Joy Jugantor | online newspaper

বিএনপি-এনসিপির মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২:২১, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

বিএনপি-এনসিপির মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

বিএনপি-এনসিপির মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী ধারার দুটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে দুই দলের মধ্যে দায়িত্বশীল ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এই ঐক্যের জন্য কয়েকটি শর্তও তুলে ধরেছেন।তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটকে আমরা বহুদিন ধরে ব্যক্তি ও দলের সংকট হিসেবে দেখার ভুল করেছি। এই সংকট বেগম জিয়া বা তারেক জিয়ার নয়, এটি এক গভীরতর রাষ্ট্রগত সংকট, যা ব্যক্তিনির্ভর ব্যাখ্যার ঊর্ধ্বে।

পরিবারতন্ত্রের যে দুর্বলতা দীর্ঘদিন বিএনপিকে জর্জরিত করেছে, সেই জায়গায় সংস্কারের পথ আমরা ইতোমধ্যে স্পষ্ট করেছি। ফলে বিএনপি যখন জনগণের কাছে তার ঐতিহাসিক আবেদন হারিয়েছে, তখন তারা অবলম্বন খুঁজেছে প্রতিষ্ঠানের ছায়ায়। তবুও আশা থাকে, নতুন প্রজন্ম যদি সত্যিই জেগে ওঠে, তারা পরিবারতন্ত্রের গণ্ডি ভেঙে আবারও জনপদের রাজনীতিতে ফিরতে পারে। ভারতের কংগ্রেসও আজ একই পথ খুঁজছে: পরিবারতন্ত্রের শেকল ভেঙে পুনর্গঠিত হওয়ার পথ।’

দেশের বড় সংকট দুটি রাজনৈতিক ধারার আধিপত্যে—মুজিববাদ ও মওদূদীবাদ—আটকে আছে বলে মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন। তার মতে, গত পাঁচ দশক ধরে ভারত–পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রক্সি যুদ্ধের এক দীর্ঘ ক্ষেত্র ছিল বাংলাদেশ, যার নিয়ন্ত্রণে ছিল কখনো মুজিববাদ, কখনো মওদুদীবাদ। এই দ্বৈত আধিপত্যের ফলে আমাদের রাষ্ট্র, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও প্রশাসনিক কাঠামো ক্রমেই ভেঙে পড়েছে।’‘প্রক্সি রাজনীতি’র উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন লিখেন, ‘২০২৪-এর গণ অভ্যুত্থানের পর আমাদের লক্ষ্য ছিল এই প্রক্সি রাজনীতির দাসত্ব থেকে বের হয়ে সাম্য, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্রীয় কাঠামো নির্মাণ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে শিবির তার কিছু কল্যাণমূলক কাজের আড়ালে ছাত্রসমাজকে জামায়াতের হাতে তুলে দিল, কিছু পদ-পদবি ও আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে। ফলে দেশ আবারও পুরোনো প্রক্সি রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে ঠেলে দেওয়া হলো। আজ দেশপ্রেমিক শক্তির সামনে একসাথে দুটি যুদ্ধ : ১. মুজিববাদ ও মওদুদীবাদের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম ২. একটি নতুন, ন্যায়ভিত্তিক, আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের দায়ভার

এনসিপির এই মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘এই দুই যুদ্ধ একা কোনো দল লড়তে পারবে না। বিএনপি ও এনসিপি—গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী ধারার দুই শক্তির মধ্যে একটি দায়িত্বশীল ঐক্য প্রয়োজন। তবে এ ঐক্যের শর্ত রয়েছে: বিএনপিকে তার পুরনো সীমাবদ্ধতা ও পরিবারতন্ত্রের ছায়া থেকে বের হতে হবে। বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কারের পথে হাঁটতে হবে। আর যারা ভারতের প্রভাব-রাজনীতির দিকে ঝুঁকে আছে, তাদেরও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূলধারায় ফিরে আসতে হবে। এনসিপি কোনো অবস্থাতেই এই দায়িত্ব থেকে পিছু হটবে না। আমাদের চারটি প্রশ্নে আপস নেই— ১. বাংলাদেশের পুনর্গঠন ২. সার্বভৌম মর্যাদা ৩. ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ ৪. নাগরিক অধিকার, স্বাধীনতা ও সম্মান।

ঐক্য হোক বা না হোক, এনসিপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।পোস্টের শেষাংশে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পথ আটকে আছে দুই ফ্যাসিবাদী প্রক্সির হাতে, মুজিববাদ ও মওদূদীবাদের আধিপত্যে। এই প্রক্সির শাসন কাঠামো ভেঙে আমরা যদি একটি ন্যায়ভিত্তিক, সৎ, জাতীয় রাষ্ট্র গড়তে চাই, তবে প্রতিটি নাগরিককে এই ঐতিহাসিক পুনর্গঠনের কাজে শামিল হতে হবে। এ লড়াই কেবল নির্বাচন বা ক্ষমতার লড়াই নয়, এটি বাংলাদেশের আত্মাকে পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে প্রথমেই বাঁচাতে হবে তার রাজনীতিকে— প্রক্সির ছায়া থেকে।’