Joy Jugantor | online newspaper

সৌন্দর্যের উপমায় প্রেমের দেবী ‘আফ্রোদিতি’

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ১ ডিসেম্বর ২০২০

আপডেট: ০৯:৪৮, ১ ডিসেম্বর ২০২০

সৌন্দর্যের উপমায় প্রেমের দেবী ‘আফ্রোদিতি’

ডেস্ক রিপোর্ট

এই নারী ভাষ্কর্য বলতে গেলে অনেকেই দেখেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর এবং আলোচিত নারী ভাষ্কর্যের মধ্যে অন্যতম এটি। ধারণা করা হয়, মায়াবী মুখের এই নারী প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি।

মানবীর সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে সাহিত্য কিংবা গান, কবিতা। সুন্দরী নারীর ভালোবাসা পেতে যুগে যুগে হয়েছে অনেক যুদ্ধ। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর নারী রানি ক্লিওপেট্রা, হেলেন কিংবা পদ্মাবতীকে পেতে বীরেরা যুদ্ধ পর্যন্ত করেছেন। এডগার এলান পোর ‘শি’ তে অমর সৌন্দর্যের অধিকারিণী যুগের পর যুগ রাজ্য শাসন করেছিলেন তার অমোঘ রূপ আর ব্যক্তিত্বের দ্যুতিতে।

তবে এতো গেল মর্ত্যের প্রেমযুদ্ধের কথা। দেবরাজ্যও এর ব্যতিক্রম ছিল না। প্রেম,কাম, যৌনতার এই দেবী গোটা দেবপুরীতে ফেলে দিয়েছিলেন সাড়া। তার স্বামী হওয়ার জন্য ব্যগ্র ছিল প্রায় প্রতিটি দেবতা। স্বর্গীয় সৌন্দর্য আর প্রেমের দেবী হিসেবেই গ্রিক ও রোমান পুরাণে জনপ্রিয় আফ্রোদিতি বা ভেনাস।

আফ্রোদিতি আসলেই দেবী ছিলেন কিনা কিংবা এই ভাষ্কর্যের নারীই সেই দেবী কিনা তার কিন্তু সঠিক কোনো প্রমাণ নেই।

সবই মোটামুটি কল্প কাহিনী এবং মানুষের ধারণা থেকেই এসেছে। আবার এই নারীর ব্যাপারে কিছু কিছু গল্প উপন্যাসে পাওয়া গেছে কিছু তথ্য। সব মিলিয়েই আসলে তার একটি পরিচয় পাওয়া যায়।

আবার হতে পারে কোনো শিল্পীর কল্পনার নারী তিনি। যাকে সেই শিল্পী তৈরি করেছিলেন নিজের মনের মতো করে। তবে কল্পকাহিনী মতে, সৌন্দর্যের এই দেবীর জন্ম নিয়ে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব প্রচলিত আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাকে দেবরাজ জিউস ও দেবী ডিওনের কন্যা মেনে নেয়া হয়। এছাড়া ইউরেনাসের কাহিনীও বেশ আলোচিত।

এতে জানা যায়, সময়ের দেবতা ক্রনস ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তার পিতা ইউরেনাসের জননাঙ্গ কেটে পৃথিবীর সপ্তসমুদ্রে ফেলে দেন।

ইউরেনাসের প্রভাবে ক্রমে সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে আর এর মধ্য থেকেই উঠে আসে অনিন্দ্য সুন্দরী এক দেবী। তখন তিনি ছিলেন একটি ঝিনুকের মধ্যে। ঝিনুকটি ভাসতে ভাসতে সাইপ্রাস দ্বীপের কাছে চলে যায়। আর সেই ঝিনুকের ভেতর থেকেই পূর্ণ যৌবনা দেবী আফ্রোদিতি বেরিয়ে আসেন। আর এ কারণে দুটি দ্বীপই পবিত্র দ্বীপ হিসেবে গণ্য হয়। সাইপ্রাসের নাম অনুসারে তাকে সাইথেরিয়া বা সাইপ্রীয় নামেও ডাকা হয়। আবার আফ্রোদিতি বা ভেনাসও বলা হয়। গ্রিক ভাষায় আফ্রোদিতি শব্দের অর্থই হলো ‘সমুদ্রোদ্ভুতা’ মানে যার জন্ম সমুদ্র থেকে। ভেনাস নামটি রোমানদের দেয়া। এই ভাষ্যে ভেনাসের বাড়ি সাইথেরা ও সাইপ্রাস দ্বীপে। এর মাধ্যমেই বোঝা যায় তিনি ইজিয়াস সাগর পার হয়ে মূল ভূখণ্ডে আসেন। আর উলঙ্গ অবস্থায় পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং কাম এবং যৌনতার দেবী বলা হওয়ার কারণেই তার সব ছবি এবং ভাষ্কর্য করা হয় উলঙ্গ।

