Joy Jugantor | online newspaper

রাজশাহীতে ফরিয়াদের নিয়ন্ত্রণে আমবাজার, চাষিরা বিপাকে

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ৯ জুন ২০২১

রাজশাহীতে ফরিয়াদের নিয়ন্ত্রণে আমবাজার, চাষিরা বিপাকে

ফাইল ছবি।

রাজশাহী অঞ্চলে এবার আমের ফলন ভালো হলেও করোনায় দরপতনে চাষিদের মুখে হাসি ফোটেনি। আমচাষিদের অভিযোগ, করোনার কারণে বাইরের ক্রেতার অভাবে আমের বাজার ও বিপণন নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় আড়তদার ও ফড়িয়ারা। এতে করে অনেক কৃষক আমের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে আমচাষিদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। তাদের ভাষ্য, ‘হাটে আম আছে, ক্রেতা নেই।’

আমচাষিরা বলছেন, রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এবং যাত্রী পরিবহন সংকটে বাইরের ক্রেতারা হাটে আসতে পারেননি। এ সুযোগে স্থানীয় ফড়িয়া/আড়তদাররা যারা অন্য সময়ে বাইরের ব্যবসায়ীদের কমিশনে আম কিনে দিতেন, তারাই এখন আম বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা চাষিদের কাছে কম দামে আম কিনে বেশি দামে বাইরের ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করছেন। বাইরের ক্রেতা না আসায় অনেক আমচাষি বাগানেই স্থানীয় ফড়িয়া/আড়তদারের কাছে আম বিক্রি করে দিচ্ছেন।

সস্প্রতি রাজশাহীর বৃহত্তম আমের হাট বানেশ্বরে গিয়ে দেখা যায়, হাটে আসা শত শত ব্যাটারিচালিত ভ্যান ভর্তি আম। চাষিরা বাগান থেকে ভ্যানে করে আম নিয়ে হাটে এসে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু আমের সরবরাহের তুলনায় ক্রেতা অনেক কম। বানেশ্বর হাটে আসা চারঘাটের আমচাষি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, কিছু ক্রেতা আমের দাম বললেও তিনি আরো দামের আশায় অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, হাটে বাইরের ক্রেতা না থাকায় আমের দাম কম বলা হচ্ছে। অথচ সাধারণ সময়ে তিনি বাগান থেকে হাটে আনার পথেই ক্রেতারা আম কিনে নিয়ে যেতেন। আবার হাটে আসতেই ব্যবসায়ীরা আম কিনে নিয়ে যেতেন। কিন্তু, এবার আম নিয়ে হাটে বসে থাকতে হচ্ছে।

আরেক আমচাষি জয়নাল বলেন, তারা যখন হাটে আম বিক্রি করতে যান, তখন দাম কম। আবার তারা যখন হাটে আম কিনতে যান, তখন দাম বেশি। তিনি বলেন, গতবছর প্রতিটন লক্ষ্মণভোগ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এবার একই আম প্রতি টন ২২ হাজারের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে না। একইভাবে গতবছর খিরসাপাত বা হিমসাগর প্রতি টন ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এবার প্রতি টন ৫০ হাজারেও বিক্রি হচ্ছে না।

স্থানীয় আম ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমের ক্রেতা আসলেও তাদের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। তিনি স্বীকার করেন, এবারও আমের দাম ভালো হলেও চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী/ফড়িয়ারা ঠিকই দাম পাচ্ছেন। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে ল্যাংড়া এবং আমের রাজা ফজলি জুনের শেষের দিকে বাজারে আসবে।

এবার আমের হাট সম্পর্কে পুঠিয়ার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাস বলেন, গত বারের তুলনায় এবার আমের সরবরাহ বেশি। তবে সেই তুলনায় আমের ক্রেতা অনেক কম। এছাড়া করোনার কারণে অনেক আমচাষি ও উদ্যোক্তার সৃষ্টি হয়েছে। এটা একদিকে ভালো মনে হলেও আমচাষিদের জন্য নতুন সমস্যার সৃষ্টি করেছে। কারণ, এবার অনেক ব্যবসায়ীই অনলাইনে অর্ডার দিয়ে আম কিনছেন।

অন্যদিকে, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এবং ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু হওয়ায় অনেকেই অনলাইনে অর্ডার করে কুরিয়ার অথবা ট্রেনযোগে আম সংগ্রহ করছেন। তিনি আরো জানান, গত বছর প্রতিদিন বানেশ্বর থেকে প্রায় ৩০০ ট্রাক আম নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যেত। কিন্তু এবার প্রতিদিন মাত্র ৩০/৪০টি ট্রাক আম নিয়ে বানেশ্বর থেকে রাজশাহীর বাইরের জেলায় যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাজশাহীর অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত বড় ঝড়-বৃষ্টি না হলে এবার বৃহত্তর রাজশাহীতে আমের উত্পাদন প্রায় ১ লাখ টন বাড়বে। এবার নাটোর, নওগাঁ, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮৩ হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমিতে ৮ দশমিক ৫২ লাখ টনেরও বেশি আম উত্পাদন হতে পারে। তিনি জানান, গত বছর এ অঞ্চলে ৭ দশমিক ৭৬ লাখ টন আম উত্পাদন হয়েছিল। দেশের মোট উত্পাদনের ৪০ ভাগ আম রাজশাহী অঞ্চলে হয়।