Joy Jugantor | online newspaper

বগুড়ায় শিক্ষক যখন ভিক্ষুক!

মাসুম হোসেন

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৮:৪৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

বগুড়ায় শিক্ষক যখন ভিক্ষুক!

শিক্ষক নজমুল হক ও তার স্ত্রী।

৬৫ বছরের সৈয়দ নজমুল হক, ‘রুমেল পাগলা’ নামেও পরিচিত তিনি। তিন যুগ আগেও ছিলেন শিক্ষক। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন। ছিলেন খুব মেধাবী। এখন সেই নজমুল ভিক্ষুক। ঘুরেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। চাল-ডাল সংগ্রহ করে রাতে ফেরেন ঘরে। স্ত্রী শ্যামলী বেগম থাকেন তার ঘরে ফেরার অপেক্ষায়। নিঃসন্তান এই দম্পতির প্রতিটি দিন কষ্টে ভরা।  

নজমুল হক বগুড়া সদরের ছিলিমপুর উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ছাত্র জীবনে মেধাবী ছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ  করেন নজমুল। এরপরই গৃহশিক্ষকতা শুরু করেন। তবে বেশিদিন তা ধরে রাখতে পারেননি। হারিয়ে ফেলেন মানসিক ভারসাম্য। এরপরই শুরু হয় তার কষ্টে ভরা দিন। তার স্ত্রী শ্যামলীর ভাগ্যেও সুখ জুটেনি। সংসারের খরচ মেটাতে শুরু করেন গৃহকর্মীর কাজ। তবে এখন আর সেই কাজও করতে পারেন না শ্যামলী।  অন্যর বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলেন। এতে কাটা পড়ে তার ডান হাতের এক আঙুলও।

মানুষের সাহায্য-সহযোগীতা ছাড়া তাদের খাবার জুটে না। তবে এতকিছুর পরেও স্বামীকে ছেড়ে যাননি শ্যামলী। 

নজমুল কানে কম শোনেন। তার চোখের দৃষ্টিশক্তিও কমে গেছে। কোনো কিছু জানতে চাইলে ইংরেজিতে লিখে দিতে হয় তাকে। প্রশ্নের উত্তরও দেন ইংরেজি। তবে বাংলাতেও বলেন। 

তার জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, তার জীবন ব্যর্থতায় ভরা, ধ্বংস। জমি-জমা ছিল। তবে তা এখন অন্যর দখলে। ১৯৭২ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। অন্যের সাহায্যে তার জীবন চলে। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তিনি। এছাড়া কানেও শোনের কম এবং চোখের দৃষ্টিশক্তিও কমে গেছে তার।

শনিবার রাতে তার স্ত্রী শ্যামলী বলেন, ‘ আজ সকাল থেকে আমরা না খেয়ে আছি। ঘরে চাল ছিল না। একটু আগে আমার স্বামী চাল নিয়ে আসলো। এখন ভাত রান্না করে আমরা খেতে বসবো।’

তিনি আরও জানান,  তাদের বিয়ের বয়স ৪০ বছর। দাম্পত্য জীবনে তাদের কোনো সন্তান নেই। বিয়ের পরও নছর দুয়েক গৃহশিক্ষকতা করেন নজমুল। ওই সময় সুখেই কাটছিল তাদের দিন। কিন্তু এক পর্যায়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন নজমুল। এরপরই গৃহশিক্ষক হিসেবে নজমুলকে আর কেউ রাখেননি। এতে সংসারে অভাব আসে। সংসারের খরচ মেটাতে তিনি শুরু করেন গৃহকর্মীর কাজ। তবে এখন আর সেই কাজও করতে পারেন না। এক বাড়িতে রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে যায় তার। বর্তমানে মানুষের সাহায্য-সহযোগীতায় তাদের সংসার চলছে।

শ্যামলী বলেন, ‘ নিজ এলাকার মানুষেরা এখন তেমন সাহায্য করেন না। সাহায্যের জন্য অন্য এলাকায় গেলে সেখানকার মানুষেরা বলেন যে, ‘তোমাদের এলাকাতেই তো অনেক ধনী মানুষ আছেন। এখানে কেন এসেছো?’ 

বগুড়া শহরের সূত্রাপুর মফিজ পাগলার মোড় এলাকার ব্যবসায়ী মো. গোলাম আজম লিপন জানান, নজমুল হক বগুড়া শহর ঘুরে ঘুরে মানুষের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। দীর্ঘ বছর ধরে তিনি ভিক্ষা করে আসছেন। একজন শিক্ষকের এমন জীবন-যাপন কষ্টদায়ক। নজমুল খুব মেধাবি ছিলেন। সামর্থ্য অনুযায়ী নজমুলের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন তিনি।