Joy Jugantor | online newspaper

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

ডেস্ক রির্পোট

প্রকাশিত: ১৭:০৮, ৭ আগস্ট ২০২২

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

সংগৃহীত ছবি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনযাত্রা যখন সংকটে, তখন জ্বালানির দাম বাড়ানোকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি একটা ভয়ংকর প্রভাব ফেলবে দেশের অর্থনীতির ওপর। এটা দেশের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বেড়ে যাবে পরিবহণ ব্যয়। একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আবার দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মাঝখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের সাধারণ মানুষ, যারা দিন আনে দিন খায়। মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সেজন্যই এ সরকারকে ক্ষমতায় থেকে সরিয়ে দেওয়াই হচ্ছে একমাত্র দেশপ্রেমিকের কাজ।

রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক ছাত্র সমাবেশে তিনি শনিবার সকালে এসব কথা বলেন। ভোলায় পুলিশের গুলিতে জেলা সভাপতি নুরে আলমের মৃত্যুর প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের উদ্যোগে এ সমাবেশ হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চলে এ সমাবেশ হয়। এতে ছাত্রদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে মঞ্চের পাশের সড়কে সকালের দিকে কিছুক্ষণ যান চলাচল করলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।

সংকটে পড়ে এখন আইএমএফ-এর ঋণ পেতে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে জনগণকে বিপদে ফেলেছে বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সরকার আইএমএফ-এর কাছে ঋণ চেয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। কারণ তারা এত মিথ্যাচার করে এসেছে, রিজার্ভে এত টাকা আছে, এত ডলার জমা আছে। আজ রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবির কাছে ডলার ঋণ চেয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এভাবে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। দেখলাম, কাঁচা মরিচের কেজি তিনশ টাকা। মানুষের ওপরে সত্যিকার অর্থে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আর সময় নেই। জেগে উঠতে হবে। জেগে উঠে সরকারকে পরাজিত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে আরও দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলি। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনগুলো আপনারা ঐক্য গড়ে তুলুন। আমরা সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাই, আসুন আজ জাতির প্রয়োজনে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজনে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ ভয়াবহ, অগণতান্ত্রিক, কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সরিয়ে একটা জনগণের পার্লামেন্ট ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।

বিএনপি নয়, সরকারই চক্রান্ত করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যায়-অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বললে সরকার বলে চক্রান্ত। আমরা চক্রান্ত করি না। প্রকাশ্যে ঘোষণা নিয়ে এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য জনগণের কাছে যাচ্ছি। তাদের নিয়ে আমরা রাজপথে ফয়সালা করব। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করতে আমরা সক্ষম হব। তাহলেই নুরে আলম ও আবদুর রহিমের রক্তের ঋণ আমরা শোধ করতে পারব।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নুরে আলম ও আবদুল রহিম জীবন দিল কেন? জনগণের দাবি আদায় করতে গিয়ে। এ সরকারকে সরাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন প্রমুখ।

জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান : শনিবার বিকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জনগণকে রাজপথে নেমে এসে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে তিনি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে সরকারের গণবিরোধী ও অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের আহ্বানও জানান।

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তাই জনগণের প্রতি প্রতিশোধ নিতেই সরকার একের পর এক জ্বালানি, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। যদিও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। তাই অবিলম্বে সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলাই এখন গণতন্ত্রকামী মানুষের একমাত্র কর্তব্য।

তিনি বলেন, এ দাম বৃদ্ধিতে দেশের বিদ্যুৎ, কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। খাদ্যপণ্যসহ শাকসবজির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাবে। এমনিতেই কয়েক মাস ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম হুহু করে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবহণ এবং গণপরিবহণের ভাড়ায় নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। তাতে মূলত নিম্ন-আয়ের মানুষ চরম সংকটের মধ্যে পড়বেন। সরকারের নীতিই হচ্ছে অসাধু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মানুষকে শোষণ করে তাদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া।