Joy Jugantor | online newspaper

‘স্যালাইনে প্রসূতির মৃত্যু’

ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের প্রতিবেদন জমা

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০:৫১, ৭ এপ্রিল ২০২৪

ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের প্রতিবেদন জমা

প্রতিকী ছবি।

রাজশাহীতে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের পর দুই নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে দুটি প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শনিবার রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবিরের কাছে প্রতিবেদন দুটি দেয়া হয়।

ডা. আনোয়ারুল কবির বলেন, সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের আগে আইভি ফ্লুইড স্যালাইন দেয়া হয়েছিল ওই নারীদের। পরে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তাদের কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়। এভাবে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আরও এক নারীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছিল। কয়েকদিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজশাহীর দুর্গাপুরের প্রসূতি আসমা খাতুনকে (৩৮) ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল গত ১৯ মার্চ। সেদিনই স্যালাইন দেয়া হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়লে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা (আইসিইউ) কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ওই রাতেই মারা যান তিনি।

আর নওগাঁর নিয়ামতপুরের প্রসূতি শারমিন খাতুনকে (৩৫) ভর্তি করা হয়েছিল ১৬ মার্চ। স্যালাইন দেয়ার পরে তারও সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার হয়েছিল। এরপর তারও একই ধরনের সমস্যা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকেও রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে পাঠানো হয়। পরে ২৫ মার্চ তিনি মারা যান। আরবী খাতুন (১৯) নামে এক প্রসূতিরও একই ধরনের সমস্যা হয়েছিল। তবে তিনি চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবির বলেন, শনিবার বিষয়টি জানার পরে আমি ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রতিবেদন চেয়েছিলাম। তারা আজ (শনিবার) দুটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। সেখানে তারা ধারণা থেকে আইভি স্যালাইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলেছে। এ জন্য ওই স্যালাইন পরীক্ষার জন্য ঢাকায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ মুহুর্তে এখনই কোম্পানির নামটা বলে ব্যবসায়িক ক্ষতি করতে চাচ্ছি না। পরীক্ষার রিপোর্টে যদি দেখি স্যালাইনেরই সমস্যা তাহলে কোম্পানির সঙ্গে কথা বলব। আর স্যালাইনের সমস্যা না হলে আমাদের আরও অনুসন্ধান করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এ রকম ঘটনা দেশের অন্যস্থানে ঘটেছে। আমাদের এখানে এবারই শুনলাম। তবে যেহেতু স্যালাইন দেয়া এবং সিজারের পরে একই ধরনের সমস্যায় রোগী মারা যাচ্ছে, তাই বিষয়টি আমাদের আগেই জানানো দরকার ছিল। তাহলে আগে থেকে কাজ শুরু করতে পারতাম।

মৃত্যুর পর আসমার স্বামী আফজাল হোসেন অভিযোগ তুলেছেন, আগে তার স্ত্রীর কিডনিজনিত কোনো সমস্যা ছিল না। এই স্যালাইন দেয়া এবং সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পরে তাৎক্ষণিক সমস্যা শুরু হয়। দুটি কিডনি একসঙ্গে নষ্ট হয়ে দ্রুত তার স্ত্রী মারা গেছেন। ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছেন।

এ ঘটনায় হাসপাতালটি ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে। কমিটির প্রধান ডা. আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, আমাদের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। আশা করি আগামী সোমবার আমরা কাজ শেষ করতে পারব। তারপর প্রতিবেদন দেয়া হবে।

বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রসূতিরা আমাদের এখানে ভর্তি হলেও পরে মারা গেছেন রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে। তাই রামেক হাসপাতাল প্রতিবেদন দেবে ভেবে হয়তো এখান থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে আমরা বিষয়টা নিয়ে সিরিয়াস। সে জন্য তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। স্যালাইনেরও পরীক্ষা করা হচ্ছে।

রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, আসমা ও শারমিনের কিডনি কার্যক্ষমতা হারিয়েছিল। সিজারের পর প্রায়ই এ ধরনের রোগী আসে। এখনো এ রকম একজন রোগী কিডনি ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। বিষয়টা আমাদের কাছে নতুন না।

 এর আগে গত মার্চ মাসের ৩য় সপ্তাহে ৪ প্রসূতির স্যালাইন দিয়ে অস্ত্রপচারের পর কিডনির কার্যক্ষমতা হারায় বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও একই হাসপাতালে গর্ভকালীন সময়ে তারা ফলোআপে ছিলেন। তখন তাদের কিডনি জনিত কোন সমস্যা ধরা পড়েনি