Joy Jugantor | online newspaper

বগুড়ায় ‘বিষাক্ত মদ পানে’ নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১৬:২৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বগুড়ায় ‘বিষাক্ত মদ পানে’ নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ফাইল ছবি

বগুড়ায় 'বিষাক্ত মদপানে' নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। গত রোববার থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়। 

মৃতরা হলেন, রমজান আলী (৪০), সুমন রবিদাস (৩৬), সুমন রবিদাসের বাবা প্রেমনাথ ও চাচা রামনাথ।  অন্যরা হলেন, পলাশ মিয়া (৪০), সাজু (৫৫), মোজাহার আলী (৭৭) আব্দুল জলিল (৬৫), জুলফিকার রহমান (৫৬), আবুল কালাম, আব্দুর রহিম (৪২), আলমগীর (৪০), আব্দুর রাজ্জাক (৪২) ও মেহেদী হাসান (২৫), আব্দুল আহাদ (৩৮) ও লাজু মিয়া (৩২)।

মৃতরা বগুড়া সদর উপজেলায় তিনমাথা, কালিতলা, ফুলবাড়ি ও কাটনারপাড়া এলাকায় এবং কাহালু, শাজাহানপুর ও সারিয়াকান্দি উপজেলায় পৃথকভাবে মদপান করেন।

মৃত আব্দুর রাজ্জাক, মেহেদী হাসান ও আব্দুল আহাদ বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার বাসিন্দা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেহেদি ও আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যু হয়।  এর আগে সোমবার দুপুরে আব্দুল আহাদের মৃত্যু হয়েছে।

শাজাহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হতে মৃতদেহগুলো ময়নাতদন্ত জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

মদপানে মৃত লাজু মিয়া সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটফুলবাড়ী দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন। লাজু পেশায় রিকশাচালক ও পাশাপাশি অ্যালকোহল বিক্রি করতেন। তার ভাই শফিকুলও মদপান করে অসুস্থ অবস্থায় পলাতক রয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, লাজু ও শফিকুলের মঙ্গলবার সকাল থেকেই বুক জালা-পোড়া করছিল বলে তারা চিৎকার করছিলেন। এ অবস্থায় লাজুকে হাসপাতাল নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আর শফিকুল পলাতক রয়েছেন। নিহতের স্বজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাটফুলবাড়ী এলাকায় তারা অ্যালকহল পান ও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। লাজু মিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। 

তবে পুলিশ বরাবরের মতো দাবি করছে, মৃতদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বিষাক্ত মদপানে। আর বাকীরা স্টোক করে মারা গেছেন। 

মৃত ব্যক্তির স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের নিশ্চিত করা তিনজন বাদে অন্যরাও বিষাক্ত মদ পান করেছিলেন।

আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে আটটার দিকে মারা গেছেন শহরের তিনমাথা এলাকার সুমন রবিদাসের বাবা প্রেমনাথ ও চাচা রামনাথ। এ ছাড়া সোমবার বিকেলের দিকে বগুড়ার দক্ষিণ ফুলবাড়ি এলাকার রিকশাচালক আব্দুল জলিল, সদরের ফাঁপোর এলাকার রিকশাচালক জুলফিকার রহমান ও কাহালু উলট্ট মহল্লার আবু কালাম মারা যান। 

তাদের মৃত্যুর বিষয়টি মঙ্গলবার সকালে বগুড়ার সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ বলছে, আব্দুল জলিল, জুলফিকার রহমান ও আবুল কালাম নিজ নিজ বাড়িতে মারা গেছেন।

তাদের স্বজনেরা বলছেন, বিষাক্ত মদ তারাও খেয়েছিলেন। আবু কালাম বাদে অন্য দুজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

বিষাক্ত মদ খেয়ে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন পলাশের ভাই আতিকুর রহমান পায়েল, পায়েলের বন্ধু আইয়ুব, শিববাটি এলাকার হোটেল শ্রমিক রঞ্জু। এছাড়াও শাজাহানপুর উপজেলার অন্তত ৫জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার ফুলবাড়ী এলাকার পলাশ মিয়া সোমবার ১১টার দিকে মেডিকেলে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। পলাশের ভাই পায়েল ও তার বন্ধু আইয়ুব বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলে ভর্তি। 

হাসপাতালেই পলাশের ভাগ্নে বাধন বলেন, জন্মদিনের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ওই সন্ধ্যায় তার মামার সাথে আব্দুর রহিম  নামের আরেকজনও মদ পান করেন। পরে তিনি তার বাড়ি ফুলবাড়ী দক্ষিণ পাড়ায় গত রোববার মারা যান।

নিহত সুমন রবিদাসের ভাই সুজন রবিদাস বলেন, রমজান তাদের এলাকার বাসিন্দা। তারা শহরের তিনমাথা রেলগেট এলাকায় একটি হোমিও দোকান থেকে স্পিরিট কিনে পান করেন। এটা পান করেই রমজান অসুস্থ হয়ে তার নিজ বাড়িতে মারা যান।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ মঙ্গলবার রাতে মোবাইলে বলেন, মৃত আট ব্যক্তির বিষয়ে সন্দেহ থাকায় তাদের পোস্ট মর্টেম করার জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ফলাফল আসলে বিস্তারিত বলা যাবে।  আর তিনটি হোমিও হলের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। 

বিষাক্ত মদ বিক্রির বিষয়ে বগুড়া সদর থানায় সোমবার রাতে একটি মামলা হয়েছে।  মামলা বাদী রঞ্জুর বড়ভাই মনোয়ার। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।  আসামীরা হলেন, খান হোমিও হলের মালিক শাহিনুর রহমান শাহীন, পারুল ও পুনম হোমিও হলের মালিক নুর আলম ও নুর নবী। নুর আর নুর নবী আপন দুইভাই।
 

    আরো পড়ুন