Joy Jugantor | online newspaper

যে ১০ কারণে বিলুপ্তির পথে শহর থেকে চড়ুই পাখি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ০৬:১৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

যে  ১০ কারণে  বিলুপ্তির পথে শহর থেকে চড়ুই পাখি

ছবি : সংগৃহীত

বাসার জানালা বা ছাদগুলোতে চড়ুই পাখির ডাকাডাকির মতো দৃশ্য খুব শিগগিরই অপরিচিত হয়ে উঠবে। কেননা কংক্রিটের এই জঙ্গল থেকে চড়ুই খুব দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।

বনে যেমন বাঘ থাকে, তেমনি শহরে থাকে চড়ুই- আজকের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে এক কথায় এভাবেই প্রকাশ করা যেতে পারে। কেননা, চড়ুইয়ের মাধ্যমে একটি শহরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও প্রাণীবৈচিত্রের অবস্থা ফুটে ওঠে; যেমনিভাবে একটি প্রতিবেশে থেকে বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ার মাধ্যমে সেই প্রতিবেশের দূরাবস্থার চিত্র প্রকাশ পায়।

চড়ুইয়ের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ার জন্য এককভাবে কোনো একটি কারণ দায়ী নয়, বরং মানুষের কর্মকাণ্ডের দায় সবচেয়ে বেশি।

কেন চড়ুই হারিয়ে যাচ্ছে তার প্রধান ১০টি কারণ দেওয়া হলো-

১। গাছের পরিমাণ ব্যাপকমাত্রায় হ্রাস পাওয়া

এটা একটা স্বাভাবিক বিষয় যে, যত বেশি গাছ, তত বেশি পাখি। দ্রুত গাছপালা কমে যাচ্ছে। ফলে চড়ুইও তাদের বাস উপযোগী পরিবেশ হারাচ্ছে। কিন্তু হয়তো বলবেন, তারা তো অট্টালিকাতেও বাসা তৈরি করছে, কথা সত্যি। কিন্তু এতে তারা দ্বিমুখী বৈরীতার শিকার হচ্ছে।  

২। বাসা তৈরির উপযোগী পরিবেশের অভাব

চড়ুই, ময়না, প্যারাকিট ইত্যাদি পাখির বাসা বাঁধার জন্য প্রাকৃতিক কোটর অনুপস্থিত। ফলে প্রাকৃতিক কোটরের স্থান দখল করেছে উঁচু উঁচু ইট পাথর, কাঁচের তৈরি কর্পোরেট ভবন। এসব ভবনে পাখিদের বাসা করার জন্য প্রয়োজনীয় কোটর নেই, যা ছিল পুরনো আমলের ভবনগুলোতে।

৩। দেশীয় গাছের অনুপস্থিতি

দেশীয় উদ্ভিদ যেমন মেহেন্দির মতো অনেক দেশীয় গাছ ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে। দেশীয় এসব গাছের বদলে এখন সৈন্দর্যবর্ধনকারী গাছ ইরেক্টা, ডামবেত এবং অন্যান্যদের গাছ প্রতিস্থাপিত হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, দেশীয় গাছ চড়ুই পাখির প্রাকৃতিক আবাসস্থল, তাদের খাবার যেমন বিভিন্ন প্রজাতির পোকা, সেসব গাছের বীজ ইত্যাদিরও উৎস। একটি চড়ুইয়ের সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া এবং পরবর্তী প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখতে বংশবৃদ্ধির জন্য বীজ বা অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি পোকামাকড় অত্যন্ত প্রয়োজন।

৪। ঝোঁপ-জঙ্গলের অভাব

চড়ুইয়ের বাসা তৈরির উপযোগী ঘন ঝোঁপ-জঙ্গল ব্যাপকমাত্রায় কমে গেছে। ঘন ঝোঁপ-জঙ্গল চড়ুইসহ অন্যান্য পাখিদের শিকারি প্রাণী থেকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে।

৫। কংক্রিটের ব্যাপক ব্যবহার

চড়ুই পাখি সাধারণত দুই ধরনের গোসল পছন্দ করে। একটি পানি দিয়ে এবং অন্যটি ধুলো দিয়ে। কংক্রিটের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে পাখিগুলো ধুলো গোসল করতে পারে না, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে মারাত্মক ব্যাহত করে।

