Joy Jugantor | online newspaper

আড়াই মাসে গ্রীষ্মকালীন তরমুজে লাভ দুই লাখ 

আব্বাস আলী 

প্রকাশিত: ০০:০৮, ১৭ জুন ২০২২

আপডেট: ০০:১৬, ১৭ জুন ২০২২

আড়াই মাসে গ্রীষ্মকালীন তরমুজে লাভ দুই লাখ 

ধামইরহাটে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন চাষী আনোয়ার মোল্লা।

নওগাঁর ধামইরহাটে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন চাষী আনোয়ার মোল্লা। শখের বসে তরমুজ চাষ করে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। কম পরিশ্রম ও ভাল দাম পেয়ে খুশি তিনি। তার তরমুজের ক্ষেত দেখতে এবং পরামর্শ নিতে আসছেন আশপাশের চাষীরা। তবে তরমুজ চাষে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করতে কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগীতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন চাষীরা।

ওপরে সবুজ পাতা আর মাচার নিচে ঝুঁলে আছে কালো ও হলুদ রঙের তরমুজ। গাছ থেকে ছিড়ে না পড়তে প্রতিটি তরমুজে দেওয়া আছে জালি। এমন দৃশ্য জেলার সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলার কালুপাড়া গ্রামের মাঠে। এ জমিতে আগে বোরো ধান, আলু ও পটলের আবাদ করা হতো। কিন্তু এ বছর কৃষক আনোয়ার মোল্লা কৃষি অফিসের পরামর্শে মালচিং পদ্ধতিতে ২৫ শতাংশ জমিতে ব্লাক বেবি জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। 

এছাড়া তিনি নিজ থেকে মধুমতি জাতের তরমুজ আরো ২৫ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন। প্রতিটি তরমুজের ওজন প্রায় দেড় থেকে ৪ কেজি। ক্ষেতে প্রায় ৩ হাজার তরমুজে জালি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে তরমুজ উঠিয়ে বাজারজাত শুরু করেছেন তিনি। প্রতি কেজি তরমুজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। 

এ বছর শখের বসে তরমুজ চাষ করে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন। মোট ৫০ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ, বীজ ও মাচা তৈরীতে খরচ পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আড়াই মাসের এ আবাদে খরচ বাদে প্রায় ২ লক্ষ টাকা লাভ থাকবে বলে জানান আনোয়ার মোল্লা। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। 

চাষী আনোয়ার মোল্লার ছেলে আফজাল হোসেন বলেন, জমিতে চাষ দিয়ে পরিমাণ মতো সার ও জৈব সার প্রয়োগ করা হয়। এরপর নির্দিষ্ট দুরুত্ব করে আলুর গই (সুলি) করে মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর চারা রোপন করা হয়। এর ২-৩দিন পর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে প্রতিটি গাছে খুঁিট এবং ১৫-২০ দিন পর মাচা তৈরী করে দেওয়া হয়। পোকামাকড়ের আক্রমণ খুবই কম।

কালুপাড়া গ্রামের তরমুজ চাষী আনোয়ার মোল্লা বলেন, ফল বড় হওয়ার সময় নেট বা জালি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। যেন গাছ থেকে ছিড়ে না যায়। গাছ লাগানোর ৭০-৭৫ দিনের মধ্যে ফল উঠানো শেষ। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার পিস ফল ধরেছে। ৩ হাজার পিসে নেট দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০০ মন তরমুজ উঠানো হয়েছে। আরো উঠবে। আড়াই মাসের এ আবাদে খরচ বাদে প্রায় ২ লক্ষ টাকা লাভ থাকবে।

তিনি বলেন, আমার কাছে এ আবাদ লাভজনক মনে হয়েছে। তবে পরিশ্রম করলো আরো বেশি ফলন পাওয়া যাবে। বছরে তিন বার এ জাতের তরমুজ চাষ করা যাবে। প্রথমবার শুধু মাচা তৈরীতে খরচ টা বেশি হবে। একই মাচায় পরবর্তীতে আরো দুই বার চাষ করা যাবে। অগ্রহায়ন-পৌষ ও মাঘ মাস এ তিনমাস চাষাবাদ হবে না। বাকী সময়টা চাষাবাদ করা যাবে। কিছুদিনে মধ্যে আবারও চারা রোপন করা হবে। বছরে তিনবার যে পরিমাণ এ ফসল থেকে লাভ করা যাবে যা অন্য ফসলে সম্ভব না। তবে কেউ চাইলে তরমুজ চাষ করতে পারেন। অনেকেই আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে যাচ্ছে।

চাষী নুরুল ইসলাম, আবু হোসেন ও সাইফুদ্দিন মন্ডল বলেন, আমাদের এলাকায় তরমুজ চাষ হয়না। এবারই উপজেলায় এ জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। স্বল্প সময়ে এবং কম পরিশ্রমে এ আবাদ করেছে। ভাল ফলন হয়েছে এবং বাজারে দামও ভাল পাচ্ছে। আগামীতে যদি কৃষি অফিস থেকে সহযোগীতা করা হয় আমরাও চাষ করবো। 

ধামইরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌফিক আল জুবায়ের বলেন, ধানের পাশাপাশি কৃষকদের বিভিন্ন ফল ও শাকসবজি চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কৃষক আনোয়ার মোল্লাকে ২৫ শতাংশ জমিতে ব্লাক বেবি তরমুজ চাষে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগীতা করা হয়েছে। তরমুজ একটি লাভজনক অর্থকারী ফসল। তার সফলতা দেখে এখন অনেকেই তরমুজ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। উপজেলাবাসী তাকে তরমুজ আনোয়ার হিসেবে জানুক। চাষীরা যেন তার মাধ্যমে তরমুজ চাষে সফলতা দেখতে পান। চাষীরা যেন গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে ব্যাপক ভাবে উৎসাহ পায় এবং বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কৃষি অফিস থেকে তাদের সহযোগীতা করতে পারি।