
ছবি: অন্তর্জাল
একটা শকুন আমার পায়ে ঠোকরাচ্ছিল। ক্রমাগতভাবে। ইতিমধ্যেই আমার পায়ের জুতো ও মোজাগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সেটি আমার পায়ের মাংশের ওপরে আছড়ে পড়ছিল। অস্থিরভাবে আমার চারদিকে চক্কর দিচ্ছিল। বার বার। আবার ফিরে আসছিল। আমাকে ঠোকরাতে।
এক লোক আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ সে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর জিজ্ঞেস করল যে, আমি কেন শকুনটির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি না।
‘আমি উপায়হীন,’ বললাম আমি। শকুনটি প্রথম যখন আক্রমণ করতে শুরু করেছিল, আমি চেষ্টা করেছিলাম সেটিকে তাড়িয়ে দিতে। এমনকি গলা টিপে মেরে ফেলারও চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তুমি তো জানো এই জীবগুলো খুবই শক্তিশালী। সেটি আমার মুখের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। আমি তখন বাধ্য হয়ে মুখের পরিবর্তে আমার পা দুটোকে বলিদান করার সিদ্ধান্ত নিই। দেখতেই পাচ্ছ সে পা দুটোকে এর মধ্যেই ছিন্নভিন্ন টুকরাতে পরিণত করে ফেলেছে।
‘আমি অবাক হচ্ছি তুমি নিজেকে কেন এমনভাবে অত্যাচার করতে দিচ্ছ!’ লোকটি বলল। ‘একটা গুলি করলেই তো শকুনটি শেষ হয়ে যায়।’
‘সত্যিই?’ আমি বললাম। ‘তুমি কি আমার হয়ে এটা করতে পারবে?’
‘আনন্দের সাথে,’ লোকটি বলল। ‘আমাকে শুধু বাসায় গিয়ে নিয়ে ফিরে আসতে হবে। তুমি কি আমার জন্যে আধাঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারবে?’
‘নিশ্চিত করে বলতে পারছি না আমি ততোক্ষণ টিকব কিনা,’ আমি বললাম। যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে। তারপর আবার বললাম,ঠিক আছে। তুমি চেষ্টা করে দেখতে পারো।
‘আমি খুব তাড়াতাড়িই ফিরে আসব,’লোকটি বলল।
এই আলাপচারিতার সময়ে শকুনটি শান্তভাবে আমাদের শুনছিল। একবার সে আমার দিকে এবং একবার লোকটির দিকে তাকাচ্ছিল। আমার মনে হলো যে, সে আমাদের আলোচনার সবকিছুই বুঝতে পেরেছে। পরক্ষণেই সে পাখায় ভর করে পেছনের দিকে উড়ে গেল। বেশ দূর পর্যন্ত। সম্ভবত পাখায় গতিসঞ্চার করার জন্যে। তারপর বল্লম নিক্ষেপকারীর গতি নিয়ে তার ঠোঁটকে আমার মুখের ভেতরে ঢুকিয়ে দিল। নীচে পড়ে যেতে যেতে অনুভব করলাম আমি রক্তের সাগরে ডুবে যাচ্ছি। অপ্রত্যাবর্তনীয়ভাবে। আমার মুখ থেকে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসা রক্ত প্রতিটা গভীরতাকে পূর্ণ করার পর উপকূল ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রবল বন্যা হয়ে।
মূলঃ দ্য ভালচার, লেখক ফ্রানজ কাফকা
অনুবাদঃ মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