৬। আধুনিক সুপার শপ

চড়ুই পাখি সাধারণত অতি ক্ষুদ্র শস্যকণা খায়। শহরে আগের দিনের পুরোনো স্টাইলের মুদি দোকানের বাইরে বিভিন্ন রকম শস্যকণা কমবেশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো। যা পাখিদের খাবারের উৎস হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু আধুনিক সুপার শপগুলোতে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। কেননা এয়ার কন্ডিশনার এবং প্লাস্টিকের প্যাকেজিংসহ আধুনিক মুদি দোকানগুলো থেকে খাদ্যশস্য খুঁজে পাওয়ার সুযোগ কেড়ে নেয়।

৭। রাসায়নিক ও সার মিশ্রিত কৃষিপণ্য

কৃষিক্ষেত্রে অত্যাধিক সার ও রাসায়নিকের ব্যবহারের ফলে খাদ্যশস্যের গুণগত দিকগুলো পরিবর্তন হয়। যা চড়ুই পাখির খাবার নষ্ট করে।

৮। সেলুলার ফোনের রেডিয়েশন

মোবাইল ফোনের টাওয়ার থেকে সৃষ্ট ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্ষেত্র এবং রেডিয়েশন চড়ুইকে প্রভাবিত করে বলে জানা যায়। একই সাথে এটাও জানা যায় যে, এই বিকিরণ মানুষের জন্যও ক্ষতিকর। এসব বিকিরণের প্রভাবে চড়ুইগুলোর ইমিউন এবং স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। যা তাদের পরবর্তী বংশগতিতে নেতিবাচক প্রভাবে ফেলে।

৯। শিকারির পরিমাণ বেশি

অনেক বেশি আবর্জনা তৈরি হওয়ার কারণে চড়ুই শিকারি প্রাণী যেমন কাক ও বিচরণ বিড়ালের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সোজা কথায়, যত বেশি আবর্জনা, তত বেশি শিকারি প্রাণী, আর তত বেশি চড়ুই শিকার করে।

১০। কুসংস্কার

অনেকেই বিশ্বাস করে যে চড়ুই পাখির মাংস যৌন উদ্দীপক। এই কুসংস্কারের কারণে মানুষও চড়ুই পাখি শিকার করে। এটি চড়ুই পাখিকে আরও বেশি হুমকি মুখে ঠেলে দিয়েছে।

এই অবস্থায় কী করা যেতে পারে

১। চড়ুইপাখিকে খাওয়ানোর জন্য উৎসাহিত করতে নেস্ট বক্স তৈরির পাশাপাশি চড়ুইয়ের আবাসিক এলাকায় সঠিক শস্যযুক্ত বিশেষ ধরনের ফিডার স্থাপন করতে হবে। যেখানে মানুষ খাবার সরবরাহ করবে।

২।  দেশীয় প্রজাতির গাছ বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিতে হবে। এতে চড়ুই পাখিবান্ধব একটি পরিবেশের সৃষ্টি হবে। গাছগুলো পাখিরা বাসা তৈরি এবং খাদ্যের উৎস হিসেবে কাজ করবে।

৩। পাখির জন্য পানির বিশেষ উৎসের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে। যেখানে চড়ুই বা অন্যান্য পাখি পানি খেতে এবং গোসল করতে পারে।  

৪। সরকার বা সংস্থার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও চড়ুই পাখির রক্ষার বিষয়টিকে পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, নেচার ফরএভার সোসাইটির উদ্যোগে প্রতি বছরের ২০ মার্চ আন্তর্জাতিক চড়ুই দিবস পালন করা হয়। মাত্র চার বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ইউরোপ এবং দক্ষিণ এশিয়াসহ পৃথিবীর ৫০টির বেশি দেশে দিবসটি জনপ্রিয় হয়েছে। বিশ্ব চড়ুই দিবস শুধু একটি প্রজাতির চড়ুইয়ের জন্যই নয়, বরং পৃথিবীতে প্রাপ্ত ২৬টি প্রজাতির প্রত্যেকটি প্রজাতির জন্য।