Joy Jugantor | online newspaper

পাথর খেকোদের থাবায় সীমান্ত নদ রূপসী ডাহুক হুমকির মুখে

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০২:২৬, ২৭ নভেম্বর ২০২৩

পাথর খেকোদের থাবায় সীমান্ত নদ রূপসী ডাহুক হুমকির মুখে

পাথর খেকোদের থাবায় সীমান্ত নদ রূপসী ডাহুক হুমকির মুখে

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সীমান্তবর্তী ডাহুক নদের গতিপথ বন্ধ করে পাথর উত্তোলন করছে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ডাহুকের দুই পাড়ে বনবিভাগ ও সরকারি জমি খনন করেও পাথর উত্তোলন করছে তারা। এতে নদের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রাণ-প্রকৃতি হারিয়ে হুমকির মুখে রূপসী ডাহুক।

উৎপত্তি ভারতে হলেও বাংলাদেশের ১৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদটি প্রবাহিত হয়ে আবারও ভারতে প্রবেশ করেছে। ডাহুকের পশ্চিমে শালবাহান ইউনিয়ন এবং পূর্বদিকে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের হাজার হাজার একর কৃষি জমি রয়েছে। আরও রয়েছে চা বাগান, আমসহ নানা ফলের বাগান।

স্থানীয়রা বলছেন, এসব চাষাবাদে ডাহুকের বিশাল অবদান রয়েছে। প্রতিবছর বর্ষাকালে পলি মিশ্রিত পানি ছড়িয়ে দেয় এই নদ। শুষ্ক মৌসুমে ডাহুকের প্রবাহিত পানি চাষাবাদের জমিকে উর্বর করে। সেই সঙ্গে ডাহুকে রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ। সারা বছর ডাহুকে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ টন মাছ আহরণ করে দুই ইউনিয়নের শতাধিক জেলে। যা এই এলাকার হাজার হাজার মানুষের আমিষের চাহিদা মেটায়।

কিন্তু বর্তমানে পাথর উত্তোলনের ফলে নদের গতিপথ বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। আসছে শুষ্ক মৌসুমে এই নদ মরে যাবার আশঙ্কায় রয়েছে। যত্রতত্র পাথর উত্তোলনের ফলে ডাহুকের সীমানাও হারিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় অন্তত একশ’ জন পাথর খেকো ব্যবসায়ী নদটির যেখানে সেখানে খনন করে ডুবুরিদের মাধ্যমে পাথর উত্তোলন করছে। ফলে নদের কোথাও কোথাও বালির ঢিবি হয়ে যাচ্ছে, আবার কোথাও বিশাল গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। এতে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহও আটকে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নদের পানি বিকল্প দিকে প্রবাহিত হওয়ার ফলে দুই দিকের পাড়ও ভাঙছে। এর ফলে কমে যাচ্ছে কৃষি জমিও।

জানা গেছে, পাথর উত্তোলনে স্থানীয় একজন চেয়ারম্যান নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বেই একটি সিন্ডিকেট আইন অমান্য করে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছেন। তিনি নিজেও বালাবাড়ি ফরেস্ট এলাকায় ডাহুক নদের গতিপথ বন্ধ করে পাথর উত্তোলন করছেন। এছাড়া সাবেক এক চেয়ারম্যানও পাথর তুলছেন। নাম গোপন রাখার শর্তে একাধিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ী জানান, লোহাকাচি গ্রামের জয়নাল আবেদিনের ছেলে আব্দুল জলিলের সিন্ডিকেট প্রশাসনকে ম্যানেজ করার নামে প্রত্যেক পাথর সাইট থেকে সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা নিচ্ছেন। এই টাকা সিন্ডিকেটের বিভিন্ন সদস্যের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল জলিল বলেন, আমি কোনো চাঁদা নেই না। মালিকানা জমিতে পাথর উত্তোলন করছি।

অন্য সব ব্যবসায়ীরাই একই কথা বললেও স্থানীয়দের দাবি, প্রবাহমান পানি আটকে নদী শাসন করে ব্যবসায়ীরা পাথর উত্তোলন করছেন। ফলে পানির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে মালিকানা জমিতে এখন ডাহুক প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জমির মালিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

নাওয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, ডাহুক শেষ। কেউ কিছু বুঝতেছে না। নিজেদের স্বার্থে নদটিকে হত্যা করে পাথর উত্তোলন করছে। আমার ব্যক্তিগত কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। এখানে কয়েকশ জেলে আজ বেকার হয়ে গেছে। তিনি জানান, পুলিশ আসলে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। চলে গেলে আবার উত্তোলন শুরু হয়।

প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক বেসরকারি সংগঠন কারিগরের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ জানান, পাথর খেকোরা নদী হত্যার উৎসব শুরু করেছে। অচিরেই অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে ডাহুক চিরতরে হারিয়ে যাবে।

পাথর শ্রমিকরা বলছেন, ডাহুকে হাজার হাজার শ্রমিক পাথর উত্তোলন করে নিজেদের সংসার চালাচ্ছেন। অন্যদিকে, দেশের রাস্তাঘাট, ভবন নির্মাণে কাজে লাগছে এই পাথর। তবে অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে ডাহুকের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পাথর শ্রমিক আনারুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীরা আমাদের যেভাবে পাথর উত্তোলন করতে বলে সেভাবেই তুলি।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, বারবার পুলিশ অভিযানে যায়। তখন পাথর তোলা বন্ধ করে পালিয়ে যায়। অনেক ট্রলি আটক করা হয়েছে। একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। আমরা তৎপর রয়েছি।

একই কথা জানিয়েছেন তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।