Joy Jugantor | online newspaper

দিনাজপুুরের ফুলবাড়ীতে বর্ণিল সাজে সেজেছে

খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের পল্লীগুলো

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৯:৫৩, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের পল্লীগুলো

দিনাজপুুরের ফুলবাড়ীতে বর্ণিল সাজে সেজেছে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের পল্লীগুলো

খ্রিষ্ট সম্প্রদায়ের বড়দিন ঘিরে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার খ্রিস্টান পল্লীগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি। খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের বাসাবাড়ীসহ গির্জাগুলো সাজানো হচ্ছে নানা রঙের আলপনায়।বড়দিন উপলক্ষে খিস্টানপল্লীতে চলছে উৎসবের আমেজ। পাড়ায় পাড়ায় তৈরি করা হচ্ছে গোশালা। রং বেরঙের কাগজ দিয়ে সাজানো হচ্ছে গির্জাগুলো। উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়নে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাড়া রয়েছে ৭২টি। এসব পাড়ায় হিন্দু (সনাতন) ও খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের বসবাস।

এসব পাড়া-মহাল্লায় ক্যাথলিক, লুথ্যারান ও ব্যাপ্টিস্ট অনুসারী সাড়ে ৬ হাজার জন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর ছোটবড় ৬৩টি গির্জা রয়েছে। এসব গির্জায় বড়দিন উদযাপনের জন্য সরকারিভাবে ৫০০ কেজি করে ৩১ দশমিক ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সরেজমিনে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া নৃ-গোষ্ঠীপাড়া গিয়ে দেখা মেলে খ্রিস্টধর্মাবলম্বী ক্যাথলিক মতবাদের গৃহবধূ ভেলি বাস্কের (৩২)। নিজ ঘরের মাটির ঘরের দেওয়াল লেপার কাজে ব্যস্ত তিনি। তিনি জানান, যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে ঘরবাড়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ দেওয়ালে দেওয়ালে আলপনা আঁকিয়ে দৃষ্টিনন্দন করছেন।

ফুলবাড়ীতে বড়দিন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের গ্রামগুলো। ছবি: ইত্তেফাক

একই গ্রামের গৃহবধূ সজিনা সরেন বলেন, শুভ বড়দিন উপলক্ষে ঘরবাড়ী পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি অতীতের অন্ধকারকে মুছে দিয়ে আগামীর আলো দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় ঘরবাড়ীকে সাজানো হচ্ছে বিভিন্ন কারুকার্যে। এগুলো সবকিছুই করছেন তারা নিজেরাই।একই গ্রামের শিক্ষার্থী আন্তনিকা হেম্ব্রম বলেন, শুভ বড়দিনের উৎসবকে ঘিরে বাড়ীর নারীদের যেনো কর্মব্যস্ততার শেষ নেই। বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদেরকেও ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বাড়ীর কাজে। সহযোগিতা করতে হচ্ছে পিতা-মাতাকে। একই গ্রামের বসতবাড়ির মাটিরঘরে লেপামোছার পর দেওয়ালে আলপনা অঙ্কনের কাজে ব্যস্ত খ্রিস্টধর্মাবলম্বী ব্যাপটিস্ট মতবাদের গৃহবধূ লিমা মুর্মু (১৭)।

একইভাবে উপজেলার কাজিহাল ইউনিয়নের পারইল কুদবীর ক্যাথলিক মিশনপাড়া গ্রামের গিয়ে দেখা যায় শেষ সময়ে ঘরবাড়ীতে বিভিন্ন রঙে রাঙ্গিয়ে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন গৃহবধূরা।গ্রামের ক্যাথলিক মতবাদের গৃহবধূ রেজিনা টুডু ও শিক্ষার্থী স্মৃতি বেসরা বলেন, বছর ঘুরে শুভ বড়দিন আসে। বছরজুড়ে ঈশ্বর যিশুর কৃপা লাভের আশায় ঘরবাড়ী পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ ঘরবাড়ীতে আলপনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা চেষ্টা করা হয়। এতে যদি যিশুর কৃপাল লাভ করা যায় এটাই প্রত্যাশা নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে চলছে এসব কাজ। শুধু তারাই নয়, গোটা গ্রামই একই কাজে ব্যস্ত সময় পারছেন পরিবারের নারীরা। আর পুরুষরা করছেন বড়দিনের খরচা পাতির আয়োজন।   

পারইল কুদবীর ক্যাথলিক চার্চ মিশনের সিস্টার ফ্লোরা পিউরিফিকেশন বলেন, ২৫ ডিসেম্বর ঈশ্বর যিশুখ্রিস্ট জন্মলাভ করেন। এজন্য দিনটিকে শুভ বড়দিন হিসেবে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা পালন করেন। বড়দিন শুধু বাণিজ্যিক উৎসব নয়, চাই আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি। শুভ বড়দিন উদযাপন কল্পে আজ ২৪ ডিসেম্বর (বুধবার) রাত ৮টায় পারইল কুদবীর ক্যাথলিক চার্চ মিশনের গির্জায় প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুভ বড়দিনের কার্যক্রম শুরু হবে। পরদিন ২৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় প্রার্থনা এবং প্রার্থনার পর ধর্মসভা অনুষ্ঠিত হবে। গির্জায় প্রার্থনা ও ধর্মসভায় পরিচালনা করবেন মিশনের ফাদার জসিম ফিলিপ মুর্মু।উপজেলা দলিত ও আদিবাসী প্লাটফর্মের সাধারণ সম্পাদক ক্যাথলিক মতাদর্শের অনুসারী কমল কিস্কু বলেন, পূর্বের মতোই এ বছরও খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা আনন্দময় পরিবেশে শুভ বড়দিন পালন করবেন। খ্রিস্টান পল্লীগুলো ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন।উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের শুভ বড়দিন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬৩ টি গির্জার প্রতিটিতে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।