
আনা ফ্রাঙ্কের বাবা অটো ফ্রাঙ্কও বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি জানতেন
বিশ্বজুড়ে এক প্রভাবশালী লেখকের নাম আনা ফ্রাঙ্ক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ছোট্ট আনা ডায়েরি লিখে পৃথিবীজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলেছিলেন। ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ১৫ বছর বয়সে নাৎসি বাহিনীর বন্দিশিবিরে মারা যান আনা। তার মৃত্যুর পর তার ডায়েরি প্রকাশিত হলে নাৎসি শিবিরে ইহুদি নির্যাতনের চিত্র আরও স্পষ্ট হয়। সাহিত্যাঙ্গন থেকে শুরু করে সর্বত্র আজও আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি প্রাসঙ্গিক।
আনা ফ্রাঙ্কের মৃত্যুর ছয় মাস আগে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের একটি গোপন স্থান থেকে তার পরিবারের সদস্যসহ তাকে আটক করেছিল নাৎসি বাহিনীর সদস্যরা। তবে কীভাবে তারা ধরা পড়েন, কে করেছিল বিশ্বাসঘাতকতা তা নতুন এক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এই তদন্তকারী দলে রয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ইতিহাসবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। অত্যাধুনিক নানা কৌশল ব্যবহার করে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়টির উত্তর খুঁজতে সময় লেগেছে ছয় বছর।
তদন্ত টিম বলছে, ভ্যান ডেন বার্গ নামে এক ইহুদি নিজের পরিবারকে বাঁচাতে আনা ফ্রাঙ্ক ও তার পরিবারকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন সেসময়। ভ্যান ডেন বার্গ আমস্টারডামের ইহুদি কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। এই কাউন্সিলকে ইহুদি অধ্যুষিত এলাকায় নাৎসী নীতি বাস্তবায়নে বাধ্য করা হয়েছিল সেসময়। ১৯৪৩ সালে কাউন্সিল ভেঙে দেওয়া হয় এবং এর সদস্যদেরকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
কিন্তু অনুসন্ধানের পর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, ভ্যান ডেন বার্গকে ওই সময় ক্যাম্পে পাঠানো হয়নি। তিনি তখন বহাল তবিয়তে আমস্টারডামেই বসবাস করছিলেন।
সিবিএস নিউজের ‘সিক্সটি মিনিটস’ নামে একটি অনুষ্ঠানে এফবিআই-এর সাবেক এজেন্ট ভিন্স প্যানকোক বলেন, ভ্যান ডেন বার্গ যখন সব সুরক্ষাই হারিয়ে ফেলেন, তখন তার ক্যাম্পে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। তখন তাকে নাৎসীদেরকে মূল্যবান কোনো কিছু দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। খুব সম্ভবত আনা ফ্রাঙ্ক ও তার পরিবারের খোঁজ দেওয়ার বিনিময়ে তিনি ও তার স্ত্রী নিরাপদে থেকে যেতে পেরেছিলেন।
তদন্ত টিম আরও জানায়, আনা ফ্রাঙ্কের বাবা অটো ফ্রাঙ্কও বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি জানতেন। তবে সেটি গোপন রেখেছিলেন তিনি। তারা বলছেন, পূর্বের তদন্তের নথিপত্র ঘেটে দেখা যাচ্ছে যে, অটো ফ্রাঙ্কের কাছে পরিচয়হীন একটি চিরকুট এসেছিল। ভ্যান ডেন বার্গই যে বিশ্বাসঘাতক, তা জানিয়ে দিতেই ওই চিরকুট পাঠানো হয় বলে জানা যায়।
ভিন্স প্যানকোক আরও বলেন, ইহুদি বিদ্বেষের কারণে হয়ত নাম প্রকাশ না করা হতে পারে। অটো ফ্রাঙ্ক হয়ত মনে করেছিলেন, বিশ্বাসঘাতকের নাম প্রকাশ করলে তা শুধু আগুনে ঘিই ঢালবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে ভ্যান ডেন বার্গ একজন ইহুদি ছিলেন। হতে পারে নাৎসিরা তাকে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছিল যে জীবন বাঁচাতে একটা কিছু করতেই হতো তাকে।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডি ভোকসক্রান্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল যে, ভ্যান ডেন বার্গের মৃত্যু হয় ১৯৫০ সালে।
এক বিবৃতিতে আনা ফ্রাঙ্ক হাউস মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তদন্তকারী দলের কাজের অভিভূত। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক রোনাল্ড লিওপোল্ড বলেন, নতুন এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ নতুন তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং একটি অনুমান তৈরি করেছে যেটি আরও গবেষণা করে দেখা যেতে পারে। তবে তারা সরাসরি তদন্ত কাজে যুক্ত ছিলেন না। যদিও তদন্ত দলটিকে নানা নথি ও মিউজিয়াম ব্যবহার করতে দিয়ে সহায়তা করেছে আনা ফ্রাঙ্ক হাউজ মিউজিয়াম।
সূত্র: বিবিসি