Joy Jugantor | online newspaper

বায়ো-মলিকুলার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করে স্বাস্থ্যখাতে পরিবর্তন আনছে টিএমএসএস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ১৩ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১৯:৫৪, ১৩ জুলাই ২০২৫

বায়ো-মলিকুলার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করে স্বাস্থ্যখাতে পরিবর্তন আনছে টিএমএসএস

দেশে প্রথমবারের মতো জেনেটিক ও মলিকুলার ক্যান্সার শনাক্তকরণে পূর্ণাঙ্গ ল্যাব চালু করল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টিএমএসএস। গতকাল আজ রবিবার (১৩ জুলাই)বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিএমএসএস কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানায়।

এই বায়ো-মলিকুলার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করে স্বাস্থ্যখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনছে টিএমএসএস।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বগুড়া সদরের ঠেঙ্গমারা এলাকায় এক শয্যার টিএমএস এসমেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালের ১৮তলায় স্থাপিত অত্যাধুনিক এই ল্যাবটিতে ব্যবহার হচ্ছে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং(এনজিএস) প্রযুক্তি। যা ক্যান্সার নির্ণয়ে বিশ্বের সর্বাধুনিক জিন ভিত্তিক প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচিত। এই ল্যাব প্রতিষ্ঠায় স্বাস্থ্যখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। এটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

যা ক্যান্সার রোগ শনাক্ত ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। এর ফলে বিদেশে গিয়ে ব্যয়বহুল জেনেটিক টেস্ট করার প্রয়োজন অনেকাংশেই কমে আসবে।বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিএমএসএস প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম, টিএমএসএস উপ-নির্বাহী পরিচালক ডা. মোঃ মতিউর রহমান, চেয়ারম্যান ও সিইও মিহেলথ অমিক্স অস্ট্রেলিয়া, জিং-টেকনোলজিস প্রফেসর ডঃ পলমেইনওয়ারিং, এমডি জিং-টেকনোলজিস মোসাদ্দেক শহীদ, মান নিশ্চিতকরণ বিশেষজ্ঞ এবং পরামর্শদাতা, মেডিকেল ল্যাব আইএসও পরিদর্শক মিঃ প্যাট্রিক মাতেটা, আইএসও স্ট্যান্ডার্ড রাইটার এবং মেডিকেল ল্যাব আইএসও পরিদর্শক মিসেস শিলা উডকক, সহকারী অধ্যাপক এবং কিউসি ব্যবস্থাপক টিবিএল ড.ফরহাদ আহমেদসহ বিভাগীয় প্রধান ও কর্মকর্তাবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে টিএমএসএস প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড.হোসনে আরা বেগম বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১.৬ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ১০-১৫ শতাংশ ক্যান্সার জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে স্তন, ডিম্বাশয়, অন্ত্র, থাইরয়েড ও রক্তের ক্যান্সারের সঙ্গে প্রভৃতি জিনের পরিবর্তন জড়িত। এই ল্যাবে ওইসব জেনেটিক মিউটেশন সনাক্ত করে চিকিৎসকেরা রোগীর জন্য সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর চিকিৎসা নির্ধারণ করে থাকেন। টিএমএসএসের ল্যাবে ব্যবহৃত হচ্ছে রিয়েল-টাইম পিসিআর, জেনেটিক অ্যানালাইজার, ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি এবং লিকুইড বায়োপসিসহ অত্যাধুনিক পরীক্ষণ প্রযুক্তি।

সর্বোপরি, উচ্চমানের এনজিএস বা নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্যান্সার সনাক্তকরণ এখন আরও দ্রুত, নির্ভুল ও সাশ্রয়ী।এই ল্যাবটি আন্তর্জাতিক মানের হলেও পরীক্ষাগুলোর খরচ বিদেশি ল্যাবের তুলনায় অনেক কম। ভবিষ্যতে আরও কম মূল্যে এসব পরীক্ষা সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে।টিএমএসএস বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জনসাধারণের জন্য সুলভ মূল্যে অত্যাধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০২২ সাল থেকে বগুড়ায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্টসুপার স্পেশালাইজড ক্যান্সার সেন্টার পরিচালনা করছে। এটি একটি কমপ্রিহেনসিভ ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার। যেখানে রয়েছে ক্যান্সার স্ক্রিনিং,সঠিক রোগ নির্ণয় এবং সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিও থেরাপিসহ আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহ।

রোগ নির্ণয়ের জন্য এখানে সিটি স্ক্যান,এম আর আই, হিস্টোপ্যাথলজি, ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি, ইমেজ-গাইডেড এফএনএসি ও কোর বায়োপসিসহ প্রায় সকল প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক পদ্ধতির ব্যবস্থা রয়েছে।দেশব্যাপী বহুবিধ চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন- টিএমএসএস মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং কলেজ, কমিউনিটি প্যারামেডিক ইন্সটিটিউট,মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল, বিভিন্ন হেলথ টেকনোলজি ইন্সটিটিউট উল্লেখযোগ্যভাবে সফলতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ৮ টি হাসপাতাল ও সেন্টার, ১১টি চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ১৩০টি’র বেশি রুরালসাব-সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে। যা দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এই ল্যাবে ১৯২টির বেশি জটিল জেনেটিক ক্যান্সার পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ছিল স্তন ক্যান্সার, লিউকেমিয়া, থাইরয়েড ক্যান্সার, লাং ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সার। এই ল্যাবকে ভবিষ্যতে গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে জিনতাত্ত্বিক ভিত্তিতে নতুন ওষুধ ও থেরাপি উদ্ভাবনের কাজ হবে।