Joy Jugantor | online newspaper

গাছ ভরা মুকুল, তবুও দুশ্চিন্তায় চাষি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:১৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

গাছ ভরা মুকুল, তবুও দুশ্চিন্তায় চাষি

আমের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে তীব্র শীতের মাঝেই আম গাছগুলোতে মুকুল আসতে শুরু করেছে।  আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্তত মাস খানেক আগেই মুকুলের দেখা মিলেছে বলে মনে করছেন জেলার চাষিরা। তারা গত বছরের তুলনায় এ বছর আমের ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন। তবে, পরিচর্যা খরচ বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

জেলার বিভিন্ন বাগানঘুরে আম চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গেলো বছরে প্রলম্বিত শীতের কারণে ছোট গাছের তুলনায় পুরাতন আম বাগানের বড়-বড় গাছগুলোতে মুকুল কম এসেছিলো। এই বছরে সব ধরনের আম গাছে মুকুল আসছে। তবে কীটনাশক, সেচের খরচ আর শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে কৃষকদের।

এই বছর শীতের প্রভাব আর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চলতি বছরের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গাছগুলোতে মুকুল আসতে শুরু করেছে। গেলো বছরে গাছগুলোতে আমের মুকুল কম হলেও এই বছর বাড়বে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।

চাঁপাইনবাগঞ্জ সদর উপজেলার সেরাজুল ইসলাম নামের আম চাষি বলেন, ‘ বাগানেরে গাছগুলোতে মুকুল আসতে শুরু করেছে। যেসব গাছে এখনও আমের মুকুল আসা শুরু হয়নি, অল্প কয়েকদিনের মধ্যে তাতে মুকুল আসা শুরু হবে। গেলো বছর আমের মুকুল কম হওয়ায় এই বছরে আমের মুকুল বেড়ে পর্যাপ্ত আমের ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

শিবগঞ্জ উপজেলার মুনিরুল ইসলাম নামের এক বাগান মালিক বলেন, ‘৫০ কেজির একটি সারের বস্তার দাম প্রায় ৮০-১০০ টাকা, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ঘণ্টায় বাগানে সেচ খরচ ৫০-৭০ টাকা এবং নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রভাবে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ জনপ্রতি একশ-দেড়শ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে। যার কারণে বাগান পরিচর্যার খরচ বাড়ছে। গত বছর আমের ফলন কম হলেও, দাম দ্বিগুণ হওয়ায় নায্য দামে আম চাষিরা স্বস্তি পেয়েছিলো। কিন্তু এই বছর এর ব্যতিক্রম হলে বাগান মালিকরা লোকসানের মুখ দেখবেন।’

এ উপজেলার রেজাউল করিম নামের আরেক বাগান মালিক বলেন, ‘সার, কীটনাশকের দাম বেড়েছে। বাগানের পরিচর্যার জন্য বালাইনাশক প্রয়োগ করার একটি মেশিনের ভাড়া আগে ছিলো ১৫০০-১৭০০ টাকা। কিন্তু এখন ২৩০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে আমাদের। প্রতিঘণ্টায় শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচের মূল্য ছিলো ১০০-১২০ টাকা। কিন্তু ডিজেলের দাম বাড়ায় প্রতি ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।’

শহিদুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, ‘বাগান থাকলেই গাছের পরিচর্যা করতে হবে। গাছের যত্ন না নিলে ভালো ফলনও আশা করা যায় না। এদিকে ফের সার, কীটনাশকের দাম বাড়ছে। পরিচর্যা খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে চিন্তা হচ্ছে। খরচ করে যদি আমের নায্য দাম না পাই তাহলে খরচ করায় বৃথা হয়ে যাবে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, ‘সার-কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি সব কিছুরই মূল্য বাড়ছে। যার কারণে চাষিদের পরিচর্যা খরচ বেড়েছে। চাষিদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করলে কিছুটা হলেও তারা স্বস্তি পাবে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘এই বছর জেলার ৫ উপজেলায় এবার ৩৭ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হচ্ছে। এসব জমিতে ২৮ লাখ ১৯ হাজার ১শটি বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে। গাছে মুকুল আসার সময়কাল ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত ৬০ ভাগ গাছে মুকুল এসেছে। আশা করছি, শতভাগ গাছ মুকুলিত হবে এবং এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনও ভালো হবে।’

কৃষিপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে আম চাষ করলে বালাইনাশকের ব্যবহার কিছুটা কমানো যাবে। এতে করে কৃষকদের আমের পরিচর্যা খরচ কিছুটা সাশ্রয় হবে।’