
বগুড়ার রোচাস রেস্টুরেন্টে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
ঐতিহাসিক পুন্ড্রনগর সভ্যতা করতোয়া নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। অথচ সেই করতোয়া দখলে-দূষণে বিপন্ন, মৃতপ্রায়। এক সময়ের খরস্রোতা করতোয়ার প্রাণচ্ছ্বোলতা ফিরিয়ে আনতে হলে বগুড়াবাসী ও প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা দরকার।
‘দখল আর দূষণে বিপন্ন করতোয়া নদী: জনমানুষের জীবিকা ও পরিবেশের নিরাপত্তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী-আলোচকরা এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা), এএলআরডি, নিজেরা করি এবং পানি অধিকার ফোরামের যৌথ আয়োজনে বগুড়ার রোচাস রেস্টুরেন্টে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বক্তারা বলেন, এ নদীকে রক্ষা করতে হলে সিএস ম্যাপ এবং নদীর বর্তমান প্রবাহ বিবেচনায় রেখে সীমানা পিলার স্থাপনের মাধ্যমে দখলকারীদের উচ্ছেদ করতে হবে।
এএলআরডিয়ারের চেয়ারপারসন ও নিজেরা করির সমন্বয়কারি খুশী কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিষয়ভিত্তিক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডারর্ডের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি খোরশেদ আলম। এ সময় বগুড়া ও গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আফসানা ইয়াসমিন। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হক, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মেজবাবুল আলম, রাজা বাজার আড়ৎদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন ড. তুহিন ওয়াদুদ, বেলার নির্বাহী প্রধান অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
উপস্থাপনায় খোরশেদ আলম বলেন, আশির দশকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এলাকার খুলশিতে স্লুইস গেট নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারপর থেকেই বিপন্ন হতে থাকে করতোয়ার অস্তিত্ব। প্রবাহ না থাকায় করতোয়াকে ঘিরে শুরু হয় দখল-দূষণের উৎসব। গোবিন্দগঞ্জের খুলসি থেকে বগুড়ার শেরপুর পর্যন্ত করতোয়া এখন পরিণত হয়েছে ভাগারে। ইচ্ছে মতো নদীর বুক দখল করে প্রভাবশালীরা গড়েছেন বিভিন্ন স্থাপনা। দখল-দূষণে পিছিয়ে নেই সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও।
সমগ্র বাংলাদেশে পাউবো নদীর সর্বনাশ করেছে অভিযোগ করে ড. তুহিন ওয়াদুদ অভিযোগ করে বলেন, এই সংস্থাটি অসংখ্য নদীকে মেরে ফেলেছে। জেলা প্রশাসক হচ্ছে জেলা নদী রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক। অথচ, বগুড়া জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সকল আবর্জনা করতোয়া নদীতে ফেলা হচ্ছে। এটা হলো নদীর প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ।
বেলার নির্বাহী প্রধান রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘প্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে করতোয়া দূষণ-দখল বেড়েছে। করতোয়াকে আয়োজন করে হত্যা করা হয়েছে। এই নদীকে বাঁচানোর বিকল্প নেই।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, নদীর কোন একটি অংশ নিয়ে কাজ করলে সেটা পরিপূর্ণ হবে না। এর সাথে এ অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি জড়িত। এই কাজের জন্য সবগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দখল দূষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
প্রধান অতিথি আফসানা ইয়াসমিন বলেন, নদী না থাকলে আমরা বাঁচতে পারব না। নদী দখল দূষণমুক্ত করা কারও একার দায় না। এটা আমাদের সবার দায়। এই বিষয়ে সবার এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি খুশী কবির বলেন, নদীর নিজস্ব গতি আছে। এটা শুধু বাংলাদেশের একার বিষয় নয়। এটা আন্তর্জাতিক বিষয়। উজানের দেশ থেকে যে নদীগুলো আমাদের ভাটির দেশে আসছে সেখানে উজানে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে নদী বাচাঁনো সম্ভব হবে।