Joy Jugantor | online newspaper

লবণকে অস্ত্র বানিয়ে যুদ্ধ 

ফিচার ডেস্ক 

প্রকাশিত: ০১:২৬, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২

লবণকে অস্ত্র বানিয়ে যুদ্ধ 

লবণকে অস্ত্র বানিয়ে যুদ্ধ।

সেনাবাহিনী গোলা-বারুদ দিয়ে যুদ্ধ করে জয় লাভ করে, তারপর ক্ষমতার সিংহাসনে বসে। যুগ যুগ ধরে এমন নিয়মই চলে এসেছে। কিন্তু শুধুমাত্র লবণকে অস্ত্র বানিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় এমনটা শুনেছেন কখনো? অবাস্তব মনে হলেও এটাই সত্যি।

এই পদ্ধতির প্রয়োগ হয়েছিল ১৮৬১ সাল থেকে প্রায় চার বছর ধরে চলে আসা আমেরিকার গৃহযুদ্ধে। যুদ্ধের দুই পক্ষ ছিল ইউনিয়ন এবং ফেডারেলরা। ইউনিয়নের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা এই গৃহযুদ্ধ চলাকালীন খেয়াল করেন, শুধু সেনার বলে নয়, জিততে গেলে অন্য পথ নিতে হবে।

শত্রু পক্ষের সেনাদের জীবন এই লবণের উপরেই নির্ভর করত। যুদ্ধ চলাকালীন সেনারা তাদের সঙ্গে মাংস থেকে শুরু করে অন্যান্য খাবার সঞ্চয় করে রাখতেন। এই বিপুল পরিমাণ খাবার সঞ্চয় করার জন্য প্রয়োজন ছিল লবণের। বরফের বদলে তখন লবণ ব্যবহার করেই খাবার সংরক্ষণ করে রাখা হত। 

ইউনিয়নের কর্তারা ভাবলেন, যদি কোনো ভাবে লবণের অভাব তৈরি করা যায়, তবে দক্ষিণের সেনাবাহিনীর উপর এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। সাউথ ক্যারোলিনা, ভার্জিনিয়া, ফ্লোরিডা, আলাবামা, লুইজিয়ানা, টেক্সাস এবং দক্ষিণের আরো কয়েকটি জায়গায় লবণের প্রাচুর্য ছিল প্রচুর। এখানকার লবণের খনি থেকেই সেনারা লবণ সংগ্রহ করত। ইউনিয়নের নেতারা ভাবলেন, যদি এই খনিগুলি ধ্বংস করা যায়, তাহলে সেনাবাহিনী লবণের অভাবে খাদ্য স়ঞ্চয় করে রাখতে পারবে না। ফলে এক জায়গায় বেশি দিন থাকাও তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। যেমন ভাবা তেমন কাজ। শুধু লবণের ব্যবসাতেই নয়, তুলা, ময়দা ও কফির ব্যবসাতেও এগিয়ে ছিল আমেরিকার দক্ষিণের রাজ্যগুলি। গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এই জিনিসগুলির উৎপাদনে বাধা দেওয়া শুরু হয়।

লবণের খনিগুলি একে একে ধ্বংস করতে থাকে ইউনিয়ন। এর ফলে বাজারে লবণের অভাব দেখা দেয়। যুদ্ধের শুরুতে ২০০ পাউন্ড ওজনের লবণের দাম ৫০ সেন্ট থাকলেও বছর ঘুরতেই সমপরিমাণ লবণের দাম গিয়ে দাঁড়ায় ২৫ ডলারে! পেশা বিশেষে লবণের দামও বদলাতে থাকে। সাধারণ পরিবারের কেউ চার গ্যালন লবণ কিনতে চাইলে তাদের আড়াই ডলার দিতে হত। কোনো বিধবা নারী যার ছেলে সেনাবাহিনীতে কর্মরত, তিনি সমপরিমাণ লবণ কিনতে চাইলে তাকে এক ডলার দিতে হত। 

ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, ভার্জিনিয়ার লবণ খনিগুলো ধ্বংস করার সঙ্গে সঙ্গে ইউনিয়ন নিজেদের এলাকায় লবণ উৎপাদনে তৎপর হয়ে ওঠে। লবণের অভাব দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দামও বেড়ে যাওয়ায় সেনাদের পক্ষে আর খাবার জমিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। এই ভাবে শুধুমাত্র লবণ-শক্তিতে ভর করে বিপক্ষ সেনাদের দুর্বল করে দিয়েছিল ইউনিয়ন।

লুইজিয়ানার আভেরি দ্বীপপুঞ্জ লবণ উৎপাদনের প্রধান খনি ছিল। সেই খনিও ধ্বংস করে দেওয়ায় সেই খনির ম্যানেজার এডমান্ড ম্যাকলেনি ওই জমিতে মরিচের চাষ করতে শুরু করেন। ১৮৬৮ সাল থেকে এই আভেরি দ্বীপপুঞ্জ আর লবণের জন্য নয়, বরং টাবাস্কো হট সস উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত।

সূত্র: আনন্দবাজার