Joy Jugantor | online newspaper

বগুড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪৫ কিলোমিটারের ৪৬ স্থান ঝুঁকিপূর্ণ

আসাফ-উদ-দৌলা নিওন

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২৫ মে ২০২২

আপডেট: ১৪:১৭, ২৫ মে ২০২২

বগুড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪৫ কিলোমিটারের ৪৬ স্থান ঝুঁকিপূর্ণ

সারিয়াকান্দির সদর ইউনিয়নের তিতপরল গ্রামের যমুনা নদীর বাঁধের উপর। ছবি- ইমরান হোসাইন রুবেল

বগুড়ায় নদী তীর রক্ষা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের বাঁধের ৪৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৪৬টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু চিহ্নিত হলেও সেখানে কোনো ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়নি। এ স্থানগুলো মেরামত বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনি না নিলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের বন্যার পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে শঙ্কা পাউবোর। 

এর প্রভাব পড়বে নদীর ডান তীর অর্থ্যাৎ বগুড়ার জনপদে। এতে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ও কৃষিজ সম্পদ নষ্ট হতে পারে।   

পাউবো সূত্র জানায়, এবার বন্যার আকার বড় হতে পারে। এ জন্য বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোয় এখনি কাজ শুরু করা ভালো।  

এ দপ্তর থেকে জানা যায়, বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলা মিলে যমুনা নদীর ডান তীরের ৪৫ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। চলতি বছরে বাঁধের অন্তত ৪৬ টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সারিয়াকান্দির ঝুঁকি স্বাভাবিকভাবে বেশি থাকে।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সম্পর্কে জানতে চাইলে সারিয়াকান্দি উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাজকিয়া বলেন, উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৭ কিলোমিটার বাঁধ ঝুকিঁপূর্ণ। এরপরে কর্নিবাড়ী ইউনিয়নে প্রায় ২ কিলোমিটার এবং সদর ইউনিয়নের ৪০০ মিটার বাঁধে ঝুঁকি  রয়েছে। এগুলোতে নিয়মিত কাজ করতে হয়।

কামালপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ প্রতিবার বন্যার ঝুঁকিতে বসবাস করেন বলেন স্থানীয় চেয়ারম্যান রাছেদুজ্জামান রাছেল। তিনি জানান, তার এলাকার তিনটি ওয়ার্ডের রহদহ, কামালপুর, ইছামারা, গোদাখালি, দড়িপাড়া ও হাওরাখালি গ্রামগুলো  বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।এই কয়টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মানুষের বন্যার সময় খুব অসহায় অবস্থা সৃষ্টি হয়। 

পাউবো কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবছর নানা কারণে বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ে। বাঁধের কাছে পুকুর বা ডোবা থাকাকে ঝুঁকি হিসেবে দেখা হয়। কারণ বর্ষার সময় মাটি ধস নেমে বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে। 

এ ছাড়া ইঁদুরের গর্ত বাঁধের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। অনেকে বাঁধের ধারে অস্থায়ী ঘর করে থাকে। তাদের গোয়াল ঘর, খরের পালা থাকার কারণে সেখানে ইঁদুরের উৎপাত বৃদ্ধি পায়। বর্ষার সময় বাঁধের নিচে এই ইঁদুরের গর্ত মুহুর্তে ধস নামিয়ে দিতে পারে।

এসব বিষয় জানিয়েছেন জেলা পাউবোর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি এখনও এখনও স্থিতিশীল। বিপদ সীমার অন্তত দেড় মিটার নিচে রয়েছে। কিন্তু পানি স্থিতিশীল থাকলে বাঁধের গোড়া আরও দুর্বল হয়। 

হুমায়ুন কবির জানান, যেহেতু উজানের ঢল আগে থেকে মানছে। তাই এবার বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে বাঁধের ৪৬টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ঝুঁকির স্থানগুলোয় জিও ব্যাগ, বালুর বস্তা ও ব্লক দিয়ে মেরামত করতে হয়।

তবে চিহ্নিত হলেও এসব স্থানে এখনও কোনো কাজ শুরু হয়নি। এ প্রসঙ্গে প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের কাছে এই মুহুর্তে কাজের জন্য বাজেট নেই। আমরা ঝুঁকিযুক্ত স্থান চিহ্নিত করে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে। 

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাবে বগুড়ার যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর পানি বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবে বর্ষা মৌসুমে নদ-নদীতে বন্যা দেখা দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে উজানের ঢলের কারণেও দেশে একাধিকবার বন্যা দেখা দিচ্ছে। বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন অধিদপ্তরের প্রতিবছরের বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।