Joy Jugantor | online newspaper

বগুড়ায় ঝড়-বৃষ্টিতে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার ধান নষ্ট 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৫১, ১৮ মে ২০২২

আপডেট: ০৭:৩০, ১৯ মে ২০২২

বগুড়ায় ঝড়-বৃষ্টিতে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার ধান নষ্ট 

বগুড়া সদর উপজেলার কৈচর এলাকায় কাদাপানিতে ধান কাটছেন শ্রমিকরা। ছবি-জয়যুগান্তর।

ঝড়-বৃষ্টিতে বগুড়ায় বিঘা প্রতি গড় ফলন ৩ মণ কমেছে। এ হিসাবে জেলায় লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৪২ লাখ ১৫ হাজার মণ ধান কম পাচ্ছেন কৃষকেরা। টাকার অংকে এর পরিমাণ অন্তত ৪৫৫ কোটি টাকা। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যের বিশ্লেষণে এসব জানা গেছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষতির এ হিসাব স্থির থাকলে জেলায় সর্বোচ্চ প্রায় ৮০ শতাংশ ফলন অর্জন করা সম্ভব হবে। 

তবে কৃষকদের মতে, ক্ষতির এই পরিমাণ আরও বেশি। তাদের হিসাবে কৃষকেরা বিঘায় অন্তত ৮ মণ ধান কম পেয়েছে। কৃষকরা জানান, ঈদের আগে ও পরে বগুড়ায় দুটি বড় ঝড় হয়। এতে তাদের জমির ধান মাটিতে পড়ে যায়। কিন্তু তখনও ধান কাটার উপযোগী ছিল না। এ ছাড়া ঝড়ের পাশাপাশি বৃষ্টিতে ধানগুলো পানিতে ডুবে যায়।

পরবর্তীতে শ্রমিক সংকটে ধান সময় মতো না কাটতে পেরে জমিতেই সেগুলোর গাছ উঠে। এতে অনেক কৃষক নিজেদের জমির পুরো ধান তুলতে পারেননি।

এমনি একজন শাজাহানপুরের বয়রাদীঘি এলাকার শামিম আহমেদ। তিনি দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছিলেন। ঈদের আগের ঝড়ে ধান পড়ে গেলেও শ্রমিক সংকটের সপ্তাহ খানেক আগে সেগুলো কাটতে পারেন। 

তিনি জানান, ঈদের আগে ঝড়ে জমির ধান মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। সে সময় শ্রমিক পাওয়া যায়নি। পরে প্রতি বিঘায় ৬ হাজার টাকা খরচে ধান কাটা হয়। এক বিঘা থেকে ধান পেয়েছেন ১২ মণ। আরেকটি থেকে ১৬ মণ। সব মিলে তিন ভাগ ধানের এক ভাগ মাঠেই ফেলে আসতে হয়েছে।

শামিমের ধান ঘরে তুলতেই ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু মাঠ থেকে পাওয়া ধান বেচে সেই টাকা তোলা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে এ কৃষকের। 

একই রকম অবস্থা বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার নাগরকান্দি গ্রামের কৃষক সুবল চন্দ্রের। তিনি জানান, এবার ৫০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেন। মাঠের সব ধান এখনও কাটা হয়নি। কাটার পর বিঘায় ১৪ থেকে ১৫ মণ ধান পেয়েছেন।

এছাড়া বেশি কিছু জমির ধান পচে গেছে। সেগুলো জমি থেকে তোলাও হয়নি। এই ধান পচার জন্য সুবল চন্দ্র দায়ি করেন সময়মতো শ্রমিক না পাওয়া। 

কাহালু উপজেলার এরুল গ্রামের মোহাম্মদ ইনছান ৩০ বিঘা জমি পত্তন কৃষিকাজ করেন। তিনি ১৫ বিঘা জমিতে জিরাশাইল (মিনিকেট) জাতের ধান চাষ করেছিলেন। এ ১৫ বিঘার ধানই ঝড়-বৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়।

ইনছান বলেন, পানিতে পচে বিঘায় আরও ৪ থেকে ৫ মণ ধান নষ্ট হয়েছে। আবার ধান কেটে নিয়ে আসার সময় আরও কিছু নষ্ট হয়। যত বেশি দিন পানিতে থাকবে, তত নষ্ট হবে। এমন পরিস্থিতিতে বিঘায় প্রায় ৪ মণ ধান নষ্ট হতে পারে।

ধানের গাছ ওঠা নিয়ে তিনি বলেন, পানি পাওয়ায় এসব ধানের গাছ গজিয়ে গেছে। এতে খুব একটা সমস্যা হবে না। তবে কড়া রোদ দরকার। রোদ না পেলে চালের মান ভালো থাকবে না। বিক্রিও করতে পারবো না।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যে জানা যায়, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৪০ হেক্টর জমিতে বেশি ধান আবাদ হয়েছে। জেলায় ধান চাষ করা হয় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৮ লাখ ৭ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন।

মঙ্গলবারের হিসাব মতে, ৬৬ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। এতে গড় ফলন পাওয়া যাচ্ছে ৩ দশমিক ৮ মেট্রিক টন করে।

বগুড়ায় হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয় ৪ দশমিক ৩ মেট্রিক টন। আর বিঘা হিসাবে ২১ মণ ধান। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ফলন পাওয়া যাচ্ছে বিঘায় ১৯ মণ করে।   

ঈদের আগে ও পরের ঝড়-বৃষ্টিতে জেলায় ১৬ হাজার ৬১৩ হেক্টর বোরো ধান আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪১৯ হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে।

এসব জমির মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে আদমদীঘিতে, প্রায় ১১২ হেক্টর। এর পর সোনাতলায় ৬১, সদরে ৫০, শেরপুরে ৪৮ হেক্টর, দুপচাঁচিয়ায় ৩৮ এবং ধুনটে ৩২ হেক্টর জমি। বাকি উপজেলায় কিছু পরিমাণ জমির ফসল নষ্ট রয়েছে।

উপজেলা থেকে প্রতিদিনকার তথ্যের বরাতে এসব জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান। তিনি জানান, ঝড়-বৃষ্টি আক্রান্ত ধানের মধ্যে প্রায় ৪১৯ হেক্টর মানে প্রায় তিন হাজার ১৪৫ বিঘা একেবারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ফরিদুর রহমান আরও জানান, গড় ফলন ৩ দশমিক ৮ মেট্রিক টন থাকলে জমিতে ধান পাওয়া গেলে লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ ধান পূরণ হতে পারে।

বুধবারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গড় ফলন বিঘায় ৩ মণ করে মোট ৪২ লাখ ১৫ হাজার ৬০ মণ ধান কম পাচ্ছেন কৃষকেরা। সরকারি ধান ক্রয়মূল্য ২৭ টাকা দরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫৫ কোটি ২২ লাখ ৬৪ হাজার ৮০০ টাকা।

এ বিষয়ে বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. এনামুল হক জানান, জেলার বোরো ধানের পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে। মাঠের ৬৬ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়েছে। যে ধান পরে চাষ করা হয়েছিল, সেগুলোই শুধু জমিতে আছে। মাঠ পর্যায়ে জরিপের কাজ চলমান আছে। আরও কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। 

এনামুল হক বলেন, ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হিসাবের পাশাপাশি কৃষকদের তালিকা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাদের সহযোগীতা করার বিষয়টি মাথায় রয়েছে।