Joy Jugantor | online newspaper

অভিযানে পাওয়া আলু বগুড়ার মহাস্থান হাটে ৩৩ টাকা কেজিতে বিক্রি 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:৪১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

অভিযানে পাওয়া আলু বগুড়ার মহাস্থান হাটে ৩৩ টাকা কেজিতে বিক্রি 

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিবগঞ্জের মহাস্থান হাটে আলু ৩৩ টাকা কেজি করে বিক্রি করা হয়।

হিমাগারে থেকে গোপনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে আলু বিক্রয় করছিলেন বগুড়ার শিবগঞ্জের কয়েকজন মজুতদার। খবর পেয়ে তাদের কাছে থাকা ৬৭৫ বস্তা স্টিক আলু উদ্ধার হয়। সেগুলো নিজ জিম্মায় নিয়ে পাইকারদের মাধ্যমে মাইকিং করে ৩৩ টাকা কেজি দরে বিক্রির ব্যবস্থা করে উপজেলা প্রশাসন। 

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিবগঞ্জের মহাস্থান হাটের নয় জন পাইকারী ব্যবসায়ী এই আলু বিক্রয় করে। এই পাইকাররা প্রতি কেজি সাড়ে ২৮ টাকা মূল্যে ৬৭৫ বস্তা আলু ক্রয় করে নেন। প্রতি বস্তায় ৬০ কেজি হিসেবে প্রায় ৪০ হাজার কেজি আলু বিক্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়।

শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. তাহমিনা আক্তার আলুর বাজার পরিস্থিতি দেখতে অভিযানে যান। অভিযানে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে আলুর দাম বেশির কারণ জানতে চান ইউএনও। তখন কয়েক জন মজুতদারের নাম উঠে আসে। তথ্য অনুযায়ী শিবগঞ্জের সাহা লিমিটেড ও হিমাদ্রি লিমিটেড হিমাগারে অভিযান চালানো হয়। 

অভিযানে সেই মজুতদারদের ডেকে আনা হলে অতিরিক্ত মূল্যে আলু বিক্রির সত্যতা পাওয়া যায়। এ সময় তিন মজুতদারের কাছে ৬৭৫ বস্তা (স্টিক) আলু পাওয়া যায়। 

এর মধ্যে সাহা লিমিটেড হিমাগারে পরিতোষ কুমারের কাছে ১৯০ বস্তা, অর্জুন সরকারের কাছে ২৮৫ ও হিমাদ্রি লিমিটেড হিমাগারে আফজাল হোসেনের কাছে ৩০০ বস্তা আলু পাওয়া যায়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, পাইকারী ব্যবসায়ীরা ৩৩ টাকা কেজি দরে খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের কাছে এই আলু বিক্রি করেছেন। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা এই আলু সরকার–নির্ধারিত ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবেন।


এই আলুগুলো মহাস্থান হাটের নয় পাইকরের কাছে বিক্রি করা হয়। একই সঙ্গে আলু বিক্রির কার্যক্রম মনিটরিং করে উপজেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এই মনিটরিংয়ে ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিমুজ্জামান। 

আলু ক্রয় করা পাইকারদের একজন আবুল কালাম। তিনি বলেন, বুধবারেও আলু বিক্রি করেছি ৩৮ টাকা দরে। পরে সাড়ে ২৮ টাকায় আলু কিনে আজ বৃহস্পতিবার বিক্রি করা হয় প্রতি কেজি ৩৩ টাকায়। আমরা যেমন দামে পাবো, তেমন বিক্রি করতে পারবো। 

কম দামে আলু বিক্রির খবর পেয়ে হাটে আনেক মানুষের ভিড় লেগে যায়।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, মজুতদাররা বেশি দামে আলু বিক্রির কথা স্বীকার করার পর আমরা সেগুলো জিম্মায় নিই। পরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়। তবে তারা দাবি করেছিলেন সাড়ে ২৮ টাকা কেজি দাম পেলে সুবিধা হতো। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল ভোক্তা যেন ৩৬ টাকায় এক কেজি আলু নিতে পারেন। সেই দামটা ঠিক রেখে আলু দেয়া হয়েছে। 

আলুর বাজার নিয়মিত মনিটরিং করার বিষয়ে ইউএনও বলেন, গতকালে আমরা হিমাগার মালিকদের সঙ্গে বসেছিলাম। তাদেরকেও বলা হয়েছে নিজেদের হিমাগারে মনিটরিং করতে। কিন্তু তারা দায় এড়ানোর চেষ্টা করে। পরে অবশ্য তারা সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। 


বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর ৫৩ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ ২৪ হাজার ১২০ টন আলু উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে দেশীয় পাকড়ি ও হাগড়াই জাতের আলু চাষ করেন কৃষকেরা। বাকি জমিতে বিদেশি ও উফশী কার্ডিনাল, গ্রানোলা, ডায়মন্ড জাতের চাষ হয়েছে। কৃষকেরা প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ২৫ মেট্রিক টন করে এই জাতের আলুতে উৎপাদন পেয়েছেন। বগুড়ার ৪২টি হিমাগারে মৌসুমের শুরুতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ ছিল। এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ আছে বগুড়ার হিমাগারগুলোতে।