Joy Jugantor | online newspaper

তাড়া‌শে নবান্নের উষ্ণ আহ্বান;

শীতের পিঠা-পুলিতে গ্রাম-বাংলার অমলিন ঐতিহ্য

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

শীতের পিঠা-পুলিতে গ্রাম-বাংলার অমলিন ঐতিহ্য

তাড়া‌শে নবান্নের উষ্ণ আহ্বান; শীতের পিঠা-পুলিতে গ্রাম-বাংলার অমলিন ঐতিহ্য

সিরাজগঞ্জের তাড়া‌শে নবান্নের উষ্ণ আহ্বান; শীতের পিঠা-পুলিতে গ্রাম-বাংলার অমলিন ঐতিহ্য। পৌষ মাস মা‌নে পিঠা-পুলি, পৌষ মাস মানেই প্রকৃতির এক নিবিড় আহ্বান, নবান্নের পরিপূর্ণতা আসে হেমন্তের শেষে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কবিতায় এই ঋতুকে এভাবেই বরণ করে নিয়েছেন— "পৌষ তাদের ডাক দিয়েছে, আয় রে চলে, আয় আয় আয়/ডালা যে তার ভরেছে আজ পাকা ফসলে, মরি হায় হায় হায়/হাওয়ার নেশায় উঠল মেতে দিগ? বধুয়া ধানের ক্ষেতে রোদের সেনা ছড়িয়ে পড়ে মাটির আঁচলে।"অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে মাঠের সোনালী ধান ঘরে ওঠার পর গ্রামীণ জীবনে যে উৎসবের আমেজ শুরু হয়, তার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে পিঠা-পুলি। শীতের হিমেল হাওয়ায় এই পিঠা খাওয়ার ধুম গ্রাম-বাংলার এক চিরায়ত ঐতিহ্য।শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে পিঠা তৈরির ব্যস্ততা। সিরাজগঞ্জের পথে-ঘাটে দুধ পিঠার সুবাস অতীতে পিঠা তৈরির আয়োজন সীমাবদ্ধ ছিল কেবলই গৃহস্থের অন্দরমহলে।

দাদি-নানি, মা-খালারা পরম মমতায় তৈরি করতেন বিভিন্ন ধরনের রসালো পিঠা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ঐতিহ্য এখন অর্থনীতির মূলস্রোতে মিশে গেছে। নতুন ধানের চালের গুঁড়া, দুধ এবং খেজুরের পাটালি গুড়ের সমন্বয়ে তৈরি হয় নানা স্বাদের উপাদেয় পিঠা। নারকেলের কোড়া অনেক পিঠারই অপরিহার্য উপাদান। এই ঐতিহ্যবাহী খাবারটি বাঙালির হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত; এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার, যিনি পিঠা পছন্দ করেন না। এই সময় নাইওর আসে ঝিয়ারি, আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়া হয় উষ্ণ দাওয়াত। পিঠা নিত্যদিনের খাদ্য না হলেও, শীতকালে প্রতিটি ঘরে ঘরে এর কদর বাড়ে বহুগুণ। বর্তমানে শুধু বাড়িতে নয়, গ্রাম-বাংলার হাটবাজারসহ বিভিন্ন জনপদে প্রতিদিন সকাল-বিকাল সারিবদ্ধভাবে পিঠা বিক্রি হতে দেখা যায়। এই পিঠা বিক্রি করে সহস্রাধিক মানুষ আজ তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।

শীতকে উপেক্ষা করে এই মানুষগুলোই গ্রাম-বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য পিঠাকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।পিঠার চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর মূল উপকরণগুলোর দামও বেড়েছে। চালের গুঁড়া, খেজুরের গুড় এবং নারকেলের দামও এখন ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে উপকরণগুলোর বাজারদর (প্রতি কেজি/পিস) খেজুরের গুড় (মান অনুযায়ী)২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দুধ ৮০ থেকে ১০০ টাকা আতব চাল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা নারিকেল (প্রতি পিস) ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বি‌ক্রি হ‌চ্ছে।

পিঠা বিক্রেতা হালিমা খাতুন জানান, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে  বিভিন্ন বাসা থেকে প্রতিদিন পিঠা কেনার জন্য দোকানে ভিড় জমে। গত কয়েকদিনে পিঠা কেনার চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা মতো পিঠা সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছি। প্রতি পিস পিঠা আকার ভেদে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে বিক্রি করি। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর রহমতে আমাদের আয়ের পরিমাণও বেড়ে গেছে।শীতকে উপেক্ষা করে শ্বশুরবাড়ির পিঠা খে‌তে যাওয়া প্রসঙ্গে তাড়াশ উপ‌জেলার চৌড়া গ্রা‌মের আকাশ জানান, "শ্বশুরবাড়ির দাওয়াত, তাই শীতে কষ্ট হলেও সব কাজকর্ম ফেলে পিঠা খেতে এসেছি। গ্রামীণ ঐতিহ্য, অর্থনৈতিক সুযোগ এবং সামাজিক সম্পর্কের এই মেলবন্ধন সমগ্র গ্রাম-বাংলায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।"ঐতিহ্যবাহী এই পিঠা উৎসব একদিকে যেমন সংস্কৃতির ধারক, অন্যদিকে তেমনি হাজারো মানুষের জীবিকার উৎস।