
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের রামনগর গ্রাম।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের রামনগর গ্রাম। এখানে বাসা বেঁধেছে বিরল প্রজাতির শামুকখোল পাখি। গ্রামবাসীও আদর-যত্নে আগলে রেখেছে পাখিদের। নিরাপদ আশ্রয়, মানুষের ভালবাসায় শামুকখোলদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পাখি ও মানুষের এই মিতালি এ গ্রামে প্রায় ৫ বছর ধরে চলে আসছে।
ঘন বাঁশঝাড়, আমগাছ, শিমুলগাছসহ অর্ধমাইল জঙ্গলে শামুখ খোল পাখির নিরাপদ আশ্রয়। শীতের মৌসুমে এই শামুখখোল পাখি চলে যায়। দেখা মিলে না তিন থেকে চার মাস। বর্তমানে নিরাপদ আশ্রয়ে প্রজননও করছে পাখিগুলো। ফলে, দিন দিন বাড়ছে পাখির সংখ্যা। গোটা গ্রামের মানুষ নিরাপত্তা দিয়ে আগলে রেখেছে পাখিদের। এই পাখির রাজ্যে সবাইকে স্বাগত। তবে কোনোভাবেই পাখিকে উপদ্রব করা চলবে না। শিকার নিষিদ্ধ। চলবে না বন্দুক, ইয়ারগান ও ফাঁদ বহন করা। পাখিশিকারিদের ঠেকাতে এখানে গ্রামবাসী অত্যন্ত সতেচন। শামুকখোল পাখি এলাকার মানুষের কাছে শামুক ভাঙ্গা, হাইতোলা মুখ- এসব নামেও পরিচিত। খাল-বিলের ছোট ছোট শামুক-ঝিনুক, ছোট মাছ, আর ফসলের মাঠের পোকা-মাকড় খেয়ে জীবন বাঁচায় শামুক খোল পাখি।
সরেজমিনে গিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে রেজওয়ান জানান, খুব ভোরে পাখিরা জেগে ওঠে। কিচিরমিচির করে। সকাল-বিকাল এক সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পাখিগুলো ডানা মেলে ওড়ে। পোকামাকড়সহ খাদ্যের খোঁজে মাটিতে নামে। উড়ে যায় বিলে। সন্ধ্যার আগে আগে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি ফিরে আসে নীড়ে। ৫ বছর ধরে তারা পরম মমতায় পাখির দেখভাল করে আসছেন। কামরুল, জহুরুল বলেন, গ্রামের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তার দুই ঘেঁষে জলপাইগাছ, আকাশমনিগাছ, বাঁশঝাড়, শিমুলগাছ, আমগাছ, ও জঙ্গলে পাখি বাসা তৈরি করে। ৫ বছর ধরে এখানে পাখি বসবাস করছে। একসময় অনেক প্রজাতির পাখি ছিল। এখানে শীতকালীন সময়ে অনেক প্রজাতির পাখির দেখা মেলে এখানে।
এই পাখিদের বিচরণে গাছের ফল, টিনের চালও নষ্ট হয়। এসব গ্রামবাসীদের কাছে গাসওয়া হয়ে গেছে। পাখিরা এখন তাদের জীবনের একটি অংশ। স্থানীয় বাসিন্দা হেলাল বলেন, শামুখখোল পাখির বিষ্ঠা ছড়ায় লোকালয়ে। গাছের পাতা নষ্ট হয়ে যায়। ঘরের টিন নষ্ট হয়। গাছের ফল আম, জলপাই, আমড়া এগুলো আমরা খেতে পারি না। এই পাখিরা খেয়ে ফেলে। তবে কেউ তাতে বিরক্ত হয় না। পাখিদের দেখভাল করে। নিজেরা কেউ পাখিকে বিরক্ত করে না।
গৃহবধূ মোমেনা বেগম বলেন, বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ে শামুখখোল পাখির বাস করে। ক্ষুধা পেলে অনেক পাখি উঠানে আসছে। চাল, খুদ, ভাত খায়। অন্য রকম এক মায়া পড়েছে পাখির ওপর।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ময়নুল ইসলাম তিনি বলেন, গ্রামবাসীর পাশাপাশি রামনগর গ্রামে পাখির অভয়ারণ্য গড়তে আন্তরিকতার কোন কমতি থাকবে না। প্রশাসনের দিক থেকে যত সহযোগিতা তা করবেন। নিরাপত্তা ও পাখির দেখভালের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।