Joy Jugantor | online newspaper

একের পর এক ভিটে গিলছে ব্রহ্মপুত্র, পাউবো বলছে প্রকল্প নেই

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৪৩, ৩১ মে ২০২৩

একের পর এক ভিটে গিলছে ব্রহ্মপুত্র, পাউবো বলছে প্রকল্প নেই

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বসতি সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়রা

ব্রহ্মপুত্র নদ জুড়ে ঘোলা পানির প্রবাহ। বিগত কয়েকদিনের তুলনায় ক্ষিপ্রতাও বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে অববাহিকায় ভাঙনের তীব্রতা। কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বসতিসহ বিভিন্ন স্থাপনা এবং আবাদি জমি সব গিলে খাচ্ছে আগ্রাসী এই নদ। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, চরাঞ্চলে প্রতিরোধমূলক কাজের কোনও প্রকল্প নেই। ফলে এসব ভাঙন রোধে এই মুহূর্তে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।

চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের চর বড়ভিটা ও নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরা দিয়ারখাতা। এই দুই চরে উপজেলার চিলমারী, থানাহাট, নয়ারহাট ও রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বসতি। বছরজুড়ে চলমান ভাঙনে বসতিপূর্ণ চর দুটি ছোট হয়ে আসছে। নিরুপায় অনেক বাসিন্দা অন্য চরে বসতি স্থানান্তর করছেন। যাদের সেই সুযোগ-সামর্থ নেই তারা হাহাকার করছেন। স্থানীয়রা বলছেন, চলমান ভাঙনে গত একমাসে স্কুল, মসজিদসহ চর দুটির শতাধিক বসতভিটা ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার আরও দুই শতাধিক বসতভিটা ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। তবে ভাঙনরোধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসনসহ পাউবো। জনপ্রতিনিধিরাও নিষ্ক্রিয়। বাসিন্দারা বলছেন, নদ যখন বসতি থেকে কিছুটা দূরে ছিল তখন ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিলে হয়তো ভাঙন ঠেকানো যেত। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও নয়ারহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজার রহমান বলেন, ‘বজরা দিয়ার খাতা ও চরবড়ভিটায় ভাঙনে এক বছরে দুই শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। গত একমাসে স্কুল, মসজিদসহ আরও শতাধিক বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে। এই সময়ে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেললেও হয়তো ভাঙন কিছুটা কমানো যেত। না হলে এই চর রক্ষা করা যাবে না।’

চর বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজাউল বলেন, ‘গেলো বন্যায় আমাদের স্কুলটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এ বছর যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে আমরা খুব চিন্তিত। এবার স্কুলটি কোথায় নিয়ে যাবো, কী করবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। দ্রুত ভাঙন থামানো না গেলে স্কুলটি রক্ষা করা যাবে না।’

রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভাঙনে এই মৌসুমে শতাধিক বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে ওই চর থাকবে কিনা সন্দেহ আছে।’

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বসতি সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়রা

নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘ভাঙনে দুই শতাধিক পরিবার হুমকিতে রয়েছে। অনেকেই স্থানান্তরিত হয়ে কাজল ডাঙার চরে আশ্রয় নিয়েছেন। আমার ইউনিয়নের বর্তমানে উত্তর খাউরিয়া, খেরুয়ারচর ও দক্ষিণ খাউরিয়ার চর ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। সামনে পানি বাড়তে থাকলে এসব এলাকায় ভাঙন শুরু হবে। আর বজরা দিয়ার খাতায় তো ব্যাপক হারে ভাঙন চলছে। একটি প্রাথমিক স্কুল ছিল সেটিও ভেঙে গেছে। বর্তমানে যেখানে স্কুলটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ভাঙন না থামলে ওই জায়গাটিও নদীগর্ভে চলে যাবে। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও কোনও ভূমিকা নেই। তারা বন্যা হলে জিও ব্যাগ ফেলেন।’

ভাঙনে একই পরিস্থিতি জেলার সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন ও উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের। শত শত পরিবার ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ভিটেমাটি ও আবাদি জমি হারালেও চরাঞ্চল হওয়ায় প্রতিনিয়ত পাউবোর নজর থেকে উপেক্ষিত তারা। প্রকল্প না থাকার অজুহাতে কয়েক দশক ধরে গড়ে ওঠা বসতি ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা বিলীন হচ্ছে একের পর এক। পরিবর্তিত হচ্ছে জেলার মানচিত্র। প্রতিবছর ভাঙনের শিকার হয়ে জেলা ত্যাগ করছে শত শত পরিবার। জন্মস্থান ও আত্মীয়তার বন্ধন ছেড়ে বসতি গড়ছেন অন্য জেলায়।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘চর ভাঙবে এটাই স্বাভাবিক। এক চর ভেঙে আরেক চর গড়ে উঠে। চরাঞ্চলের ভাঙন প্রতিরোধে আমাদের কোনও প্রকল্প নেই। আর সমীক্ষা ছাড়া প্রতিরক্ষা কাজ সম্ভব নয়, সেটা টিকবে না। তারপরও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চাইলে আমরা কিছু জিও ব্যাগ দিতে পারি। তবে সেগুলো তাদের নিজ উদ্যোগে বালু ভরে ফেলতে হবে। এই মুহূর্তে আমাদের আর কিছু করার নেই।’