তাকে বন্দনা করা হতো সৌন্দর্য ও প্রেমের দেবী হিসেবে। তবে একসময় আফ্রোদিতিকে গ্রিকরা সমুদ্রের দেবী হিসেবে পূজা করত। রোমান পুরাণে তার নাম ভেনাস। রোমে তিনি তিন মাতৃদেবীর অন্যতম এবং সেখানেও তিনি প্রেমের দেবী রূপে পূজিত। তিনি ব্যাবিলনীয় এবং আসিরীয় পুরাণের প্রেম ও যুদ্ধের দেবী ইশতারের সমতুল্য। প্রাচীন গ্রিসের স্পার্টায় তিনি প্রেম ও যুদ্ধদেবী হিসেবে পূজিত হতেন।

গ্রিক কবি হিসিওড প্রথম তত্ত্বের পক্ষে গেলেও সাহিত্যিক হোমার ইউরেনাসের তত্ত্বেই বিশ্বাসী। তবে এটাই শেষ নয়। দার্শনিক প্লেটো আরও দুই ধাপ এগিয়ে আরেক তত্ত্ব দাঁড় করান। তার মতে একই নামে দুই আফ্রোদিতি বিদ্যমান ছিল দেবালয়ে। এর একজন ছিল ‘স্বর্গীয় প্রেমের দেবী’, আর অপরজন ছিল ‘দৈহিক প্রেমের দেবী’। এই দুই ধারার প্রথমটি পরিচিত ‘ইউরানিয়াম’নামে, যা প্রেমের বিশুদ্ধ রূপটি তুলে ধরে। অন্যদিকে ‘প্যান্ডিমিয়ান’ হলো দেহগত ইন্দ্রিয় লালসার রূপ।

গ্রিক ও রোমান পুরাণ সাহিত্যে আফ্রোদিতির উত্থান ঠিক কবে হয়েছিল নিশ্চিত করে বলা না গেলেও, যেসব এলাকায় এই দেবীর পূজা করা হতো তা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। গ্রিস এবং পূর্ব- ইউরোপেই কাম ও প্রেমের দেবীর প্রথম সাক্ষাত পাওয়া যায়। সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতকের দিকে রূপসী পূজারী হয়ে ওঠে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।

খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডেটাসের মতে সবচেয়ে পুরনো আফ্রোদিতি-অর্চনার তথ্য পাওয়া যায় এসকেলনে (বর্তমান ইসরায়েল)। তবে এই দেবীর উত্থান আঞ্চলিক রীতিতেও হতে পারে, যেমন- ভেনাসকে ‘সাইপ্রিস’ নামেও ডাকা হয়। এর মানে ‘সাইপ্রাস এর’।

আফ্রোদিতি বা ভেনাসকে বিভিন্ন নান্দনিক নামেও ডাকা হয়। যেমন- আফ্রোদিতি পণ্টিয়া বা গভীর সমুদ্রের রানি, আফ্রোদিতি ইউপ্লোইয়া বা শুভ সমুদ্রযাত্রার দেবী। এছাড়া ভেনাস নামটিও এসেছে সবচেয়ে উজ্জ্বল গ্রহ ভেনাসের নাম থেকে। প্রাচীনকালে নাবিকরা এই গ্রহের অবস্থান নির্ণয় করেই সমুদ্রপথে চলাচল করতো।

দেবরাজ্যে তখন ভীষণ কাড়াকাড়ি। সকলেই রুপের আধার ভেনাসের প্রেমে মশগুল। সে এক বিশৃঙ্খল অবস্থা। সেই অবস্থাকে সুস্থির করতেই জিউস আর হেরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন আফ্রোদিতির বিয়ে দেবেন আগুন ও শিল্পের দেবতা হেফাইস্টুসের সঙ্গে। ভেনাস আগে থেকেই ছিল ছলাকলায় পারদর্শী। জাদুকরী ক্ষমতার গুনে ক্ষণিকের মাঝেই প্রেমে ফেলত পুরুষদের।

চিত্রকরদের হাতে এখনও নিয়ত রঙিন হচ্ছেন আফ্রোদিতি। তাকে কেন্দ্র করে এত ছবি আঁকা হয়েছে যে সেগুলোর তালিকা করতেও গলদঘর্ম হতে হবে। তবে ১৪৮৬ সালে অর্থাৎ রেনেসাঁ কালে স্যান্ড্রো বত্তিচেলির ‘ বার্থ অফ ভেনাস’ অন্যরকম আবেদন সৃষ্টি করেছে এই অপার রূপের ও প্রণয়ী দেবীর।