
সংগৃহীত ছবি।
‘তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (আল-জিহাদী)’ নামে নতুন আরও একটি জঙ্গি সংগঠন প্রকাশ্যে এসেছে। দুই থেকে তিন মাস ধরে এ জঙ্গি সংগঠনটি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ২০২৪ সালে দেশে বড় হামলার পরিকল্পনা ছিল এর কর্মীদের।
গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানার পর নতুন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতা মো. জুয়েল মোল্লাসহসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। গ্রেপ্তার বাকি দুইজন হলেন মো. রাহুল হোসেন ও মো. গাজিউল ইসলাম।
রাজধানীর বারিধারায় এন্টি টেররিজম ইউনিট হেডকোয়ার্টার্স কনফারেন্স রুমে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এটিইউর ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. আলীম মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান পরিচালনা করে জুয়েলকে বাগেরহাট থেকে, জয়পুরহাট থেকে রাহুলকে ও রাজধানীর ভাসানটেক এলাকা থেকে গাজীউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘তাদের মধ্যে জুয়েল এই সংগঠনের প্রধান। বাকি দুইজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। সংগঠনটি ২ থেকে ৩ মাস ধরে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। তাদের পরিকল্পনা ছিল ২০২৪ সালে দেশে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গত কয়েক মাস ধরে গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে খবর পাচ্ছিলাম কিছু উগ্রবাদী মানুষ একত্রিত হচ্ছে। যারা কি না দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বানচাল করে উগ্রবাদী ব্যবস্থা কায়েমের জন্য তারা একত্রিত হচ্ছিল। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই আগে কোনো না কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিল। কিন্তু তারা নতুন লক্ষ্য নিয়ে একটি ব্যানারের নিচে সবাই নতুন করে একত্রিত হচ্ছিল।
‘তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও এবং পোস্টের মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ করে আসছিল। এই দলের প্রতিষ্ঠা ও প্রধান নেতা হলেন জুয়েল। আমরা প্রথমে জুয়েলকে বাগেরহাটের রামপাল থেকে গ্রেপ্তার করি। পরে তার দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাকি দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে গ্রেপ্তারের সময় নতুন সংগঠনের ৮টি ব্যানার জব্দ করা হয়।’
এটিইউর ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. আলীম মাহমুদ বলেন, ‘তারা প্রাথমিকভাবে সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি অর্থও সংগ্রহ করছিল। এই অর্থ দিয়ে অস্ত্র কেনা সহকারে বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এই অস্ত্র ও বোমা দিয়ে বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য জসীম উদ্দিন রহমানি যিনি বর্তমানে কারাগারে সাজা ভোগ করছেন তারা বক্তব্যে মূলত উদ্বুদ্ধ হয় জুয়েল। এর ফলে তিনি নতুন এ জঙ্গি সংগঠনটি সৃষ্টি করেন। জুয়েল নিজেও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। জসীম উদ্দিন রহমানিকেও কারাগার থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল জুয়েলের।’
সংগঠনটির অর্থের জোগানদাতা কারা এবং সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা কতো জানতে চাইলে এটিইউর ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. আলীম মাহমুদ বলেন, ‘সংগঠনটিতে এখন পর্যন্ত ৮০ থেকে ৯০ জন সদস্য আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের অর্থদাতা কে তা এখনও জানা যায়নি, তবে সংগঠনটির অর্থ সংগ্রহের কাজ করছিল রাহুল। এ ছাড়া রাহুল বোমা তৈরির দায়িত্বেও ছিল।’
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের হামলার পরিকল্পনা ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলার পরিকল্পনা ছিল কি না সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে ২০২৪ সালে বড় একটি জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল। সেই জন্য তারা অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহসহ বোমা বানানোর চেষ্টা করছিল, তবে তাদের হামলার টার্গেট কি তা এখনও জানা যায়নি। সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানার চেষ্টা করব।’
সংবাদ সম্মেলনে এটিইউর পুলিশ সুপার (অপারেশন্স) ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘নতুন জঙ্গি সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী জুয়েল মোল্লা নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। এই সময়ে কারাগারে বসেই নিজের একটি সংগঠন করার পরিকল্পনা করেন। মাত্র ক্লাস সেভেন পাস জুয়েল মোল্লা পেশায় বেকারি কর্মী ছিলেন। আর বাকি গ্রেপ্তার দুইজন হিজবুত তাওহীদের সদস্য ছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাহুল হোসেন পেশায় একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন। প্রযুক্তির বিষয়ে জ্ঞান থাকায় রাহুল বোমা তৈরির বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন হামলার জন্য। এ ছাড়া বোমা হামলার অর্থ জোগাতে নিজের জমি বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রাহুল। তিনি অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের কাজও করছিলেন।’