Joy Jugantor | online newspaper

শক্তি ফুরালেও মনোবল অটুট, মেয়েদের প্রশংসায় বাটলার

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৭:১০, ১২ আগস্ট ২০২৫

শক্তি ফুরালেও মনোবল অটুট, মেয়েদের প্রশংসায় বাটলার

শক্তি ফুরালেও মনোবল অটুট, মেয়েদের প্রশংসায় বাটলার

লক্ষ্য ছিল সিনিয়র দলের মতো বয়সভিত্তিক দল নিয়েও এএফসি নারী অনূর্ধ্ব ২০ এশিয়ান কাপের মূল পর্বের টিকিট কাটার। সেই মিশনে সফল হয়েছেন পিটার বাটলার। বাছাইয়ে খেলা তিন ম্যাচের মধ্যে প্রথম দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দাপুটে ফুটবল খেললেও শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছেন বাস্তবতার। শক্তিশালী দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে হেরেছে ৬-১ গোলের ব্যবধানে। 

সিনিয়র কিংবা বয়সভিত্তিক কোনো দলই গেল কয়েক বছরে এত বড় ব্যবধানে পরাজয়ের মুখোমুখি হয়নি। বাটলারের অধীনে তো প্রশ্নই ওঠে না। তাই দলের এমন হারে খানিকটা অবাক হয়েছে সবাই। যদিও এতে সমস্যা হয়নি, আফঈদারা পেয়েছেন থাইল্যান্ডের মূল পর্বের টিকিট। আর মেয়েদের এমন অর্জনে গর্বিত ইংলিশ কোচ পিটার বাটলার। তবে এখানেই থামতে চাইছেন না তিনি এই দল নিয়ে তার স্বপ্ন আরও অনেক বড়।

দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে হারের পর বাফুফেতে নেমে এসেছিল শীতলতা। কোচ কিংবা খেলোয়াড় কারোরই কোনো বার্তা পাওয়া যায়নি ম্যাচের পর। শুধু জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, সোমবার রাতে তারা ফিরছেন। তবে গতকাল লাওস থেকে এক ভিডিও বার্তায় নিজের প্রতিক্রিয়া জানান দলের হেড কোচ পিটার জেমস বাটলার। সেখানে তিনি জানান জ্বর, চোট নানান জটিলতার পরও লাওসে দলের পারফরম্যান্সে গর্বিত তিনি। 


ভিডিওতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে বাটলার বলেন, 'আমার মনে হয়, পেছনে ফিরে সবকিছু প্রেক্ষাপটে রেখে দেখলে আমি সত্যিই মেয়েদের নিয়ে ভীষণ গর্বিত। যদিও শেষ পর্যন্ত আমরা দ্বিতীয়ার্ধে ভেঙে পড়েছিলাম। আমি বিরতির সময়ই বুঝেছিলাম, খেলোয়াড়রা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, তাদের শক্তি ফুরিয়ে গেছে। এটা স্বাভাবিক, কেননা এই সফরে শুরু থেকেই আমাদের কয়েকজন খেলোয়াড় জ্বরে আক্রান্ত ছিল, পাশাপাশি চোটের সমস্যাও ছিল, আরও নানা রকম ঝামেলা ছিল। কিন্তু আমি সত্যিই তাদের ধৈর্য ও মানসিকতার প্রশংসা করি যেভাবে তারা এসবের ওপরে উঠে লড়াই করেছে।'

ইংলিশ কোচ এক ম্যাচ দিয়ে মেয়েদের সামর্থ্যের বিচার করতে চান না। নিজেদের মিশনে সফল হওয়াতেই তিনি খুশি। তিনি বলেন, 'যোগ্যতা অর্জন শুধু এক ম্যাচের ওপর নির্ভর করে না, এতে লাগে তিন বা চারটি ম্যাচ। তাই আমার দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা আসলে আমাদের মূল লক্ষ্য পূরণ করেছি। যদিও শেষটা সুখকর করতে পারিনি। তবে রোববার ছিল দারুণ এক শেখার সুযোগ। বলা যায় বিশ্বের অন্যতম সেরা অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দলের বিপক্ষে খেলেছি। অসাধারণ এক দল, যারা দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের সত্যিই কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছিল। কিন্তু প্রথমার্ধে, বিরতিতে যখন ১-১ সমতা, আমরা সমান
তালে লড়েছি।'

এ সময় বাটলার জানান যে, তারা চাইলে আক্রমণ না করে ডিফেন্স করে খেলা জমিয়ে রাখতে পারতেন। তবে তিনি সেই পথে হাঁটেনি। চেয়েছিল চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে। তিনি বলেন, 'আমরা চাইলেই দ্বিতীয় হাফে পিছিয়ে গিয়ে রক্ষণ গড়ে তুলতে পারতাম, বল সামনে ঠেলে দিয়ে স্রেফ মরিয়া রক্ষণভাগে ম্যাচ শেষ করতে পারতাম। কিন্তু আমি সেই পন্থায় বিশ্বাসী নই, আমি সেভাবে কাজ করি না। সব মিলিয়ে আমি আনন্দিত এবং মেয়েদের নিয়ে গর্বিত। জীবন অনেকটা সাপলুডুর মতো-যা ওপরে ওঠে, অনেক সময় নিচেও নেমে আসে।'

এ দিকে গেল দুই বছরে বলা যায়, নারী দলের হয়ে বাটলার নিজের মিশনে সফল হয়েছেন। গেল বছর নেপালে সিনিয়র দলের সাফ জয়। তারপর গেল মাসে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলকে নিয়ে এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা পাওয়ার পর একই মাসে অনূর্ধ্ব ২০ দল নিয়ে ঘরের মাঠে সাফ জেতা। আর তারপর এই দল নিয়েও বয়সভিত্তিক এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। মাঝে আবার ফিফা র‍্যাংকিংয়েও বড় লাফ। সব মিলিয়ে বাটলার যেন সফলতার ভেলায় ভাসছেন। 

নিজেদের এই উন্নতির যাত্রা নিয়ে নারী দলের কোচ বলেন, 'আমরা এই সাফল্য অর্জন করেছি দীর্ঘ পথ পেরিয়ে। সবকিছু শুরু হয়েছিল গত বছর চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে, তারপর সাফে গিয়েছিলাম। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, আমাদের ফিফা র‍্যাংকিংয়ের উন্নতি এসেছে প্রতিযোগিতামূলক ও আরও স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ তৈরি করার ক্ষমতার কারণে।'

তবে এখনই তিনি থেমে থাকতে চান না। তার মধ্যে রয়েছে আরও উন্নতির আকাঙ্ক্ষা। এ নিয়ে বলেন, 'মেয়েরা এখন মাঠে অসাধারণ পারফরম্যান্স করছে, আর তারা প্রাপ্য সম্মান, স্বীকৃতি ও প্রশংসা অর্জন করেছে। তবে আমি সচেতন যে, এই উন্নতি মুহূর্তেই থেমে যেতে পারে। যেমন দ্রুত ওপরে ওঠা যায়, তেমন দ্রুত নেমেও যাওয়া যায়। তাই বাস্তববাদী থেকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, কাজ করে যেতে হবে, মনোযোগী হতে হবে। যাতে ফিফা র‍্যাংকিং আরও উন্নত করে ১০০-এর নিচে নামানো যায়।'