Joy Jugantor | online newspaper

 বগুড়ার শেরপুরে জমেনি ৫শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কেল্লাপোষি মেলা

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ২৬ মে ২০২৫

আপডেট: ২০:১৬, ২৬ মে ২০২৫

 বগুড়ার শেরপুরে জমেনি ৫শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কেল্লাপোষি মেলা

বগুড়ার শেরপুরে জমেনি ৫শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কেল্লাপোষি মেলা

আব্দুল ওয়াদুদ :  বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কেল্লাপোষি মেলা এ বছর জমে ওঠেনি। ৫শ বছরের পুরনো এই মেলাটি প্রতি বছর জৈষ্ঠের দ্বিতীয় রবিবার অনুষ্ঠিত হয় এবং বৃহৎ আকৃতির মাছ, খাসির হাটের, মাংস ও মসলার জন্য বিখ্যাত। তবে এবার মেলায় বড় মাছ উঠলেও ক্রেতার অভাবে বিক্রি কম হচ্ছে, ফলে দামও কম। মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল জামাইদের জন্য খাসির হাট। কিন্তু এবার সেই হাটেও ভাটা পড়েছে দেখা মেলেনি খাসির হাটের। মেলায় মাত্র দুটি মাংসের দোকান দেখা গেছে, যা আগের বছরের তুলনায় অনেক কম।মেলায় আগত মাছ বিক্রেতা মোহাদেব, শ্রী বাধন চন্দ্র, শ্রী শুব্রত বলেন, মেলায় মানুষ কম ক্রেতাও কম।

জীবন বাঁচাতে যে দামে ক্রয় করেছি শুধু চালান তোলার চেষ্টা করছি। এবার ২০ কেজি ওজনের ব্লাটকাপ মাত্র ৫শ টাকা, ১৫ কেজির কাতলা ৮শ টাকা, ৯ কেজির রুই মাছ ৫শ টাকা, ১০ কেজি ওজনের  ব্রিকেট মাছ ৩শ টাকাসহ বিভিন্ন বড় মাছ এনেছি। কিন্তু ক্রেতা নেই বললেই চলে। তাই মাছের দামও কমে গেছে।স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, আগে এই মেলায় বড় মাছ ও খাসি কিনতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা আসতেন। কিন্তু এবার ক্রেতা কম, ফলে মাছ ও মাংস বিক্রি হচ্ছে না। মেলায় আগত দর্শনার্থী সাইফুল, তাজমুল, জাকারিয়া বাকি বলেন, মেলায় জামাইদের নিযে আয়োজন কিন্তু সবচেয় বড় কথা খাসির হাট নেই।

ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলতে চলছে। তেমন ভিড় নেই। বগুড়ার এই ঐতিহ্যবাহী কেল্লাপোষি মেলা প্রতি বছর হাজারো মানুষকে আকৃষ্ট করলেও এবার ক্রেতা সংকটে মেলা জমে ওঠেনি।মেলার আয়োজক কমিটি মতি জানান, সামনে ঈদসহ নানা কারণে এবার ক্রেতা কম। আশা করছি আগামী বছর পরিস্থিতি ভালো হবে। শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এস এম মঈনুদ্দিন বলেন, মেলায় কোনো অশ্লীল যাত্রা, জুয়া বা অনৈতিক কার্যক্রম চলছে না। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে।কথিত আছে, ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এ মেলা হয়ে আসছে: জানা যায়, বৈরাগ নগরের বাদশা সেকেন্দারের একজন ঔরসজাত এবং একজন দত্তক ছেলে ছিলেন। ঔরসজাত ছেলের নাম ছিল গাজী মিয়া আর দত্তক ছেলের নাম কালু মিয়া।

গাজী মিয়া দেখতে খুবই সুদর্শন ছিলেন। তারা রাজ্যের মায়া ত্যাগ করে ফকির সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে ঘুরতে ঘুরতে ব্রাহ্মণ নগরে আসেন। সেখানে ব্রাহ্মণ রাজমুকুটের একমাত্র কন্যা চম্পা গাজীকে দেখে মুগ্ধ হন। একপর্যায়ে তারা দু’জন দু’জনকে ভালবেসে ফেলেন। পালিত ভাই কালু মিয়া বিষয়টি জানতে পেরে গাজীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মুকুট রাজার নিকট যান। মুকুট রাজা ফকিরবেশী যুবকের এরূপ স্পর্ধা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বন্দী করেন। এতে গাজী মিয়া কঠিন আঘাত পান।

তিনি মুকুট রাজার নিকট থেকে ভাই কালু মিয়াকে উদ্ধারের জন্য কেল্লাপোষী নামক একটি দূর্গ নির্মাণ করেন। পরে রাজার সঙ্গে যুদ্ধ করে ভাইকে উদ্ধার এবং তার কন্যাকে বিয়ে করেন। ওই সময় গাজীর বিয়ে উপলক্ষে কেল্লাপোশী দূর্গে নিশান উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী আনন্দ উৎসব করা হয়। গাজী মিয়ার সেই বিজয়কে ধরে রাখার জন্যই কেল্লাপোশীর মেলার আয়োজন করা হয়। আর তিথি অনুযায়ি ওই বিয়ের দিনটি ছিল জৈষ্ঠের দ্বিতীয় রবিবার। সেই থেকে প্রতি বছর তিন দিনব্যাপি এ জামাইবরণ মেলা বসে।