিরাট, পুণ্ড্রবর্ধন, কোটিবর্ষ, গৌড়, পাণ্ডুয়া এবং কৈলা শহরের পতনের পর গুপ্ত, পাল, সেনযুগ অতিক্রম করে মোগল যুগে এসে ঘোড়াঘাট নগরের অভ্যুদয় ঘটে। মোগল অধিকারভুক্ত হওয়ার আগেই পাঠান ও কাকশালরাই ছিল সর্বেসর্বা। পাঠানদের আগে সুলতানি আমলে কামতা রাজ্যের দক্ষিণ সীমান্ত এলাকা একটি ছোট দুর্গরূপে ঘোড়াঘাটের পরিচয় ছিল। এরপর বিভিন্ন শাসন কর্তা দ্বারা ঘোড়াঘাট শাসিত হয়। পরে কালের গর্ভে মাটিচাপা পড়ে এখানকার নানা স্থাপনা। এসব স্থাপনাগুলোর সঠিক তদন্ত বা খনন না হওয়ায় এখন শুধুই স্মৃতি হয়ে রয়েছে। 

গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রাচীন স্থাপনার সন্ধান ও ২৭ লাইনে লেখা একটি শিলালিপি উদ্ধারের খবর পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন দুই জন গবেষককে ঘোড়াঘাট পাঠান। গবেষক দল এ স্থাপনার বিভিন্ন মৃত্পাত্রের নমুনাসহ স্থাপনাটি থরে থরে সাজানো ইটের প্রাচীরের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে ড. স্বাধীন সেন জানান, শিলালিপির চিত্র জাপানে পাঠানো হয়েছে। পাঠ উদ্ধার হলেই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। তবে তিনি অনুমান করছেন, এখানে একটি বিশাল মন্দির রয়েছে।