ছবি সংগৃহীত
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে দীর্ঘদিন থেকে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা নেই। এদিকে মোহাম্মদপুর, পলাশবাড়ী ও শতগ্রামসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নেমে যাচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় রোপা আমনসহ অন্যান্য ফসল সম্পূর্ণভাবে সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিত সেচযন্ত্র ব্যবহারের ফলে কৃষকের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। খরার ঝুঁকিতে থাকা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় থাকা চাষাবাদসহ জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে তীব্র গরমের কারণে আগাম জাতের আমন ধানে চিটা দেখা দেওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে এই অঞ্চলে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। গত আগস্ট মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চেয়ে তুলনামূলক কম থাকায় জনজীবনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, আমন ধান চাষ করে বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছেন স্থানীয় কৃষকরা। দুঃচিন্তার ভাঁজ পড়ছে কৃষকদের কপালে। অনাবৃষ্টিতে ধানী জমিগুলো ফেটে যাচ্ছে। কৃষি জমি শুকিয়ে ধানের গাছে লালচে হয়ে যাচ্ছে। ফসলের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। একমাত্র পানির জন্য কৃষকের আমন ধানের ভালো ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে বহু কৃষক।
কৃষকরা জানান, প্রচণ্য তাপ দাহ, তীব্র খরা আর অনাবৃষ্টিতে একদিকে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে। অন্যদিকে, হুমকির মুখে পড়েছে আমন চাষ। ধানের ফসল নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর সভার কৃষকরা।
উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের কৃষক সতীয় বর্মন বলেন, আমরা বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি দিয়ে আমন চাষ করতাম। ধান লাগানোর পর থেকে বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে গিয়ে জমি ও ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে। সেচের পানি নিতে বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে। তাই চাষের খরচ অনেক বেশি হচ্ছে।
উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের বেলতলী গ্রামের রিকশাচালক আবু সাঈদ জানান, প্রখর রোদ আর প্রচণ্ড দাবদাহে নাজেহাল অবস্থা। সারাদিন রিকশা চালিয়ে বাড়ি ফিরে অস্বস্তি লাগছে। গরমের কারণে আয় রোজকারও কম হচ্ছে। কয়দিন থেকে দুপুর হলেই রাস্তাঘাটে মানুষ শূন্য হয়ে যাচ্ছে।
পৌরশহরের হাটখোলা এলাকায় আখের রস বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, বেশকিছু দিন থেকে প্রচণ্ড গরমে জনজীবনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে আখের রস বিক্রি বেড়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় আখ সংকট দেখা দিয়েছে তাই আধার বেলা ব্যবসা করে বাড়ি ফিরে আসছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছর উপজেলায় আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯ হাজার ৫শ ৭৫ হেক্টর কৃষি জমি। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জন হয়েছে ২৯ হাজার ৫শ'৭৫ হেক্টর জমিতে। বর্তমানেও নিম্ন এলাকায় জমিতে টুকটাক আমন রোপণ করছেন কৃষকরা। তবে দীর্ঘদিন থেকে অনাবৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা।