Joy Jugantor | online newspaper

পঞ্চগড়ে মেয়ের ধর্ষণের বিচার না পেয়ে বাবার আত্মহত্যার অভিযোগ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

পঞ্চগড়ে মেয়ের ধর্ষণের বিচার না পেয়ে বাবার আত্মহত্যার অভিযোগ

পঞ্চগড়ে মেয়ের ধর্ষণের বিচার না পেয়ে বাবার আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে।

পঞ্চগড়ে কলেজপড়ুয়া মেয়ের ধর্ষণের বিচার না পেয়ে বাবার আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। মামলায় জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মণ নামে স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। যদিও চেয়ারম্যানের দাবি, তিনি অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছেন, কিন্তু অভিযোগকারীদেরই সাড়া মেলেনি।

শুক্রবার রাতে পঞ্চগড় সদর ও আটোয়ারী থানায় মামলা দুটি করেন আত্মহননকারী ব্যক্তির ছেলে।

জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মণ পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তার সঙ্গে মামলায় আসামি করা হয়েছে ওই ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি এলাকার পলাশ চন্দ্র বর্মণ (২৫), তার বাবা শ্যামল চন্দ্র বর্মণ (৪৬), একই এলাকার মৃত ধনবর বর্মণের ছেলে ভবেন বর্মণ (৫০) এবং অলকান্ত বর্মণের ছেলে কাজল বর্মণকে (২৩)।

মামলার বাদী অভিযোগ করেন, তার কলেজপড়ুয়া বোনকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেন আসামি পলাশ চন্দ্র বর্মণ। এ ঘটনার বিচার দাবি করলে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার পরামর্শ দিয়ে সুরাহার আশ্বাস দেন ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মণ। কিন্তু ঘটনার ১৫ দিন পার হলেও কোনো সুরাহা করতে পারেননি তিনি। বারবার চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েও কোনো বিচার না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তার বাবা।

গত বুধবার রাতে বাড়ির অদূরে আবাদি জমির পাশের একটি পাকুর গাছের ডালের সঙ্গে ঝুলে গলায় চাদর পেচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, তার বোনকে গত ১৭ জানুয়ারি রাতে অভিযুক্ত পলাশ জোরপূর্বক বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এতে সহযোগিতা করেন অপর আসামি কাজল। পরে ভুক্তভোগীর চিৎকারে পরিবারের লোকজন এগিয়ে গেলে পলাশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পলাশ সেখান থেকে পালিয়ে যান। মারাত্মকভাবে আহত হন তার বোন। চিকিৎসাধীন ছিলেন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালেও। বিষয়টি তৎক্ষণাৎ ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি সুরাহার আশ্বাস দেন। পরদিন চেয়ারম্যানের কথামতো আসামি কাজলের বাড়িতে বসা হয়। কিন্তু সেখানে সুরাহার পরিবর্তে মামলার বাদী এবং তার বাবাকে আসামিরা উল্টো হুমকি-ধামকি দেন। পরে চেয়ারম্যান আরও তিন-চারদিন সময় চান মীমাংসার জন্য। কিন্তু তিনি বিষয়টির গুরুত্ব না দিয়ে কালক্ষেপণ করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন।

মামলার বাদী বলেন, ‘মৌখিক অভিযোগে চেয়ারম্যানের দায়িত্বহীনতা দেখে ২৪ জানুয়ারি লিখিত অভিযোগ দেই। পরে চেয়ারম্যান আমাদের নোটিশের মাধ্যমে জানান ১ ফেব্রুয়ারি ইউপি কার্যালয়ে উপস্থিত হতে। কিন্তু সেদিন খবর পাই আসামিরা উপস্থিত হবে না। চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও তালবাহানা শুরু করেন। বিচার না পাবার আশঙ্কায় আমার বাবা ভেঙে পড়েন। এদিকে পরিষদে অভিযোগ দেয়ায় পলাশের বাবা শ্যামল এবং আসামি ভবেন আমার বাবাকে তাচ্ছিল্য করেন এবং বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দেন।’

বাদী বলেন, ‘আমার বাবা বাড়ি এসেই কান্নাকাটি শুরু করেন। পরে রাতে সবার অগোচরে আত্মহত্যা করেন। একাধিকবার বলার পরও চেয়ারম্যান ন্যায়বিচার করেননি বলেই আমার বাবা বিচার না পাবার আশঙ্কায় আত্মহত্যা করেছেন।’

মামলার বাদী জানান, আটোয়ারী থানা এলাকা তার বাবার আত্মহত্যার ঘটনাস্থল হওয়ায় এই থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন। আর সদর থানায় করেছেন ধর্ষণের মামলা।

জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করেন ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মণ। তিনি বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়ে উভয়পক্ষকে নোটিশ করেছি। গত ১ ফেব্রুয়ারি বসার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগকারীরাই আসেননি। না এলে কীভাবে সুরাহা করবো? আর আত্মহত্যার খবর পেয়ে আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তবে কেন আত্মহত্যা করেছে তা জানি না।’

পৃথক দুই মামলার বিষয় নিশ্চিত করেছেন আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা এবং সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া।