স্পেনের যে শহর এবার ওয়ার্ল্ড ডিজাইন ক্যাপিটাল
মাদ্রিদ বা বার্সেলোনার মতো পরিচিত না হলেও স্পেনের ভালেন্সিয়া শহরের স্থাপত্য সত্যি নজর কাড়ার মতো। ২০২২ সালের ‘ওয়ার্ল্ড ডিজাইন ক্যাপিটাল’ হিসেবে শহরটিতে কিছু বাড়তি আকর্ষণও যোগ হয়েছে।
ভালেন্সিয়া শহরে ঐতিহাসিক ভবনের সঙ্গে আধুনিক ভবনের মেলবন্ধন কোনো বিরল দৃশ্য নয়। তরুণ ডিজাইনাররা স্পেনের তৃতীয় বৃহত্তম এই শহরের এমন বৈচিত্র্য খুব পছন্দ করেন। ২০২২ সালে শহরটি 'ওয়ার্ল্ড ডিজাইন ক্যাপিটাল'-এর মর্যাদা পেয়েছে।
ব্রিটিশ স্থপতি ডেভিড চিপারফিল্ডের ডিজাইন করা 'বেলেস এ বেন্টস' ভবনে আনখেলা মন্টাগুড ও জর্ডি ইরানসো নামের দুই ডিজাইনার 'দ্য সি' বা সমুদ্র নামের এক ইনস্টলেশন বসিয়েছেন। প্রদর্শনীতে ফুলে ওঠা ঢেউয়ের বিমূর্ত রূপ পরিবেশন করছেন তারা। তাদের মতে, ভালেন্সিয়া ভূমধ্যসাগরের খুব কাছে হওয়ায় 'দ্য সি' সৃষ্টিকর্মের সঙ্গে একটা বিশেষ সংযোগ রয়েছে। ইনস্টলেশনে তারা ধাতুর জাল ব্যবহার করেছেন, কারণ এমন উপকরণ পর পর রাখলে গভীরতা সৃষ্টি হয়। সমুদ্রের মধ্যেও সেই গভীরতা পাওয়া যায়।
আনখেলা মন্টাগুড ও জর্ডি ইরানসো স্পেন, জার্মানি ও সুইডেনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ২০১৭ সালে তারা 'ক্ল্যাপ স্টুডিও' প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের ডিজাইন ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছে। যেমন হংকংয়ে এক বিউটি সেলুন এবং পাখার মতো দেখতে এক রুম ডিভাইডার।
ভালেন্সিয়া শহরের আনাচে কানাচে ডিজাইনপ্রেমিদের জন্য মূল্যবান প্রেরণার অভাব নেই। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে শহরের কেন্দ্রস্থলে ভালেন্সিয়ান আর্ট নুভো শৈলি অনুযায়ী মার্কেট হল গড়ে তোলা হয়েছিল। ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম তাজা পণ্যের বাজার হিসেবে সেটি পরিচিত। ৮,০০০ বর্গ মিটারেরও বেশি জায়গাজুড়ে পণ্য অনুযায়ী নানা সজ্জা সেখানে চোখে পড়ে।
জর্ডি বলেন, 'প্রচুর পরিমাণ ধাতুর ব্যবহার এমন আধুনিকতা, বা ভ্যালেন্সিয়ান মডার্নিজমের কিছু বৈশিষ্ট্য, তাই না? এবং আমরা সেটা থেকে প্রেরণা পেয়েছি, কারণ তারা সত্যি পাতলা উপকরণ ব্যবহার করে অন্য কিছু ছাড়াই এমন চওড়া স্পেস সৃষ্টি করতে পেরেছে। তাই ওয়ার্ল্ড ডিজাইন ক্যাপিটালের জন্য ইনস্টলেশন তৈরির কাজে আমরা সেই প্রেরণা কাজে লাগিয়েছি।'
'লাস বম্বাস খেন্স' নামের ইভেন্ট সেন্টার ও মিউজিয়ামে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের সঙ্গে সমসাময়িক শৈলির মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে। ১৯৩০ দশকের হাইড্রলিক পাম্পের কারখানাটি আজ আধুনিক শিল্পকলার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালে এক বড় অগ্নিকাণ্ডের পর আধুনিক ডিজাইন বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে। চতুর্দশ শতাব্দীর এক ওয়াইন সেলার স্থাপত্যের অন্যতম দ্রষ্টব্য হয়ে উঠেছে। ভবনটির সংস্কারের সময়ে সেটি আবিষ্কৃত হয়েছিল।
জর্ডি বলেন, 'সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থপতিরা যে মৌলিক নির্যাস অক্ষত রেখেছেন, সেটা আমার খুব ভালো লেগেছে। ইটের এই রং এবং সেগুলি যেভাবে খেলাচ্ছলে বা কৌশল অনুযায়ী সাজানো হয়েছে, যাতে ভিতরে আলো আসে।'
আনখেলা মন্টাগুডের মতে, বম্বাস খেন্স অতীতের সঙ্গে নতুন স্থাপত্যের সংযোগ ঘটাচ্ছে। সংস্কারের এই কাজের মাধ্যমে সেটি মানুষের কাছে পুরোপুরি দৃশ্যমান করে তোলা হচ্ছে। নয় কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ 'এল খার্দিন দে তুরিয়া' বাগানটি শহরের সবুজ ফুসফুস হিসেবে পরিচিত। আগে সেখানে নদীর খাত ছিল। শহরকে বার বার বন্যার কবল থেকে বাঁচাতে পানির গতিপথ বদলে দেওয়া হয়। ১৯৮৬ সাল থেকে জায়গাটি পার্ক হিসেবে শোভা পাচ্ছে।
আনখেলা মনে করেন, 'বাস্তবে এটা একটি মনুমেন্টাল স্থাপত্য। শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের এই কেন্দ্র বিশাল ভবনের সমারোহ। সেগুলি সত্যি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফলে কখনো ভালেন্সিয়ায় এলে এই কেন্দ্রটি চোখ এড়িয়ে যাবার জো নেই। ওয়ার্ল্ড ডিজাইন ক্যাপিটাল হিসেবে ভ্যালেন্সিয়ার মধ্য দিয়ে হেঁটে গেলেই অনেক প্রেরণা পাওয়া যাবে।