যুব বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার তানজিম।
নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তানজিম হাসান সাকিব। কর্মজীবী নারীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্বেষমূলক পোস্ট করেছিলেন জাতীয় দলের হয়ে এক ওয়ানডে খেলে তানজিম। প্রবল সমালোচনার পর তার সঙ্গে কথা বলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সংশ্লিষ্টদের কাছে নিজের পোস্টের দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন যুব বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার।
বিসিবিও তানজিমকে সতর্ক করেছে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের গাইডলাইন অনুযায়ী, এসব বিদ্বেষমূলক আচরণে ক্রিকেটারদের তদন্ত হওয়ার কথা। তদন্তে অভিযুক্ত প্রমাণিত হলে শাস্তিও অনিবার্য। কিন্তু তানজিম কেবল ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে গেলেন। বিসিবি ভবিষ্যতে শুধু তানজিম নয়, সব ক্রিকেটারদের দিকে বাড়তি নজর দেবে বলে জানিয়েছে।
তানজিম গত বছর ফেসবুকে পোস্ট করেন, ‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়।’
তানজিমের আরেকটি পোস্ট ছিল এমন, ‘ভার্সিটির ফ্রি-মিক্সিং আড্ডায় অভ্যস্ত মেয়েকে বিয়ে করলে আর যাই হোক সন্তানের জন্য একজন লজ্জাশীলা মা দিতে পারবেন না।’
প্রবল আপত্তিকর এসব পোস্ট আলোচনায় আসে এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচে তানজিম ভালো খেলার পর। নিজের আন্তর্জাতিক অভিষেকে দুর্দান্ত বোলিং করে ২ উইকেট পেয়েছেন ভারতের বিপক্ষে। লাইমলাইটে আসায় তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চর্চা হচ্ছিল। তখনই সামনে আসে তার ‘নারীবিদ্বেষী’ পোস্ট। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সেসব পোস্ট মুছে ফেলেছেন তানজিম। সঙ্গে ক্ষমা চেয়েছেন বিসিবির কাছে।
বিসিবির পরিচালক ও ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস মঙ্গলবার বলেছেন, ‘ক্রিকেট বোর্ড থেকে, ক্রিকেট অপারেশনস থেকে তানজিম সাকিবের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। ওর সাথে আমরা কথা বলেছি। মিডিয়া কমিটি থেকেও তার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাকে আমরা অবগত করেছিলাম।’
‘যেসব পোস্ট ফেসবুকে এসেছে... তার বক্তব্য হচ্ছে- কাউকে আঘাত করার উদ্দেশে এরকম পোস্ট দেওয়ার কথা না। সে যেসব পোস্ট দিয়েছে, তার নিজ থেকে দিয়েছে, কাউকে উদ্দেশ্য করে না। এটা দেওয়ার পর কারও আঘাত যদি লেগে থাকে হি ইজ সরি ফর দ্যাট।’
‘একটা কথা এসেছে নারীদের ব্যাপারে। নারীদের ব্যাপারে যেসব পোস্ট ছিল, সে বলেছে আমি এটার দায় নিচ্ছি। আমি নারীবিদ্বেষী নই। এই দাবি পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে। সে বলেছে আমার মা একজন নারী। আমি কোনো দিনও নারী বিদ্বেষী হতে পারি না। এটা হচ্ছে তার বক্তব্য। আমরা তাকে সতর্ক থাকার জন্য বলেছি। ভবিষ্যতে যদি কোনো পোস্ট দিয়ে থাকে সেটা বোর্ড থেকে মনিটর করা হবে।’ – যোগ করেন তিনি।
আইসিসির গাইডলাইন অনুযায়ী তার ইস্যুতে যেভাবে তদন্ত হওয়ার কথা সেই পথে হাঁটছে না বিসিবি। এক্ষেত্রে তার বয়সকে বিবেচনায় এনেছে দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এ নিয়ে জালাল ইউনুস বলেন, ‘সে (তানজিম) বলেছে আমি দুঃখিত। আমরা সতর্ক করেছি ভবিষ্যতে যাতে এমন পোস্ট না দেওয়া হয়। সে বলেছে এ ধরনের পোস্ট থেকে বিরত থাকবে। সে যেহেতু ভুল স্বীকার করেছে। সে একটা বড় কথা বলেছে- সে নারীবিদ্বেষী নয়। সে বলেছে আমার মা-ই তো একজন নারী। আমি কীভাবে নারীবিদ্বেষী হতে পারি।’
‘আমরা তাকে পর্যবেক্ষণ করব। তার পরিবারও এ ব্যাপারে খুবই শঙ্কিত। এমন পরিস্থিতি তারাও আশা করেনি। তারাও দুঃখিত। সামনে বিশ্বকাপ আছে, সে তরুণ ছেলে, বয়স কম। এজন্য তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ওরকম কিছু যদি করে থাকে তাহলে আমরা পর্যবেক্ষণ করে এবং অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।’ – বলেছেন জালাল ইউনুস।