Joy Jugantor | online newspaper

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে নবান্ন উৎসব

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে নবান্ন উৎসব

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে নবান্ন উৎসব

সিরাজগঞ্জে নবান্নের ঐতিহ্যবাহী উৎসব আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে। আগের মতো কৃষকের উঠোন জুড়ে ধান মাড়াইয়ের ব্যস্ততা নেই, আর ঢেঁকির তালে মুখর হয় না গাঁয়ের বধূদের নবান্নের গীত। নবান্ন এখন কেবল স্মৃতির এক দীর্ঘশ্বাস।সিরাজগঞ্জে আশি ও নব্বইয়ের দশকে আমন ধানের সোনালি ঢেউ খেলত। সাদা দিঘা, সরসরিয়া, লাউজাল, মাটিয়াগড়লের মতো দেশি ধান কাটার মধ্য দিয়েই শুরু হতো নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতি। কৃষকরা সারা রাত জেগে গরু দিয়ে ধান মাড়াই করতেন, আর নতুন ধানের প্রথম অংশ বাড়ির গিন্নি তুলে নিতেন পিঠা-পায়েসের জন্য।নবান্ন তখন শুধু একটি দিন ছিল না, বরং পৌষ মাস পর্যন্ত বিস্তৃত আনন্দযজ্ঞ। ঘরে ঘরে নতুন খেজুরের রস মেশানো দুধের পিঠা, ভাপা, পাকান, কুশলি ও পাটিসাপটা তৈরি হতো। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই কলাপাতা বিছিয়ে একসঙ্গে বসে খাবার খেতেন। দিনের আলোয় গ্রামীণ খেলাধুলা, কবিগান, জারিগান এবং যাত্রাপালার সুরে উৎসব মুখর হতো।

কিন্তু আধুনিক উফশী জাতের ধানের প্রভাব, ট্রাক্টর ও হারভেস্টারের যান্ত্রিক শব্দ, শহুরে জীবনের প্রলোভন এবং পরিবার ভাঙনের কারণে নবান্ন আজ আর প্রাণবন্ত উৎসব নয়। কৃষিকাজ এখন নিছক বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া, আর নতুন প্রজন্মের কাছে লাঠি খেলা বা জারিগানের চেয়ে মোবাইল ও ডিজিটাল বিনোদন আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।এখনও কিছু পরিবার ব্যক্তিগতভাবে নবান্ন উদযাপন করার চেষ্টা করে, কিন্তু সার্বজনীন উৎসবের সেই রঙ ও জৌলুস ফিরে আনা সম্ভব হয়নি। তেতুলিয়া গ্রামের প্রবীণ আবু হানিফ (৭৫) জানান, আগে নবান্নে সব পরিবার আনন্দে ভরে থাকত। ধান কাটা, মাড়াই ও পিঠা খাওয়ার আনন্দ ছিল। এখন তা আর নেই, মানুষ শহরের মতো পিঠা কিনে খাচ্ছে।