Joy Jugantor | online newspaper

খননের দাবি

দখলে-দূষণে বিপন্ন উত্তরাঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে ২০০ নদনদী

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০:৩১, ৪ মে ২০২৪

আপডেট: ১০:৩৩, ৪ মে ২০২৪

দখলে-দূষণে বিপন্ন উত্তরাঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে ২০০ নদনদী

ছবি সংগৃহীত

তিস্তায় গজলডোবা ও পদ্মা নদীতে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে উত্তরাঞ্চলের ছোট-বড় মিলে প্রায় ২০০ নদনদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। এসব নদীর অনেক স্থান এখন নগরায়ণে পরিণত হয়েছে। আবার অনেক স্থান পরিণত হয়েছে আবাদি জমিতে। সচেতন মহলের অভিমত, হারিয়ে যাওয়া নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় সরকারকে দ্রুততম সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে এই অঞ্চলের মরুকরণ ঠেকানো যাবে না।

এদিকে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনে। জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে। দীর্ঘদিন এই অঞ্চলে বৃষ্টির দেখা নেই। চলছে দাবদাহ। গোটা এপ্রিল জুড়ে ৩৯-৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। এখনো কোনো বৃষ্টির দেখা নেই। বর্তমানে খরা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পানির প্রবাহ না থাকায় তিস্তা, পদ্মাসহ অন্যান্য নদী এখন হেঁটে পার হওয়া যায়।

উত্তরাঞ্চলে প্রকৃতির রূপ থেকে প্রবাহ থমকে যাওয়া উল্লেখযোগ্য নদনদীর মধ্যে রয়েছে, ধরলা, জলঢাকা, দুধকুমার, তিস্তা, স্বতী, ঘাঘট, নীলকুমার, বাঙ্গালী, বড়াই, মানাস, কুমলাই, লাতারা, ধুম, বুড়িঘোড়া, দুধকুমার, সোনাভরা, হলহলিয়া, লোহিত্য, ঘরঘরিয়া, ধরণী, নলেয়া, জিঞ্জিরাম, ফুলকুমার, কাটাখালী, শালমারা, রায়ঢাক, খারুভাজ, যমুনেশ্বরী, চিকলী, মরা করতোয়া, ইছামতী, আলাই কুমার, মানাস, মরাতি,  পাগলা, চন্দনা, বারাহি, হাব, নবগঙ্গা, সর্বমঙ্গলা চিনারকুক, ভাঙ্গা, খলিসা, গদাই, প্রাচীণ ইছামতি, কমলা, নারদ, আত্রাই, কাকড়া, ছোট যমুনা, ঢেপা, মহানন্দা, পুনর্ভবা ইত্যাদি।

নদীবিষয়ক গবেষক ও লেখকসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা অববাহিকা, অর্থাত্ রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ৫০টির বেশি নদীর প্রবাহ থেমে গেছে গজলডোবা বাঁধের কারণে। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার ৪০টির বেশি নদীর প্রবাহ নেই। অর্ধশতাব্দী আগে এসব নদীতে ছিল পানির প্রবাহ ও প্রাণের স্পন্দন। বর্তমানে অনেক স্থানে এসব নদীর কোনো অস্তিত্বই নেই। এছাড়া পদ্মা অববাহিকায়ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট প্রায় ১০০ নদী কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের অবস্থা আরো করুণ। কুড়িগ্রামের চিলমারী এলাকায় শুকনো মৌসুমে এই নদী হেঁটে পার হওয়া যায়।

নদীবিষয়ক গবেষক ও রিভারাইন পিপল কমিটির পরিচালক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তুহিদ ওয়াদুদ জানান, ফারাক্কা ও গজলডোবা বাঁধের কারণে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২০০ নদী অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। পদ্মায় পানি না থাকায় মেঘনা নদীর পানির প্রবাহও কমে গেছে।

নদীবিষয়ক লেখক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, হারিয়ে যাওয়া নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় সরকারকে দ্রুততম সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে এই অঞ্চলের মরুকরণ ঠেকানো যাবে না। তবে বর্তমান সরকার গত পাঁচ বছর ধরে ছোটখাটো নদীতে ড্রেজিং কাজ শুরু করেছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। ভবিষ্যতে আরো বেশি ড্রেজিং করলে এই নদীগুলো পানির প্রবাহে প্রাণ ফিরে পাবে।