Joy Jugantor | online newspaper

‘চাকরির প্রলোভনে’ অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে আত্মগোপনে প্রতারক

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:২৬, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১৪:৩৪, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

‘চাকরির প্রলোভনে’ অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে আত্মগোপনে প্রতারক

অভিযুক্ত রেজাউল ও তার পরিবারের সদস্য

নওগাঁর আত্রাইয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার নামে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক পরিবার। প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর গা ঢাকা দিয়েছে চক্রটি। ভুক্তভোগীরা পাওনা টাকা চেয়ে চক্রটিকে হন্য হয়ে খুঁজছে। চাকরি নয়, এখন পাওনা টাকা ফেরত চান ভুক্তভোগীরা।

প্রতারকরা হলেন- জেলার রানীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের মেরিয়া গ্রামের রেজাউল ইসলাম (৫৩), তার ছেলে রিমন হোসেন (২৬) এবং রিমনের স্ত্রী জেরিন আক্তার।

জানা গেছে, রিমন হোসেন প্রথম অবস্থায় জেলার পত্নীতলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র সহকারি প্রকৌশলী পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভোক্তভোগীদের কাছে নিজেকে কর্মকর্তা পরিচয় দেন। পল্লী বিদ্যুতে চাকরি না হলে রিমন হোসেন এর স্ত্রী জেরিন আক্তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি দিবে বলে ভুক্তভোগীদের আশ^স্থ করে। চাকরি দেওয়ার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলে ভুক্তভোগীরা ওই প্রতারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রতারকরা কৌশলে ভুক্তভোগীদের কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়োগ পরীক্ষা হবে মর্মে ভুয়া প্রবেশপত্র তৈরি করে দেন। প্রতারক চক্রের প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর গা ঢাকা দিয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- রিমন হোসেনের শাশুড়ি পিয়ারা খাতুন। তিনি পত্নীতলা উপজেলার নির্মইল ইউনিয়নের গাঞ্জাকুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার যোগসূত্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। রেজাউল ইসলামের ছোট ভাই জিয়াউর রহমান একজন সৌদি প্রবাসী। জিয়াউর রহমানের অজান্তে ভুয়া ভাই বানিয়ে তার সঙ্গে ফোনে কথা বলে প্রবাসে লোক পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাতে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে দিতেন প্রতারক রেজাউল ইসলাম।

স্থানীয়তের সাথে কথা বলে জানা যায়- চাকরির প্রলোভন দিয়ে প্রতারকরা দীর্ঘদিন থেকে এলাকার আসপাশে এবং নিজ এলাকায় প্রায় ১৮ জনের কাছে থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কাউকে চাকরি দিতে না পারায় প্রতারকরা এখন এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে আছে। 

আত্রাই উপজেলার সন্ন্যাস বাড়ী গ্রামের ভুক্তভোগী যুবক রেজাউল ইসলাম বলেন- পাশ্ববর্তী উপজেলা মেরিয়া গ্রামের রিমন হোসেন নিজেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র কর্মকর্তা পরিচয় দেন। আমাকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে সহকারি স্টোর কিপার পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। পল্লী বিদ্যুতে চাকরি না হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়েও চাকরি দেওয়ার লোভ দেখানো হয়। চাকরি পেতে ৫ লাখ টাকা চুক্তি হয়। তাদের প্রলোভনে পরে দেড় লাখ টাকায় তিনটা গরু বিক্রি করি। চাকরি দেওয়ার শর্তে ২০২২ সালের জুলাইয়ে ৪ তারিখে রিমন আমাকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে দিলে দেড় লাখ টাকা তাকে দেওয়া হয়।

তিনি আরো বলেন- চাকরি দেওয়ার নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলে তারা কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারে সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া প্রবেশপত্র তৈরি করে আমার হাতে ধরিয়ে দেয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি প্রবেশপত্র টি ভুয়া এবং সেখানে কোন নিয়োগ পরীক্ষা হবে না। ঘটনার পর থেকে প্রতারক চক্রটি আত্মগোপন চলে যায়।

রানীনগর উপজেলার চরকানাই গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী মাসুদ রানা বলেন, আমার গ্রাম থেকে রিমন এর গ্রাম প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। আমরা গরীব মানুষ। রিমন নিজেকে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আমাকে সহকারি এনফোর্সমেন্ট কো-অর্ডিনেটর পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেয়। মোট ৯ লাখ টাকার চুক্তি হয়। এরমধ্যে গত ছয়মাস আগে সুদের ওপর ২লাখ টাকা নিয়ে রিমন ও বাবাকে দিয়। তাদের সঙে যোগাযোগ করা হলে বিভিন্ন ভাবে তালবাহানা শুরু করে। এক সময় টাকা ফেরতও চাই। এখন তাদের মুঠোফোন বন্ধ থাকে। তাদের বাড়িতেও কেউ নাই। সুদের টাকা পরিশোধ করতে এখন ঢাকায় চাকরি খুঁজছি।

এ ব্যাপারে প্রতারক মেরিয়া গ্রামের রেজাউল ইসলাম ও তার ছেলে রিমন হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। বক্তব্য নিতে তাদের বাড়িতে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও না থাকায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে মিরাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জিয়াউর রহমান বলেন, শুনেছি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চাকরি দেওয়ার নাম করে রেজাউল ইসলাম ও তার ছেলে রিমন হোসেন বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের বিষয়ে কয়েকটা সালিশও করা হয়েছে। তারা টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু টাকা দেয় না।