Joy Jugantor | online newspaper

এএফপির ফ্যাক্টচেক: ৫ আগস্ট কোথায় ছিলেন পিটার হাস?

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯:১৯, ১৪ আগস্ট ২০২৫

এএফপির ফ্যাক্টচেক: ৫ আগস্ট কোথায় ছিলেন পিটার হাস?

এএফপির ফ্যাক্টচেক: ৫ আগস্ট কোথায় ছিলেন পিটার হাস?

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি ভুয়া নথি চলতি মাসের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। যাতে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয় যে, নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির সঙ্গে ৫ আগস্ট দেখা করেছেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং তিনি ওইদিন বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।এই নথি প্রচারের মাধ্যমে অভিযোগও তোলা হয় যে পিটার হাস ঢাকায় এসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ‘মার্কিন হস্তক্ষেপ’ করছেন।

তবে পিটার হাস গত ৫ আগস্ট ওয়াশিংটনে ছিলেন বলে জানান ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা।গত ৬ আগস্ট ভোরে ফেসবুকে শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দোলনচাঁপা ব্যবহারকারী যাত্রীদের একটি ভুয়া তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথম ছড়ানো হয়। এই তালিকায় ৫ আগস্ট তারিখটি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে লেখা আছে সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নাম ও কোন ফ্লাইটে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন তার তথ্য।

পিটার হাস ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন।পিটার ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়েছেন এমন দাবি করে Md Shahid Uddin Khan নামে একটি প্রোফাইল থেকে বাংলা ভাষায় লেখা হয়, ‘পিটার হাস আজ ০৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা ১৯:১০ মিনিটের সময় এমিরেটস ইকে ৫৮৩ ফ্লাইটে করে যাত্রা করার পূর্বে বাংলাদেশেই ছিলো। অথচ এনসিপি বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়েছে যে, পিটার হাস আমেরিকায় আছে; কি চরম মিথ্যাচার ও ভয়ংকর অবস্থা আমাদের গণমাধ্যমের, ছি!!।’ 

সর্বপ্রথম একটি টিভি চ্যানেলে দাবি করা হয়, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে পিটার হাসের সঙ্গে কক্সবাজারে দেখা করতে গেছেন এনসিপির নেতারা। এরপর ফেসবুক এবং এক্সের আরও অনেক অ্যাকাউন্টে একই রকম দাবি করা হয়।এনসিপি নেতাদের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে পিটার হাসের সঙ্গে কথিত বৈঠক নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার কথাও বলেন অনেকে।

কিন্তু পিটার হাস ওই সময় ওয়াশিংটনে ছিলেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তজা ফেসবুকে এক বিবৃতি দিয়ে ৫ আগস্টই জানান, পিটার হাস ওয়াশিংটনে রয়েছেন।পিটার হাস বর্তমানে এক্সালারেট এনার্জি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের এপ্রিলের পর একবারের জন্যও বাংলাদেশে যাননি পিটার।এছাড়া এনসিপি নেতা নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী বাংলা সংবাদমাধ্যম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের যে কথা বলা হচ্ছে সেটি গুজব এবং ভিত্তিহীন।

ভুয়া যাত্রী তালিকা

শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম রাগিব সামাদ এএফপিকে বলেছেন, যে ভিআইপি যাত্রীদের তালিকা ছড়ানো হয়েছে এটি ‘সম্পূর্ণ ভুয়া’।কাগজটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এটি জাল ও নকল।যে বা যারা এটি বানিয়েছে, তারা কাগজের শুরুতেই ভুল লিখেছে। তারা অফিসিয়াল নাম ‘বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের’ জায়গায় লিখেছে ‘বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ’। অর্থাৎ ‘বেসামরিকের’ জায়গায় লিখেছে ‘বেসরকারি’।কাগজে শাহরিয়ার চৌধুরী নামে একজনের নাম দেওয়া হয়েছে। যাকে উল্লেখ করা হয়েছে বিমানবন্দরের সহকারী পরিচালক হিসেবে।

কিন্তু বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের তালিকায় এমন কারও নামই নেই।এছাড়া ওই কাগজে বলা হয় এমিরেটসের ফ্লাইট ৫৮৩ গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে গেছে। কিন্তু ওইদিন এই ফ্লাইটটি সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করে।এছাড়া অন্যান্য যেসব ফ্লাইটের তথ্য ছিল সেগুলোতেও ভুল পাওয়া গেছে।

এমনকি এতে উল্লেখিত যাত্রীদের নামের বানান ভুল করা হয়েছে। পদবীতেও উল্লেখ করা হয়েছে ভুল তথ্য।উদাহরণ হিসেবে, ওই যাত্রীর তালিকায় মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরী নামে একজনকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ২০২২ সালের ২২ মে তাকে আরেক মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়।