পুতিন মুখে ভালো কথা বলেন, রাতে বোমা মারেন: ট্রাম্প
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে শক্তিশালী করতে প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি অসন্তোষ জানিয়ে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। রোববার (১৩ জুলাই) এএফপি-কে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত অস্ত্র সহায়তার দ্বার খুলে দিল ওয়াশিংটন। এর আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, রাশিয়া নিয়ে সোমবার একটি ‘বড় ঘোষণা’ দেবেন তিনি।
এদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘিরে কূটনৈতিক তৎপরতাও বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত ইউক্রেনে সফর করছেন এবং ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎও হওয়ার কথা রয়েছে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলমান রাশিয়ার আগ্রাসনে এবারের গ্রীষ্মে হামলার মাত্রা বেড়েছে। যদিও নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করবেন তিনি।
তবে ঠিক কত পরিমাণ অস্ত্র ইউক্রেনকে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি ট্রাম্প। নিউ জার্সির অ্যান্ড্রুজ সামরিক ঘাঁটিতে ফেরার সময় তিনি বলেন, ‘আমি এখনো সংখ্যা নির্ধারণ করিনি, তবে ওদের কিছু তো দিতেই হবে। কারণ, ইউক্রেনের সুরক্ষা প্রয়োজন।’এর আগে হোয়াইট হাউস ঘোষণা দিয়েছিল, কিছু অস্ত্র সরবরাহ আপাতত স্থগিত থাকবে। তবে এখন নতুন একটি চুক্তির আওতায় ন্যাটোর সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র আবারও অস্ত্র সরবরাহে যাচ্ছে।ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম পাঠাবো এবং ইউক্রেন আমাদের শতভাগ অর্থ দেবে। এটি আমাদের জন্য ব্যবসার একটি দিকও।’
এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, নতুন প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্র পাওয়ার বিষয়ে তারা একটি বহুপক্ষীয় চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছেন।রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের আচরণ নিয়েও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। বলেন, ‘পুতিন অনেককে চমকে দিয়েছে। মুখে ভালো কথা বলে, কিন্তু রাতে আবার বোমা ফেলে।’ যদিও প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে আসার পর শুরুতে ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে দ্বিধান্বিত ছিলেন, এবার কংগ্রেসে তোলা এক প্রস্তাবে তার হাতে দেওয়া হচ্ছে ‘স্লেজহ্যামার’ ক্ষমতা।
রোববার মার্কিন কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই দলের সিনেটররা একটি বিল উত্থাপন করেন। এতে ট্রাম্পকে রাশিয়া ও তাদের মিত্র দেশগুলোর ওপর কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, ‘এই বিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে রুশ অর্থনীতি ও তাদের সহযোগী দেশগুলোর ওপর ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের সুযোগ দেবে।’ সম্ভাব্য লক্ষ্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চীন, ভারত ও ব্রাজিলের নামও উল্লেখ করা হয়।এই প্রস্তাবের প্রশংসা করে জেলেনস্কি এক্সে দেওয়া পোস্টে লেখেন, ‘এটাই সেই চাপ, যা শান্তির পথ তৈরি করতে পারে। কূটনীতিকে অর্থবহ করতেও এটি কার্যকর হবে।’
সোমবার রাতে সিনেটর গ্রাহাম ও ডেমোক্র্যাট সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথালের ন্যাটোর মহাপরিচালক মার্ক রুটের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি রুশ রাষ্ট্রীয় সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা ইউক্রেনের সহায়তায় ব্যবহারের আইনি প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের রুশ সম্পদ ইতোমধ্যে জব্দ রয়েছে।