Joy Jugantor | online newspaper

পশু চিকিৎসায় কাজ করে স্বীকৃতি পেলেন যে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ৪ মে ২০২১

আপডেট: ০৮:৪৭, ৪ মে ২০২১

পশু চিকিৎসায় কাজ করে স্বীকৃতি পেলেন যে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী

সালমা সুলতানা।

বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায় অবদানের জন্য এশিয়ার শত বিজ্ঞানীর তালিকায় যে তিনজন বাংলাদেশি নারী জায়গা করে নিয়েছেন তাদের একজন সালমা সুলতানা। পশু চিকিৎসার শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখার জন্য তাকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

সিঙ্গাপুর ভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী এশিয়ান সায়েন্টিস্টে ১০০ জন বিজ্ঞানীর এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

সালমা সুলতানা একজন কৃষিবিদ। মূলত তিনি খামারী ও ক্ষুদ্র কৃষকদের নিয়ে কাজ করেন এবং পশুর রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাবরেটরিসহ একটি ভেটেরিনারি হাসপাতালও গড়ে তুলেছেন।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় তিনি দেখতে পান যে বাংলাদেশে পশু চিকিৎসায় একটা শূন্যতা রয়ে গেছে এবং সেকারণেই তিনি এবিষয়ে কাজ করার ব্যাপারে উৎসাহী হন।

করোনাভাইরাস লকডাউনের সময় দুটো কুকুরকে খাবার দিচ্ছেন সালমা সুলতানা।

"আমাদের পশু চিকিৎসক রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য যথেষ্ট সংখ্যায় সহকারী বা ভেটেরিনারি নার্স নেই। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখি কেউ নেই যিনি আমাকে একটু সাহায্য করতে পারেন। ডাক্তাররা কিন্তু সবকিছু করতে পারে না। আমাদের ল্যাবরেটরির ক্ষেত্রেও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তখন মনে হলো যে এখানে কাজের একটা বড় সুযোগ রয়ে গেছে।"

সালমা সুলতানা বলছেন পর্যাপ্ত জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের অভাবের কারণে খামারীরা তাদের গবাদি পশু ঠিক মতো প্রতিপালন করতে পারছে না। এর ফলে তারা যেমন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ছে।

"আমাদের কৃষি খাতে অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু গবাদি পশু চাষের বেলায় কৃষকরা এখনও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে না। এছাড়াও এবিষয়ে তাদের সাধারণ জ্ঞানেরও অভাব রয়েছে।"

এবিষয়ে একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, গরু যেখানে রাখা হয় সেই গোয়াল ঘরের পরিবেশ খুব একটা উন্নত নয়। একটা গোয়াল ঘরের ছাঁদ যে ১৪ থেকে ১৮ ফুট উঁচু হতে হবে সেটাও অনেকে জানে না। এমনকি গবাদি পশুর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই। এবিষয়ে তারা কোনো সাহায্য সহযোগিতাও পাচ্ছে না, যার ফলে তাদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

"গরুচাষিরা আগে ভুষির সাথে পানি মিশিয়ে গরুকে খাওয়াতো। গরুকে ভাত খাওয়ানো হতো। জাউ রান্না করে খাওয়াতো। কিন্তু গরুর পেটের জন্য এসব অনেক ক্ষতিকর। এবিষয়ে তাদের জ্ঞান নেই। আমরা তাদেরকে বলছি আপনারা গরুকে শুকনো খাবার দেন," বলেন তিনি।

সালমা সুলতানা বলছেন, "আপনি দেখেন চালের কেজি কতো করে, ভাল চাল ৬০/৭০ টাকা কেজি, মাছের কেজি কতো দেখেন, কিন্তু এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৫০০/৫৫০ টাকা। ফলে তাদের জন্য এটা অনেক লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। কিন্তু জ্ঞানের অভাবের কারণে তারা সেটা অর্জন করতে পারছে না।"

তিনি বলছেন, পশু চিকিৎসায় জ্ঞানের অভাব প্রভাব ফেলছে মানুষের স্বাস্থ্যখাতেও।

"শুধু উৎপাদন করলেই তো হবে না, উৎপাদিত এই পণ্য মানুষের জন্য নিরাপদ কীনা সেটাও তো চিন্তা করতে হবে। গরুর মাংস বা দুধ, হাঁস মুরগির ডিম নিরাপদ হচ্ছে কীনা সেটাও তো জরুরি।"

তিনি বলেন, "আমাদের দেশে অনেক অসুস্থ গরু জবাই হচ্ছে। তাকে হয়তো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় জবাইও করা হচ্ছে। ফলে ওষুধের উপাদানগুলো তার দেহে থেকে যাচ্ছে। সেই মাংসটা আমরা খাচ্ছি। ফলে আমাদের স্বাস্থ্যও একটা হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে।"

সালমা সুলতানা বলছেন পর্যাপ্ত জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের অভাবের কারণে খামারীরা তাদের গবাদি পশু ঠিক মতো প্রতিপালন করতে পারছে না।

তবে সালমা সুলতানা বলছেন, গত কয়েক বছরের কাজের ফলে কৃষকদের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ছে। তারা এখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারেও আগ্রহী।

"কৃষকরা এখন অনেক কিছু জানতে চেষ্টা করছে। তারা ইউটিউব ঘাঁটছে। একজন খামারী যখন দেখবেন যে দুধের উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে তখন তিনি নিজে থেকেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চাইবেন," বলেন তিনি।

তিনি বলেন, এধরনের প্রচারণা ও প্রশিক্ষণের ফলে গরু চাষিদের মধ্যে যেসব কুসংস্কার ছিল সেসবও ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে।

সালমা সুলতানা বাংলাদেশে- একমাত্র বেসরকারি প্রাণী চিকিৎসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মডেল লাইভস্টক অ্যাডভান্সমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।

এশিয়ান সায়েন্টিস্টে আরো যে দুজন বাংলাদেশি নারী বিজ্ঞানীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে তারা হলেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র- বাংলাদেশের ফেরদৌসি কাদরী। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিশুদের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কাজ করেন তিনি। অন্যজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সায়মা সাবরিনা। ন্যানো ম্যাটেরিয়্যালের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করেন তিনি।